শেখ হাসিনার উপহার গৃহনির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ

শেখ হাসিনার উপহার গৃহনির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ‘গৃহনির্মাণ’ কাজে অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে। কিন্তু প্রকল্পের দায়িত্ব পাওয়া ব্যক্তি স্থানীয় জনপ্রতিনিধির আস্থাভাজন ও প্রভাবশালী হওয়ায়, নিম্নমানের কাজ হওয়ার পরও কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না। ফলে গৃহহীনদের কাছে সরকারের এসব ঘর হস্তান্তরের আগেই ঘরগুলো থেকে বালু সিমেন্টের পলেস্তরা খসে পড়ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় গৃহহীনদের জন্য নবীনগর উপজেলার সাতটি এলাকায় মোট ৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট ৪৮৫টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিটি ঘরের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে এসব কাজের তদারকি করছে উপজেলা প্রশাসন (বাস্তবায়ন কমিটি)।

কিন্তু অভিযোগ ওঠেছে, উপজেলার সাতটি এলাকায় তৈরি হওয়া এসব প্রকল্পের মধ্যে শ্যামগ্রাম ইউনিয়নের শাহবাজপুর গ্রামের হিন্দু পাড়ায় ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০টি ঘর নির্মাণের দায়িত্ব প্রশাসনের দেখভালের বদলে সাবেক যুবলীগ নেতা, নবীনগর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, সমকালের উপজেলা প্রতিনিধি ও শিল্পকলা একাডেমির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলম লিটনকে দেওয়া হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সাংবাদিক লিটন প্রভাবশালী হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক থাকায় ২০টি ঘর নির্মাণে অনিয়মের পরও, প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। 

এদিকে, এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে সরজমিনে শাহবাজপুরের হিন্দু পাড়ায় গিয়ে ওই ২০টি ঘর নির্মাণে এলাকাবাসীর অভিযোগের সত্যতাও খুঁজে পাওয়া যায়। সরজমিনে দেখা যায়, ওইসব গৃহ নির্মাণে খুবই নিম্নমানের ইট, বালু ব্যবহারের পাশাপাশি সিমেন্ট ও অন্যান্য সামগ্রী যথাযথভাবে ব্যবহার করা হয়নি। ফলে ঘরগুলোর দেয়ালে হাত দিলেই, বালু সিমেন্টের পলেস্তরা খসে পড়তে দেখা যায়।রাজমিস্ত্রি নুরু মিয়া, বাদল মিয়া বলেন, 'আসলে এইসব ঘরগুলাতে 'মিডা ইট' (২ নম্বর) ব্যবহার করা হইছে। সিমেন্টও কম দেওয়া হইছে। যেইজন্য কাজের মান এতটা খারাপ হইছে। সাম্বাদিক সাব যেমন কইছে, কাজও হেমনেই হইছে।' 

এলাকার বাসিন্দা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুব্রত বর্ধন বলেন, ‘কাজের মান এতটাই নিম্নমানের হয়েছে যে, দেয়ালে হাত দিলেই পলেস্তরা খসে পড়ে। ফলে সামান্য ভূমিকম্প হলেই, একটি ঘরও টিকবে না। তাই  নতুন করে ঘরগুলো করা হোক।’ নবীনগরের ইউএনও একরামুল ছিদ্দিক আজ দুপুরে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মুজিববর্ষের উপহার প্রধানমন্ত্রীর এসব কাজে কোনো অনিয়ম বরদাশত করা হবে না। আমি নিজে ঘটনাস্থলে যাবো। এরপর অভিযোগের সত্যতা পেলে সমস্ত বিল বন্ধ করে দেবো।’ 

কিন্তু নির্মাণ কাজের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি জনপ্রতিনিধির আস্থাভাজন ও প্রেসের প্রভাবশালী লোক হওয়ায় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না, এলাকাবাসীর এমন অভিযোগের জবাবে ইউএনও বলেন, ‘অভিযোগের সত্যতা পেলে, দায়িত্ব পাওয়া ব্যক্তি যতই প্রভাবশালী হোক, কঠোর ব্যবস্থা নেবো।’এদিকে, আজ বৃস্পতিবার দুপুরে মাহাবুব আলম লিটনের মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে, তিনি বলেন, ‘ভাই, আমি তোমার সঙ্গে সাক্ষাতে সব বলবো’। এমন কথা বলেই ফোন কেটে দেন। এরপর বহু চেষ্টা করেও তার সঙ্গে আর কথা বলা যায়নি।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password