মায়ের কোলে বসে এদিক সেদিক তাকিয়ে যেনো বাবার ফেরার অপেক্ষা করছে দুই বছরের শিশু কন্যা রিয়ামনি। সে জানে না বাবা আর কখনোই ফিরবেন না। বাবার লাশের পাশে বসে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিল আরেক কন্যা কিশোরী রেখা আক্তার। সঙ্গে ছিল স্ত্রী স্ত্রী নাজমা বেগম আহাজারি। ছোট্ট রিয়ার বাবা হত দরিদ্র রিকশাচালক জীবন মিয়াকে পিঠিয়ে আহত করার প্রায় তিন মাস পর তার মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার সকাল ৯টায় নিজের বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জীবন মিয়া। এর আগে গত ১৭ ডিসেম্বর কুমিল্লা মেডিকেল হাসপাতাল থেকে তাকে বাড়িতে আনা হয়। পুলিশ দুপুরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। জীবন মিয়ার রিয়া মনি ও রেখা আক্তার ছাড়াও আরও এক মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে।বাবা হত্যার বিচার চেয়ে রেখা আক্তার বলে, আমার বাবাকে ফিরিয়ে দেন, আমার বাবা কোনো দোষ করেনি। তারা আমার বাবাকে কেন মারলো?
স্ত্রী নাজমা বেগম বলেন, আমার স্বামীকে তারা মেরে ফেলেছে। এ হত্যার বিচার চাই।ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ১ নভেম্বর সন্ধ্যায় দেবিদ্বার পৌর এলাকার মরিচাকান্দা গ্রামের অটোরিকশা চালক জীবন মিয়া পান্নারপুল বাসস্ট্যান্ডে বাখরাবাদ এলাকার এক যাত্রীর কাছে ১৫০ টাকা রিজার্ভ ভাড়া চান। এর আগে সিএনজি চালক আনোয়ার ওই যাত্রীর কাছে রিজার্ভ ভাড়া চান ৪০০ টাকা।
এ নিয়ে দুজনের হাতাহাতি হয়। হাতাহাতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে জীবন মিয়া রাতে মরিচাকান্দা নিজের বাড়ি ফেরার পথে তাকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে ডান পা ভেঙ্গে ফেলা হয়। পরে তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে উদ্ধার করে প্রথমে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এ ঘটনার পরই আনোয়ারের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীরা জানান, অবিলম্বে হামলাকারী আনোয়ারকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তারা দীর্ঘদিন ধরে পান্নারপুল স্ট্যান্ড এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব করে আসছে। যখন তখন মানুষকে মারধর করে। ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলে না। সিএনজি স্ট্যান্ডের ইজারা আনলেও অটোরিকশা, ট্রাক থেকেও চাঁদা তোলে। চাঁদা না দিলে মারধর ও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে চাবি আটকে রাখে। খাল দখল, জায়গা দখল, স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজীসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই যে তারা করে না।
এব্যাপারে দেবিদ্বারথানার অফিসার ইনচার্জ মো. জহিরুল আনোয়ার জানান, অটোরিকশা চালক জীবন মিয়াকে মারধরের ঘটনায় আগে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। লাশ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। মেডিকেল রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর আদালতে ৩০২ ধারা সংযুক্ত করার আবেদন করা হবে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন