পুত্রসন্তান ঘরে আসার পর আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো খুশি হয়েছিলেন এমএ হাশেম (৭৫)। বৃদ্ধ বয়সে সেই পুত্রের কারণেই হয়েছিলেন ঘরছাড়া। চারমাস বাইরে বাইরে থাকার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে রোববার (১৫ নভেম্বর) সকালে পুলিশ, ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং স্থানীয়দের সহযোগিতায় নিজের ঘরে উঠেছেন তিনি। বাড়ি উঠার পরও সেই পুত্র এসে তাকে হুমকি দিয়ে গেছে।
৭০ ভরি স্বর্ণালংকার দিয়ে ৫ বছর আগে ধুমধামের সঙ্গে বিয়েও করান ছেলে মোহাম্মদকে। কিন্তু সেই সন্তানের ভয়ে ৪ মাস নিজের বাড়ির বাইরে থাকতে বাধ্য হয় পাকিস্তান আমলের বিকম পাস একসময়ের প্রভাবশালী ও বিপুল সম্পত্তির মালিক হাশেম (৭৫) দম্পতি।সম্পত্তি লিখে না দেওয়ায় সন্তান সন্ত্রাসী জড়ো করে বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর করে। হত্যার হুমকি-ধমকি দেওয়া হয় জন্মদাতা মা-বাবাকে। এমন কঠিন বাস্তবতার মুখে অসহায় এই দম্পতি থানাপুলিশের সহায়তা চেয়েও ব্যর্থ হন।
এমএ হাশেমের স্ত্রী নুরুন্নেছা (৬০) জানান, অসহায়ের মতো প্রাণ হাতে নিয়ে আমাদেরকে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসতে হয়েছিল। পুত্রবধূ ঘরে আনার পর গত ৫ বছর ধরেই কেঁদে চলেছি। গত চার মাসে যা কেঁদেছি, সারাজীবনেও তত কাঁদতে হয়নি। এমন কুলাঙ্গার সন্তান যেন আল্লাহ আর কাউকে না দেন।
ছেলের হুমকির কারণে এখনো শঙ্কায় আছেন এমএ হাশেম। তাই বলেছেন, আবারও যাতে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি আমাকে হতে না হয়, সেজন্য সবার সহযোগিতা চাইছি।বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন জানান, শুনেছি ছেলে এসে আবারও হুমকি-ধমকি দিয়েছে। অভিযুক্ত সেই ছেলেকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।
২০১৫ সালে ছেলে মোহাম্মদকে ধুমধামের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার পর ব্যবসা করার জন্য কদমতলীতে কোটি টাকার দোকান দেন। কিন্তু বিয়ের চার মাসের মাথায় স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা হয়ে যান মোহাম্মদ। এরপরই সব সম্পত্তি তার নামে লিখে দেওয়ার জন্য মা-বাবার ওপর চাপ দিতে থাকেন। ৪ বোনের কেউ যাতে বাবার বাড়িতে আসতে না পারে, সে ব্যবস্থা করতে বলেন। সম্পত্তি লিখে না দেওয়ায় কয়েক দফা মারতেও যান মা-বাবাকে। সমাজের সরদার হিসেবে মানুষের বিচার করে অভ্যস্ত এমএ হাশের নিজের সন্তানের এমন বেপরোয়া আচরণে দিশেহারা হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে সব সম্পত্তি ট্রাস্টে দিয়ে দেওয়ার জন্য একটি দলিলও করে ফেলেন। এতে ক্ষান্ত না হওয়ায় ট্রাস্টের দলিল অবলোপন করেন।
গত ১৭ জুলাই শুক্রবার সন্ত্রাসী ভাড়া করে বাড়ি ঘেরাও করে ভাংচুর চালান এবং দরজা ভেঙে সন্ত্রাসীরা ঘরে ঢোকার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে ঘরে আগুন দিয়ে মা-বাবাকে পুড়িয়ে হত্যার হুমকি দিতে থাকে। ৯৯৯-এ ফোন করা হলেও সাড়া দেয়নি পুলিশ। দিশেহারা এই দম্পতি রাত সাড়ে ৩টার দিকে তারা এক মেয়ের বাসায় গিয়ে উঠেন। পুলিশ মামলা না নেওয়ায় তারা ২০ জুলাই আদালতে মামলা করেন।
পুলিশের সাড়া না পেয়ে ৭ নভেম্বর তারা ছুটে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দফতরে গিয়ে নিজ বাড়িতে তুলে দেওয়ার ব্যাপারে তার সহায়তা চেয়ে বিস্তারিত লিখিতভাবে অবহিত করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে দরখাস্তের উপরে কমিশনার (চট্টগ্রাম মেট্রো) বিষয়টি দেখুন বলে রিকমেন্ড করার পাশাপাশি সরাসরি ফোন করেন। এরপরই বন্দর থানার ওসি নিজাম উদ্দিন নড়েচড়ে বাসেন এবং সৈয়দা নুরুন্নেছার করা মামলাটি গ্রহণ করেন ৯ নভেম্বর। মামলায় পুত্র মোহাম্মদ ও পুত্রবধূ সুমাইয়াসহ তিনজনকে আসামি করা হয়।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন