অবশেষে খুলনা মহানগরীর মিস্ত্রীপাড়ায় ঠিকাদার শেখ ইউসুফ আলীর গুলি বর্ষণের রহস্যের জট খুলতে শুরু করেছে।শুক্রবার (২৮ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঠিকাদার শেখ ইউসুফ আলীর বাড়ি গিয়েছিল তার মেয়ের প্রেমিক ও প্রেমিকের বন্ধুরা।
তাদের পরিচয় পেয়ে উত্তপ্ত মেজাজে হুমকি দেন ঠিকাদার। পরিস্থিতি খারাপ বুঝে বাড়ির লোকেরা তাদের বের হয়ে যেতে বলে। তারা বের হতে না হতেই পিস্তল হাতে বেরিয়ে পড়েন ঠিকাদার। ক্ষিপ্ত হয়ে ছোড়েন তাদের ওপর গুলি। গুলির শব্দ শুনে পাশের বাড়ির স্কুল পড়ুয়া লামিয়া কৌতুহল বশত ঠিকাদারের বাড়ির সামনে আসেন। এমনি সময় লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে একটি গুলি বিদ্ধ হয় শিশু লামিয়ার বাম পায়ে।
এমনি ঘটনা ঘটেছিল শুক্রবার মিস্ত্রীপাড়ার ঠিকাদার ইউসুফ আলী সরদারের বাড়িতে। তবে নিজেকে বাঁচাতে ও ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নিতে ঠিকাদার মেয়ের প্রেমিক ও প্রেমিকের বন্ধুদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা করেছেন।
ঠিকাদার মামলার এজহারে লিখেছেন, মিস্ত্রিপাড়া আরাফাত জামে মসজিদের পাশের ঠিকাদার ইউসুফ আলী বাবু খান রোডের সংস্কারের কাজ পেয়েছেন। কিছু দুষ্কৃতকারী এ কাজটির জন্য চাপ দিচ্ছিলো। দুষ্কৃতকারীরা কাজটা কিনতে চায়। তারা চাঁদা নিতে গেলে তিনি গুলি ছোড়েন।
অভিযুক্ত ঠিকাদার ইউসুফ আলী জানান, ঠিকাদারি একটি কাজ নিয়ে চার যুবক তার কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করার এক পর্যায়ে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিলে তিনি পিস্তল নিয়ে তাদের ধাওয়া করেন। এ সময় পিস্তলে তিন রাউন্ড গুলি ছিল। তিনি দুই রাউন্ড গুলি করেন। ওই চার যুবকও দৌঁড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলি করেছিলো। তাদের গুলি লামিয়ার পায়ে বিদ্ধ হয়েছে।তবে ঠিকাদারের দায়ের করা মামলা ও দাবি করা সব তথ্য মিথ্যা বলে অভিযোগ করেছেন ওই চার যুবকের স্বজনরা।
তারা জানিয়েছেন, ঠিকাদার ইউসুফ আলীর মেয়ে রুকাইয়া বানরগাতির সোহরাওয়ার্দী কলেজে পড়েন। রুকাইয়ার সঙ্গে শাহিদ নামের একটি ছেলে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ঠিকাদার তার পছন্দের ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। মেয়ের মোবাইল ফোনও কেড়ে নিয়েছিলেন। কয়েকদিন মোবাইল বন্ধ পেয়ে প্রেমিক শাহেদ তার তিন বন্ধু মেহেদি, ইসমাইল ও সাইফুলকে নিয়ে যান ইউসুফ আলীর বাড়িতে। প্রেমিকা রুকাইয়ার বাবা ঠিকাদার ইউসুফ আলীকে তারা র্দীঘদিনের প্রেমের সম্পর্কের কথা খুলে বলেন। এমন সময় ইউসুফ আলী রেগে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথমে গালিজালাজ শুরু করেন। তখন সেখানে উপস্থিত মেয়ের মামা তাদের বের হয়ে যেতে পরামর্শ দেন। তারা বের হয়ে দরজা পর্যন্ত আসার পরে মেয়ের বাবা ইউসুফ আলী পিস্তল নিয়ে বের হয়ে গুলিও ছোড়েন।
সাইফুলের মামা সোহেল বলেন, আমার ভাগিনা ও তার বন্ধুদের ওপর সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে গুলি ছুড়েছেন ঠিকাদার ইউসুফ আলী। আবার তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলাও দায়ের করেছেন। আমরা আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি চালাচ্ছি।
এদিকে ঠিকাদার ইউসুফ আলীর বাড়ির ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ওই চার যুবক প্রথমে দরজা দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বের হচ্ছিলেন। তখনি পিস্তল নিয়ে ছুটে আসেন ঠিকাদার ইউসুফ। ঠিকাদারকে মেয়ের মামা গুলি না করা জন্য বাধা দেন। তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে তিনি গুলি ছোড়েন এবং সিঁড়ি দিয়ে তাদের পিছু পিছু তাড়া করতে থাকেন।
ঠিকাদারের লক্ষ্যভ্রষ্ট গুলিতে আহত লামিয়া খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। রোববার রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অস্ত্রোপাচার করা হয়নি।
লামিয়ার প্রতিবেশি মামা তরিকুল ইসলাম জানান, লামিয়া ব্যথার যন্ত্রণায় ছটফট করছে। এখনও তার পায়ের গুলি বের করা হয়নি। আমরা খুবই চিন্তায় রয়েছি।
চিকিৎসকরা বলছেন, লামিয়ার থ্রি-ডি সিটি স্ক্যান এবং হাই আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করা হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত হবে খুলনায় অপারেশন হবে কি- না? গুলির অবস্থান নির্ণয় করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত।
খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল আলম বিডিটাইপকে বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা ঘটনাটি আরও তদন্ত করবো। তাহলে আসল ঘটনা জানা যাবে’।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন