করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে। যার কারণে সোমবার থেকে সাত দিন লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। আর এই লকডাউনের ঘোষণার পর যেন ঈদের বাজার শুরু হয়েছে বরিশালে। নিত্যপণ্য থেকে শুরু করে পোশাক বাজারেও বেড়েছে মানুষের ভিড়। অনেকেই প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য কিনে বাড়ি ফিরছেন। যার কারণে গত দুই দিন ধরে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে বাজার। এদিকে নারীরা ছুটছেন চকবাজারের দিকে। সামনে পহেলা বৈশাখ ও ঈদ। তাই সেই বাজারও থেমে নেই। সেখানে প্রচণ্ড ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এদিকে বাড়তি ভাড়ায় অর্ধেক যাত্রী নেয়ার কথা থাকলেও এর বালাই নেই বরিশালের লঞ্চ কিংবা বাস সার্ভিসে। যদিও প্রশাসন করোনা মহামারি মোকাবেলায় মানুষকে মাস্ক পরতে বাধ্য ও স্বাস্থ্যবিধি মানাতে অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। রোববার বরিশাল নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন চালের দোকানসহ মুদির দোকানগুলোতে প্রচুর ভিড়। দোকানিরা জানান, শনিবার থেকেই হঠাৎ করে দোকানে ক্রেতা সমাগম বাড়তে শুরু করে। অনেকেই ১০ থেকে ১৫ দিনের বাজার একবারে সংগ্রহ করে বাড়ি ফিরছেন।
এসব বাজারে সাধারণত দুপুর ১টার পরে ভিড় দেখা যায় না। তবে লকডাউন আসছে এমন খবরে দুপুরের পর থেকে ক্রেতাদের উপস্থিতি বেড়েছে। সময় যত যাচ্ছে ক্রেতারা তত ভিড় জমাচ্ছেন। পোর্ট রোডের চালের আড়তের মো. রনি বলেন, দুপুরের পর থেকে বাজারে সাধারণত ক্রেতাদের উপস্থিতি কম থাকে। কিন্তু শনিবার থেকেই অন্য দিনের চেয়ে একটু বেশি ক্রেতা দেখা যাচ্ছে। সামনে রোজা ও লকডাউন এ দুই কারণে হয়তো ক্রেতারা একবারে বেশি পণ্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
নগরীর কালীবাড়ি রোডের বেল্লাল হোসেন বলেন, আসলে গত কয়েক দিন ধরে যে হারে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে তাতে সবাই লকডাউনের অনুমান করেছিল। এখন দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় একসঙ্গে বাজার করতে হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৬০ থেকে ৬২ টাকা, গুটি চাল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, দেশি রসুন ১০০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০ টাকা, মোটা ডাল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ছোলা ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিমের ডজন মিলছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়।
একটি সরকারি দপ্তরের কর্মচারী বলেন, সামনে রমজান মাস তাই আগে থেকে বাজার করার পরিকল্পনা ছিল। ভেবেছিলাম আরও কয়েকদিন পর করব। হঠাৎ লকডাউনের ঘোষণার পর দ্রুত বাজারে আসতে হলো। লকডাউনের কারণে যদি দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় তাহলে এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারব না।
এদিকে ফার্মেসি ও বিভিন্ন দোকানে বেড়েছে হ্যান্ডওয়াশ ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের চাহিদা। কালীবাড়ি রোডের মুদি দোকানদার বাচ্চু সিকদার বলেন, ইতোমধ্যে লাইফবয়, স্যাভলন ও ডেটল হ্যান্ডওয়াশের রিফিল প্যাক শেষ হয়ে গেছে। ক্রেতা আসছেন কিন্তু দোকানে মজুত না থাকায় দিতে পারছি না।
বরিশালে বেড়েছে মাস্কের চাহিদাও। লকডাউন ঘোষণার পর ফুটপাত থেকে মার্কেট সব জায়গায়ই মাস্ক কিনতে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ। এ সুযোগে বেশি দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। সকালে দুইটি সার্জিক্যাল মাস্ক ১০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন একটি মাস্কের দাম চাওয়া হচ্ছে ১০ টাকা। এদিকে যারা রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করছেন বা বরিশালে এসেছেন তারা ছুটছেন যার যার গন্তব্যস্থলে। যার কারণে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের লঞ্চের কেবিনের টিকিট সোনার হরিণে রূপ নিয়েছে। যাত্রীরা টিকিট পেতে এক লঞ্চ কাউন্টার থেকে ছুটছেন অন্য কাউন্টারে।
জুবায়ের রহিত নামে পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র এই প্রতিবেদককে মোবাইল ফোনে জানান, তিনি জরুরি কাজে ঢাকায় তার মামার বাসায় গিয়েছিলেন। এখন বরিশালে ফিরবেন কিন্তু লঞ্চের টিকিট মিলছে না। তিনি জানান, ডেকে আসলে করোনার ঝুঁকি বেড়ে যাবে তাই কেবিন খুঁজছেন। একই অবস্থা বাস সার্ভিসেও। সেখানে বাড়তি ভাড়া দিয়েও অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
বরিশাল আধুনিক নৌবন্দর টার্মিনালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যাত্রীর চাপ ছিল তীব্র। লকডাউনের খবরে অনেকেই বাড়ি ফিরছেন। এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করেছেন বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক শহিদুল ইসলাম।
রোববার নগরীর নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল ও চৌমাথা এলাকায় দেখা গেছে, মানুষের বাড়ি ফেরার ভিড়। মহাসড়কে পরিবহন বাস, মালবাহী ট্রাকের চাপ ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে অসংখ্য মানুষের ভিড়। রাস্তার মোড়ে মোড়ে মানুষ দাঁড়িয়ে থাকলেও রোববার সকাল থেকে যানবাহনের সংকট দেখা দিয়েছে।
নগরীর চৌমাথা এলাকায় দেখা গেছে, আশপাশের উপজেলায় যাওয়ার জন্য অনেক মানুষের ভিড়। কিন্তু যানবাহন মিলছে না। নথুল্লাবাদ থেকে ঝালকাঠি যাওয়ার জন্য ব্যবসায়ী মাইদুল হক অনেকক্ষণ অপেক্ষমাণ থাকলেও পরিবহন বাস না পেয়ে থ্রি হুইলারে গন্তব্যে যান।
বরিশাল জনস্বার্থ রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব মানুওয়ারুল ইসলাম অলি বলেন, কেউ যেন স্বাস্থ্যবিধি মানতে নারাজ। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বাধ্য করতে হয় তাদের। আর লকডাউনের কথা শুনে ঈদের বাজার শুরু হয়ে গেছে বরিশালে। লঞ্চ-বাসে ভিড় বেড়েছে ঈদের মতো। যদিও অতিরিক্ত ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন হবে অর্ধেক এমনটা বলা হলেও এর বালাই নেই কোথাও। এ বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি রাখা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় আমরা আগে থেকে তৎপর রয়েছি। সচেতনতামূলক কর্মসূচি করেছি, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করা হয়েছে। মাস্ক পরতে বাধ্য করাতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি লঞ্চ ও বাসে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন