নাইকি লীন মেথড এবং কানবান সিস্টেম ব্যবহার করে কিভাবে ক্রেতা সন্তুষ্টি অর্জন করেছিল

নাইকি লীন মেথড এবং কানবান সিস্টেম ব্যবহার করে কিভাবে ক্রেতা সন্তুষ্টি অর্জন করেছিল

আপনাদের মনে আছে নিশ্চয়ই নব্বই শতকের শেষ দিকে বিশ্ব খ্যাত স্পোর্টস ব্র্যান্ড নাইকির বিরুদ্ধে "নাইকি পণ্য বয়কট" নামে একটা ব্যাপক আকারের আন্দোলন শুরু হয়েছিল। নাইকি তাদের খেলার দামী পণ্য সামগ্রী গুলো হত দরিদ্র দেশের নোংরা কর্ম পরিবেশের নন-কমপ্ল্যায়েন্স কারখানা থেকে তৈরী করে নিয়ে এসে এত উচ্চ মূল্যে বিক্রি করছে।

তাদের কারখানা গুলোতে অত্যাধিক কাজের চাপ, লম্বা সময় ধরে কাজ করতে বাধ্য করা, অপ্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিক এর আধিক্য, কাজের নূন্যতম কোন ধরণের পরিবেশ বজায় না রাখা, অমানবেতর ভাবে কাজ করানো হচ্ছে এই সব খবর বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ব জুড়ে সাধারণ ক্রেতাগণ 'নাইকি পণ্য বর্জনের ব্যাপক আন্দোলন' শুরু করে। এবং রাতারাতি ৮ শতাংশ সেলস সূচক নেমে যায়। ওই সময়ের নাইকির বিরুদ্ধে এই জন সচেতনতার আন্দোলন এই পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে এখনো মানুষ ওই উদহারণ দিয়ে বিশ্বের যে কোন বড় ব্র্যান্ড কে হুমকি প্রদান করে থাকে।

পাবলিক অপিনিয়নের শক্তি যে কত ব্যাপক ভাবে যে কোন বিখ্যাত কোম্পানির ভীত নাড়িয়ে দিতে পারে, তা এখনো সকল ব্র্যান্ড মাথায় রেখেই চলাফেরা করে। উদহারণ স্বরূপ বলা যায় যে, ঈদের মাসের বেতন বোনাস নিয়ে আমাদের দেশের কারখানা গুলোতে এখন এক ধরণের সচেতনতা তৈরী হয়ে গেছে। দুই একটা বিচ্ছিন্ন ঘটে ছাড়া আমাদের দেশের ৩০ লক্ষ কর্মচারী কিন্তু সঠিক সময়ে বেতন বোনাস দুটোই পেয়ে যাচ্ছে।

আজ থেকে কয়েক বছর আগে ও এই সচেতনতা টা সকল কারখানায় ছিলনা। ব্যাপক আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ত আমাদের শ্রমিক জনতা এবং দৈনিক পত্রিকাগুলো নিরপেক্ষ সমর্থন প্রদান করত। সরকার ও জনপ্রশাসন সকল সময় নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করত। আজকে তাই আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে এই সমস্যা নাই বললেই চলে।

যাইহোক ৮% সেলস ড্রপের ঘটনায় এবং গণমত তাদের বিরুদ্ধে চলে যাওয়ায় নাইকির উপরের মহলের টনক নড়ে এবং ১৯৯৬ সালে নাইকির একজন প্রভাবশালী বোর্ড মেম্বার মিস জিল কার কনওয়ে একটা চূড়ান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, বোর্ডের অনুমতি সাপেক্ষে তিনি "লীন মেথড গেম্বা ওয়াক " প্রিন্সিপাল অনুসরণ করে সরাসরি ব্যক্তিগত ভাবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার কারখানা গুলোর কর্ম পরিবেশ সরেজমিনে তদন্ত করার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। উনি নিজে সকল কর্ম পরিবেশ তদারকি, ওয়ার্কারদের সাথে সরাসরি কথা বলা, স্টাফদের মতামত গ্রহণ করা, সকল ধরণের কমপ্লায়েন্স কোথায় কিভাবে মেনে চলা হচ্ছে তা নিজ চোখে দেখেন।

প্রত্যেকটা কারখানা পরিদর্শন শেষে তার প্রতিবেদন অনুযায়ী নাইকি লিডারশিপ টিম প্রত্যেকটা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য লীন ট্রেনিং করানোর বন্দোবস্ত করেন। সমস্ত ধরণের প্রোডাকশন সাপ্লাইচেইন এর পরিবর্তন সাধনের জন্য, কর্ম পরিবেশ উন্নয়নের জন্য, শ্রমিকদের সাথে ম্যানেজার গণের আত্মিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য, প্রত্যেকটা শ্রমঘন কাজ এবং শ্রমিক যে একটা কোয়ালিটি প্রোডাক্ট ডেলিভারির জন্য কতখানি গুরুত্বপূর্ণ তা নিশ্চিত করার সকল ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

আমি নিজেই কিন্তু ইয়াংওয়ানে কাজ করার সময় দেখেছি যে নাইকি কমপ্লায়েন্স অডিটে কি পরিমান চুলচেঁড়া ভাবে সকল কিছুর খেয়াল করা হয়ে থাকে। এখানে একটা বিষয় আপনাকে খেয়াল করতে হবে যে, আমরা সকলেই কিন্তু লীন মেথড গুলোকে ওয়েস্টেজ কন্ট্রোল, প্রোডাকশন কেন্দ্রিক সমস্যা সমাধান কিংবা ইফিসিয়েন্সি বৃদ্ধি সংক্রান্ত টুল হিসেবে ভাবতাম।

কিন্তু কর্ম পরিবেশ উন্নয়নে ও কিভাবে এর বিচক্ষণ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায় তা অবশ্যই আমাদের শিখতে হবে। এমআইটি স্লোআন এর প্রফেসর জনাব গ্রেগ ডিস্টিলহর্স্ট তার এক গবেষণায় জানিয়েছেন লীন অস্বাস্থ্যকর বা অসহনীয় কর্ম পরিবেশ উন্নয়নেও কাজ করতে পারবে যদি আপনি টেকনিক টা জানেন।

তার গবেষণায় উঠে এসেছে নাইকির কাজ করা কারখানা গুলোতে লীন এনং কানবান এপ্রোচে কাজ শুরু করার পর ওয়েজেস, বেনিফিট, কঠোর সময় নিয়ন্ত্রণ, কর্ম পরিবেশ উন্নয়নে ১৫% উন্নতি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। এই ফলাফলে মিঃ গ্রেগ নিজেও অবশ্য একটু অবাকই হয়েছেন। প্রথমত নাইকি একজন ক্রেতা হিসেবে তাদের সরবরাহকারী দের সাথে কি ধরণের ভুল গুলো করে আসছিল তা কিন্তু তারা প্রথমেই খুঁজে বের করা শুরু করে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password