মধ্যপ্রাচ্য বলতেই সামনে ভেসে ওঠে তেল সম্পদের অট্টালিকা। গোটা দুনিয়ার তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে মধ্যপ্রাচ্য। তেল থেকেই তাদের সরকারি আয়-ব্যয় নির্বাহ হয়। উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থা বা জিসিসি ভুক্ত দেশগুলোর অর্থনীতির চাকা ঘোরে তেল সম্পদের শক্তিতে।
কিন্তু সামনের বছরগুলো তাদের জন্য হয়ে উঠছে কঠিন। বদলে যাচ্ছে পরিস্থিতি। ফুরিয়ে আসছে তেল সম্পদ। ফলে বাহরাইন, ওমান, কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে টিকে থাকার জন্য এখন বিকল্প অর্থনীতির দিকে ঝুঁকতে হচ্ছে।
তেল নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে ইতিমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে সৌদি আরব। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান তার দেশের অর্থনীতিকে তথ্য-প্রযুক্তি ও পর্যটন নির্ভর করতে রাষ্ট্রীয় সংস্কার করছেন। তবে, তার পরিকল্পনা কতটা বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে বিশ্লেষকদের সন্দেহ রয়েছে।
গাল্ফ দেশগুলোর তেল সম্পদের গতিপথ নিয়ে একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে ইসরাইলের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম হারেৎজ। বিশ্লেষণটি লিখেছেন অর্থনীতিবিদ ও কলামনিস্ট ডেভিড রোজেনবার্গ।
ডেভিড রোজেনবার্গ বলেছেন, গাল্ফভুক্ত দেশগুলো বিশ্বব্যাপী তাদের প্রভাব বিস্তার ঘটিয়েছে ১৯৭০ এর দশক থেকে। তেল সম্পদ ব্যবহার করে তারা যেমন সম্পদের বিস্তার ঘটিয়েছে তেমনি জীবনযাত্রাকে নিয়ে গেছে অন্য উচ্চতায়। কিন্তু তারা বিভিন্ন সমস্যার সমাধান না করে জিইয়ে রেখেছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলেছে, গাল্ফভুক্ত বা এটিএম দেশগুলোর অর্থ দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। এসব দেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণ তেলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। যদি তারা তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে না পারে বা বিকল্প অর্থনীতির পথ খুঁজে বের করতে না পারে তাহলে আগামী ১৫ বছরের মধ্যে তাদের জমা হওয়া দুই লাখ কোটি ডলার শেষ হয়ে যাবে।
বর্তমানে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ১০০ ডলার। দেশগুলোর সরকারি ব্যয় মেটাতে যে পরিমাণ অর্থ দরকার তাতে যদি তারা বর্তমান হারে তেল উৎপাদন করতে থাকে তাহলে ২০৫১ সালের মধ্যে তাদের অর্থ শেষ হয়ে যাবে। আর যদি তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ২০ ডলার কমে যায় তাহলে ২০২৭ সালের মধ্যে তা শেষ হয়ে যাবে।
দুনিয়া এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। জ্বালানি হিসেবে তেলের বিকল্পও তৈরি হচ্ছে। জীভাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিয়ে প্রযুক্তি খাত অনেক দূর এগিয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমেছে। সামনের দিনে সেটি আরও কমতে থাকবে। ফলে আরবরা তেল নির্ভরশীল থাকলে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে ঝুঁকিতে পড়বে।
ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে না পারে বা বিকল্প অর্থনীতির পথ খুঁজে বের করতে না পারে তাহলে আগামী ১৫ বছরের মধ্যে তাদের জমা হওয়া দুই লাখ কোটি ডলার শেষ হয়ে যাবে।
অঢেল সম্পদের কারণে আরবরা যে মানের জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে তা থেকে তাদের বেরিয়ে আসাও সহজ নয়। কিন্তু সরকার তার ব্যয় মেটাতে নাগরিকদের ওপর কর আরোপ শুরু করলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে পারে। দেখা দিতে পারে নাগরিক অস্থিরতা। বর্তমানে বড় বড় সরকারি প্রতিষ্ঠানে নাগরিকদের চাকরির সুযোগ থাকলেও তা ভবিষ্যতে না থাকার ঝুঁকি রয়েছে। এতে সঙ্কট আরও বাড়তে পারে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন