লকডাউনের কারণে ঢাকার বাসা ছেড়ে মুন্সিগঞ্জ শহরে বাবার বাড়িতে আসছিলেন মুন্সিগঞ্জের দক্ষিণ কোটগাঁও এলাকার দুলু মিয়ার মেয়ে দোলা বেগম (৩৪)। বাড়িতে মেয়ে আকসারকে (৩) রেখে ১৫ বছরের ছেলে ইফাজকে সঙ্গে নিয়ে নারায়ণগঞ্জঘাটে এসে লঞ্চে ওঠেন মুন্সিগঞ্জের উদ্দেশে।পথে শীতলক্ষ্যা নদীতে জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যায় সাবিদ আল হাসান নামের লঞ্চটি। ছেলেকে বাঁচাতে হাত ধরেছিলেন বেশ কিছুক্ষণ। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয়নি। ইফাজকে নির্মাণাধীন ব্রিজের শ্রমিকরা উদ্ধার করলেও কয়েক ঘণ্টা পর দোলার লাশ উদ্ধার করে উদ্ধারকারীরা।
শিশু আকসার মা হারানোর কষ্টটা বোঝার মতো বয়স তার হয়নি। তাই মায়ের কথা মনে পড়লেই কান্না করছে আর মাকে খুঁজছে। আর ছেলে ইফাজ তো চোখের সামনেই হারিয়ে যেতে দেখেছে তার মাকে। তাই এই কষ্ট কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না সে।ইফাজ জানায়, অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে রওয়ানা দিয়েছিল লঞ্চটি। তখন একজন ব্যক্তি প্রতিবাদ জানিয়েছিল। ধীরে ধীরে গতি কমিয়ে চালাচ্ছিল। যখন বড় জাহাজটি লঞ্চের কাছাকাছি আসে তখন সব যাত্রীরা চিৎকার করে জাহাজকে থামানোর জন্য বলছিল। কিন্তু তারা না থামিয়ে ওপর দিয়ে চলে যায়। তখনও আমি আম্মুর হাত আর আম্মু আমার হাত শক্ত করে ধরেছিল। কিন্তু এরপর লঞ্চটি আমাদের সবার উপরে পড়ে যায়। তখন পানিতে
ডুবে যাই। আশপাশের সবাইকে বলেছি আমার আম্মুকে খুঁজে দেওয়ার জন্য।রোববার সন্ধ্যার কিছু আগে এসকেএল-৩ নামের একটি কোস্টার জাহাজ পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে অন্তত ২০০ মিটার লঞ্চটিকে টেনে নিয়ে যায়। এরপর লঞ্চটি যাত্রীসহ ডুবে যায়। আশপাশে কোনো নৌকা না থাকায় অনেকেই রক্ষা পাননি।
স্বজনদের গগন বিদারী কান্না-আহাজারি আর শ্বাসরুদ্ধর ১৯ ঘণ্টার উদ্ধার অভিযান শেষে শীতলক্ষ্যায় জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যাওয়া যাত্রীবাহী লঞ্চটি উদ্ধার করেছে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়। রবিবার রাত থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত শিশু ও নারীসহ মোট ২৯টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।জেলা প্রশাসনের তালিকা অনুযায়ী দুর্ঘটনায় মোট নিখোঁজের সংখ্যা ছিল ৩৫ জন। তবে ডুবে যাওয়া লঞ্চটিতে ৪৬ জন যাত্রী ছিল বলে যে তথ্য বিআইডব্লিউটিএ ও লঞ্চ মালিক সমিতির তরফ থেকে দেয়া হয়েছিল সেটি নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ পোষণ করেছেন কয়েকজন বেঁচে যাওয়া যাত্রী।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন