আবাসিক এলাকার পরই সরু দেওয়াল, তারপরই খোলা প্রান্তর। সেই প্রান্তরে জ্বলছে সারি সারি চিতা। এটি যেন গত বছরের এপ্রিলের নিউইয়র্কে করোনায় মৃতদের গণকবর দেওয়ার দৃশ্যকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। ছবিটি ইতোমধ্যে নেট দুনিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। সবার আশঙ্কা, ভারত কি সত্যিই করোনায় মৃত্যুপুরী হতে যাচ্ছে?
শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৩ লাখ ৩২ হাজার মানুষ। যা বৃহস্পতিবারের তুলনায় ১৭ হাজার বেশি। এই সংখ্যা বিশ্বে একদিনে আক্রান্তের সর্বোচ্চ রেকর্ড। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দেশটিতে ১ কোটি ৬২ লাখ ৬৩ হাজার ৬৯৫ জন করোনায় আক্রান্ত হলেন।
রাজধানী নয়াদিল্লিসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের হাসপাতালে একেবারেই অক্সিজেন নেই বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে ভেঙে পড়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। এ অবস্থায় দেশটিতে ট্রিপল মিউট্যান্ট বা তিনবার রূপ পরিবর্তনকারী তিনগুণ বেশি শক্তিশালী নতুন করোনার সন্ধান মিলেছে। যা টিকা নিলেও প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। এতে দেশটির চিকিৎসা ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। ফলে হাসপাতাল থেকে লাশ সরাতে সরাতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন দেশটির কর্মীরা।
এমন পরিস্থিতিতে জনবসতিপূর্ণ এলাকার পাশে জ্বলন্ত গণচিতার ওই ছবিটি সামনে এনেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তারা জানিয়েছে, শুধু শ্মশানই নয়, রাজধানীর কবরস্থানগুলোর অবস্থাও এক। মহদেহ সমাহিত করার জায়গা পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে করোনায় মৃতদের পরিবারকে।
চিতানির্গত ধোঁয়ায় ঝাপসা হয়ে আসা চোখ মুছতে মুছতে সে কথাই বলছিলেন দিল্লির সীমাপুরীর বাসিন্দা নিতিশ কুমার। তিনি জানান, কোভিডে আক্রান্ত হয়ে দু’দিন আগে তার মা মারা গিয়েছেন। কিন্তু কোনো শ্মশানে মায়ের মরদেহ দাহ করার জায়গা পাননি। বাধ্য হয়ে দু’দিন বাড়িতেই মায়ের মহদেহ রেখে দিয়েছিলেন তিনি। নিজে এদিক-ওদিক চষে বেড়িয়েছেন। কোথায় দাহ করা যায়, জায়গা খুঁজছিলেন। শেষমেশ একটি পার্কিং লটে গড়ে ওঠা অস্থায়ী শ্মশানে মা-কে চিতায় তোলার জায়গা মেলে।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘শহিদ ভগৎ সিংহ সেবা দল’-এর প্রধান জিতেন্দ্র সিংহ শান্টি বলেন, দিল্লিতে এমন দৃশ্য দেখতে হবে কেউ ভাবেনি। বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়ে, কারও বয়স ৫, কারও ১৫, কারও ২৫। তাদের দাহ করতে হচ্ছে। সদ্য বিবাহিত অনেকের দেহও শ্মশানে আসছে। চোখে দেখা যাচ্ছে না।
তিনি জানিয়েছেন, সীমাপুরীর পার্কিং লটে গড়ে ওঠা অস্থায়ী শ্মশানে বৃহস্পতিবার বিকেলে ৬০টি মহদেহ দাহ করা হয়েছে। জায়গা না পেয়ে পড়েছিল আরও ১৫টি মরদেহ।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন