নড়াইল সদর হাসপাতালের ২১ মাসের ইউজার ফি’র (হাসপাতালের বিভিন্ন খাত থেকে আয়ের টাকা) ৭০ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে হিসাব রক্ষক জাহান আরা খানম লাকির বিরুদ্ধে। তবে ব্যাংকে অর্থ জমা দেয়ার কিছু চালান দেখালেও তা জাল বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে রোগীর ভর্তি ফি, অপারেশন থিয়েটার, জরুরি বিভাগে চিকিৎসা ফি, এক্সরে, প্যাথলজি, আল্ট্রাসনো ব্লাড ব্যাংক, কোভিড-১৯ নমুনা সংগ্রহ ফি, অ্যাম্বুলেন্স, ইসিজি, কেবিন ও পেইড বেড ফিসহ বিভিন্ন খাত থেকে যে আয় হয় তা প্রতি মাসে একবার করে সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখায় জমা দিতে হয় এবং তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়।
জাহান আরা খানম লাকি ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই নড়াইল সদর হাসপাতালে হিসাবরক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি হাসপাতালে যোগদানের পর কোনো অর্থ জমা দেননি বলে অভিযোগ উঠেছে।অভিযোগ উঠেছে, হিসাবরক্ষক সদর হাসপাতালে যোগদানের পর ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের ৪৫ লাখ টাকা এবং ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের ৯ মাসের ২৫ লাখ টাকা ব্যংকে জমা দেননি। তবে তিনি সোনালী ব্যাংকে এসব অর্থ জমা দেয়ার চালান দেখাচ্ছেন, যা জ্বাল বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আব্দুর শুকুর বলেন, ‘ইউজার ফি সঠিকভাবে ব্যাংকে জমা পড়ছে কিনা তা যাচাই করার জন্য হিসাবরক্ষকের কাছ থেকে ব্যাংকের সই ও সিল স্বাক্ষরিত চালান নিয়ে মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) সোনালী ব্যাংকে গিয়ে দেখি গত ২১ মাসে ৭০ লাখ টাকার এক টাকাও জমা পড়েনি। সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার জানিয়েছেন চালানগুলোর সই ও সিল তাদের না। এ ঘটনার পর হিসাব রক্ষককে বিষয়টি জানিয়েছি। তিনদিনের মধ্যে সমুদয় অর্থ ব্যাংকে জমা দেয়ার জন্য বলেছি।’তিনি আরও বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না তার জন্য তাকে চিঠি দেয়া হবে। এরইমধ্যে অভিযুক্ত হিসাব রক্ষককে ইউজার ফি জমা দেয়ার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।’
নড়াইল সোনালী ব্যাংক প্রধান শাখার ম্যানেজার মো. আবু সেলিম বলেন, ‘সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক যেসব চালান নিয়ে ব্যাংকে এসেছিলেন তার কোনোটিই ব্যাংকে জমা পড়েনি।’এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত হিসাবরক্ষক জাহান আরা খানম লাকি জানান, কিছু টাকা জমা দেয়া বাকি আছে তা এক সপ্তাহের মধ্যে দিয়ে দেবেন। তবে কত টাকা বাকি রয়েছে তা বলতে পারেননি তিনি। এর বেশি আর কিছু বলতে চাননি।
এর আগে নড়াইল সদর হাসপাতালের সাবেক হিসাবরক্ষক মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত একইভাবে হাসপাতালের ইউজার ফি ব্যাংকে জমা না দিয়ে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। মামলাটি এখন দুদক যশোর কার্যালয়ে বিচারাধীন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন