হিন্দু ছাত্রীকে অপহরণের পর শিক্ষকের চতুর্থ বিয়ে

হিন্দু ছাত্রীকে অপহরণের  পর শিক্ষকের চতুর্থ বিয়ে

হিন্দু সম্প্রদায়ের এক ছাত্রীকে অপহরণের পর ধর্মান্তিরত করে বিয়ে করার অভিযোগে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার নুরনগর আশালতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীম আহমেদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সাঙ্গে তাকে কেন স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হবে না তা জানতে চেয়ে সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। আজ শনিবার সকাল ১১টায় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির জরুরী সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ওই ছাত্রীর বাবা জানান, ২০১৯ সালে তার মেয়ে নূরনগর আশালতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পাশ করে। ওই বিদালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীম আহমেদ (৪৮) তাকে বিভিন্ন সময়ে বিজ্ঞানের ব্যবহারিক খাতার কাজে সহযোগিতা করতেন। পরে তার মেয়ে কার্টুনিয়া রাজবাড়ি ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়। তার মেয়ে পার্শ্ববর্তী এক গ্রামের একজন শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে যাওয়া সময় শিক্ষক শামীম তাকে উত্ত্যক্ত উত্যক্ত করতেন। গত ২ এপ্রিল ভোরে  প্রাইভেট পড়ে কলেজে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বের হয়ে কলেজছাত্রী। দুপুর ২টার দিকে বাড়ি না ফিরলে তাকে খুঁজতে থাকে পরিবারের সদস্যরা। খুঁজে না পেয়ে পরদিন তিনি শ্যামনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। 

গত বুধবার (৭ এপ্রিল) ফেইসবুকে তার মেয়ে ও প্রধান শিক্ষক শামীম আহমেদ খুলনার এক নোটারী পাবলিকের কার্যালয়ে বসে ধর্মান্তরিত হওয়া ও বিয়ে সংক্রান্ত এক নন জুডিশিয়াল স্টাম্পে স্বাক্ষর করছেন এমন ছবি দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা তাকে জানান। একপর্যায়ে ওই রাতেই তিনি শামীম আহমেদ এর বিরুদ্ধে থানায় মেয়েকে অপহরণ ও ধর্মান্তরিত করার অভিযোগে একটি এজাহার দাখিল করেন।

আশালতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক পলাশ দেবনাথ, আশরাফ হোসেন ও লিটন সরদার জানান, এ প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন প্রধান শিক্ষকের ভাই নুরনগর ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য বখতিয়ার আহমেদ। বড় ভাই সভাপতি হওয়ায় শামীম আহম্মেদ কয়েক বছর ধরে ছাত্রীদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করে জনসাধারণের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। একইভাবে এক নারীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়লে নূরনগর নবীন সংঘের মধ্যে তাকে আটকে রেখে গণধোলাই দেওয়া হয়। পরে মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পান তিনি। হজ্ব করার পরও ওই প্রধান শিক্ষকের চরিত্র পরিবর্তন না হওয়ায় তিনটি বিয়ে করার পরও সম্প্রতি তার বিদালয়ের এক সময়কার ছাত্রী হিন্দু নাবালিকাকে ফুসলিয়ে নিয়ে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করেছেন। 

এদিকে হিন্দু ছাত্রীকে ধর্মান্তরিত করে বিয়ের বিষয়টি জানাজানি হলে শনিবার সকাল ১১টায় আশালতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাকক্ষে এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতি বখতিয়ার আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন সহকারী প্রধানশিক্ষক আব্দুস সবুর, পরিচালনা কমিটির সদস্য ও ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান হবি, ইউপি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, সদস্য আব্দুল কাদের, সদস্য শাকির আহম্মেদ, বিদ্যোৎসাহী সদস্য জিএম মঈনুদ্দিন লাভলু, অভিভাবক সদস্য ডিএম রবিউল ইসলাম মুকুল, শিক্ষক সুশান্ত ঘোষসহ কয়েকজন অভিভাবক। সভায় প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্তসহ তাকে কেন স্থানীয়ভাবে বরখাস্ত করা হবে না তা জানতে চেয়ে নোটিশ প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে ওই শিক্ষককে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।

এদিকে অবিলম্বে প্রধান শিক্ষক শামীম আহমেদকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও ভিকটিমকে উদ্ধারের দাবি জানিয়ে শনিবার বিকেল ৫টায় নূরনগর বাজারে শিক্ষক সমাজের ব্যানারে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য জিএম মঈনুদ্দিন লাভলু, মুক্তিযোদ্ধা এমএম আব্দুল মজিদ, নূরনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম সোহেল রানা, নূরনগর নবীন সংঘের আহ্বায়ক সাইফুল্লাহ মামুন, শিক্ষক জিয়াউর রহমান, অভিভাবক পলাশ দেবনাথ প্রমুখ।

এ ব্যাপারে আশালতা মাধমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীম আহমেদ এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তার এক আত্মীয় আবুল হোসেন বলেন, 'এর আগে সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষক হিন্দু মেয়ে বিয়ে করেছিলো। তার বেলায় তো সমস্যা হয়নি। কোনো হিন্দু মেয়ে বিয়ে করে যদি সিমিত পরিসরে মুসলমান হয় তাহলে দোষ কোথায়?'বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বখতিয়ার আহম্মেদ বলেন, শামীমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে কারণ দর্শাণোর নোটিশের জবাব দেওয়ার পর প্রয়োজনে ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্তা নেওয়া হবে।শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হুদা জানান, এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা বাদি হয়ে  শামীম আহমেদের নাম উল্লেখ করে শুক্রবার রাতে থানায় একটি মামলা (১৬) দায়ের করেছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক দীপ্তেশ রায়কে আসামি গ্রেপ্তার ও ভিকটিম উদ্ধারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password