সুইস তরুণী আনা নিকাব পরিধানের স্বাধীনতা চায়

সুইস তরুণী আনা নিকাব পরিধানের স্বাধীনতা চায়

সুইজারল্যান্ডের একজন তরুণী ইসলামগ্রহণ করে প্রথম দিকে হিজাব পরিধান শুরু করেন। কিন্তু ইসলামী বিধান হিসেবে এতে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না। তাই বোরকা নিষিদ্ধে গণভোটের কয়েক দিন আগেই তিনি বোরকা পরিধান শুরু করেন। সুইজারল্যান্ডের জাতীয় সংবাদ মাধ্যম লেটেম্পস-এ তাঁকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে লেখা হয়—২০২০ সালে আনা নিকাব পরিধানের ইচ্ছা করেন। কেননা আগে হিজাব পরলেও তা যথেষ্ট মনে হতো না। নিকাব পরার সিদ্ধান্তের আগে দীর্ঘ ছয় মাস বহু চিন্তা-ভাবনা করেন তিনি। আনা বলেন, এ সিদ্ধান্ত আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি জানতাম, হিজাবের মতো এর জন্যও আমাকে বহু সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। তাই আমি তাড়াহুড়া করতে চাইনি।

অতঃপর আনা ভিডিওযোগে সুইজারল্যান্ডে বসবাসরত বহু মুসলিম নারীর সাক্ষাৎকার নেন। তাঁদের মতে, ৭ মার্চ হিজাব নিষিদ্ধের গণভোটের পর তারা খুবই কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে।

৩২ বছর বয়সী আনা সুইজারল্যান্ডের লুসার্নে বেড়ে উঠেছেন। তাঁর বাবা সুইস নাগরিক ও মা জার্মানি। উভয়ে প্রোটেস্টান খিস্টান ধর্মের অনুসারী। তার পরও হিজাব পরিধান করায় তাঁকে বৈষম্যমূলক কথা শুনতে হয়েছে। বিভিন্ন সময় আশপাশের অনেকে বলেন, ‘তোমার দেশে ফিরে যাও’। আনা বলেন, ‘আমি এই দেশের একজন নাগরিক ও এই সমাজের একজন সদস্য। আমি মনে করি, সুইজারল্যান্ড একটি বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও ধর্মের দেশ। আমার মতো নারীদের জন্য এখানে পৃথক কক্ষও আছে।’

আনা বলেন, ‘নিকাব পরায় আমার দায়িত্ব পালনে কোনো পরিবর্তন আসেনি। আগের মতোই ঘরের ও বাইরের সব কিছু করছিলাম। তবু নিকাব পরিধান করায় আমার প্রতি সমাজের অন্যদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে!’

আনা জানান, অনেকে নিকাবকে ধর্মীয় কট্টরপন্থার প্রকাশ বলে মনে করে। তা অনেকের কাছে অপরিচিত বলেও মনে হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো একজন নারীর পোশাকের অধিকারকে নিষিদ্ধ করার কতটুকু সুচিন্তিত? আনা মনে করেন, ‘নিকাব বা বোরকা নিষিদ্ধের কোনো যৌক্তিতা নেই। এই কাপড়ের নিচে একজন স্বাভাবিক মানুষের বসবাস।’

আনা জানান, ‘বোরকা সম্পর্কে সমাজের অনেকের মনে প্রচলিত ভুল বিশ্বাস আছে। নিকাবের সঙ্গে অনেকে উগ্রবাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে। অথচ আমার পোশাক আমার রাজনৈতিক পরিচয় বহন করে না। আমার কথা হলো, আমার ধর্ম আমি পালন করব। কিন্তু কাউকে কোনো কিছু পরায় বাধা দেওয়া বা কোনো কাজে বাধ্য করা সুইস মূল্যবোধের মধ্যে পড়ে না।’

আনা বলেন, আমি নিজ উদ্যোগেই ইসলাম গ্রহণ করেছি। ২০১৭ সাল থেকে আমি বিশ্বের প্রচলিত কয়েকটি ধর্ম নিয়ে দীর্ঘ পড়াশোনা করি। অবশেষে ইসলামের প্রতি আমার অনুরাগ তৈরি হয়। কারণ জীবন ও মৃত্যু সম্পর্কে অনেক প্রশ্নের জবাব আমি ইসলামে পেয়েছি।

আনা পবিত্র কোরআন ও তাফসির গ্রন্থ পাঠ করে বুঝতে পারেন, নিকাব নারীর সর্বোত্তম পোশাক। আল্লাহ আমাদের জন্য তা নির্ধারণ করেছেন। আনা বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি নিকাব পরিধান শুরু করেছি। এ ক্ষেত্রে আমি স্বাধীন। নারীদের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ,গভীর ভাবনা ও অনেকের আলোচনা শুনে এ নিকাব পরা শুরু করি।’

আনা বলেন, ‘আমি নিকাব পরিধান করে নিজেকে অনেক নিরাপদ ভাবি। এর মধ্যে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করি এবং অন্তরে প্রশান্তি অনুভব করি। আমি নিজেকে পুরুষদের থেকে পৃথক রাখতে চাই। হিজাব আমার দেহের আংশিক আবৃত করত, যা পুরুষের চোখে পড়ে। আর নিকাব আমার দেহকে আবৃত করে। ফলে নিজেকে আল্লাহর একনিষ্ঠ মনে করি।’

সূত্র :  আলজাজিরা।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password