ভালোবেসে মাত্র ৪০ দিন আগে বিয়ে করেছিলেন সোনিয়া ও পিয়াল। সোনিয়া অনার্স তৃতীয়বর্ষের ছাত্রী। পিয়াল ভারতের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ শেষবর্ষের ছাত্র। তাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা ছিল সোমবার। বধূ সেজে সোনিয়া যাবে পিয়ালের বাড়ি। কিন্তু, সংসারের স্বপ্ন তার আর পুরণ হলো না। চিকিৎসকের এক প্রতিবেদনে তিনি যখন জানতে পারেন জীবনে মা হওয়া সম্ভব নয় তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। বিয়ের অনুষ্ঠানের মধ্যেই সবার অলক্ষ্যে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তিনি।
পিয়ালের বরযাত্রা শেষ পর্যন্ত সোনিয়ার শবযাত্রায় পরিণত হয়। হৃদয়বিদারক এই ঘটনাটি ঘটেছে যশোরের মণিরামপুর উপজেলার খেদাপাড়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামে। তিনি ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইউপি মেম্বর মুনছুর আলীর ছোট মেয়ে।
এলাকাবাসী ও পরিবারের কাছ থেকে জানা যায়, সোনিয়া খাতুন যশোর সরকারি মহিলা কলেজে ইংরেজিতে অনার্স করছিলেন। তিনি তৃতীয়বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। পিয়াল হোসেন সদর উপজেলার ভাতুড়ীয়া গ্রামের মইন উদ্দিনের ছেলে। তিনি ভারতের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। লেখাপড়ার সুবাদে যশোরে তাদের পরিচয় এবং প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে তারা গত ১০ জুন বিয়ে করেন। বিয়ের পর পিয়াল লেখাপড়ার জন্য ভারতে চলে যান।
সোনিয়ার পিতা মুনছুর আলী জানান, এরই মধ্যে মেয়ে অসুস্থ হলে তাকে যশোরের একজন গাইনি চিকিৎসকের কাছে নেয়া হয়। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ওই চিকিৎসক সোনিয়ার পিতাকে গোপনে জানান, তার মেয়ে কখনো মা হতে (গর্ভধারণ) পারবেন না।
অবশ্য এ কথা মুনছুর আলী গোপন না করে তার স্ত্রীকে জানান। পরবর্তীতে সোনিয়া তার মায়ের কাছ থেকে ঘটনাচক্রে বিষয়টি জানতে পারেন। ফলে সব সময় সোনিয়ার মন খারপ থাকতো। এরই মধ্যে দু’পরিবারের সম্মতিতে সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে সোনিয়াকে তার শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে যাবার দিন নির্ধারণ করা হয়। সে অনুযায়ী মুনছুর আলী বাড়িতে অনুষ্ঠানের আয়োজনও করেন। কিন্তু তার আগেই সোনিয়া ভোরে সকলের অজান্তে ঘরের আড়ার সাথে গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করেন।
মেয়ের মরদেহ জড়িয়ে মুনছুর আলী ও তার স্ত্রী শোকে বিলাপ করছেন আর বলছেন ডাক্তারের রিপোর্ট শুনেই আমাদের মামনি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল। অন্যদিকে স্ত্রীর মৃত্যুর কথা শুনে পিয়াল ও তার অভিবাবকরা ছুঠে আসেন। পিয়ালও তার স্ত্রীর মরদেহ জড়িয়ে ধরে বিভিন্ন বিলাপ করছিলেন। মণিরামপুর থানার ওসি (সার্বিক) রফিকুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় সোনিয়ার পিতা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন।
এদিকে মুনছুরের মেয়ের অকাল মৃত্যুর খবর পেয়ে জালালপুর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুছা, থানা বিএনপির সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক পৌর কাউন্সিলর মফিজুর রহমান, খেদাপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রায়হান উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আলমগীর সিদ্দিক, ছামছুজ্জামান শান্ত, নজমুছ শাহাদাৎ, হোসেন আলী প্রমুখ। বিকেলে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে সোনিয়ার লাশ দাফন করা হয়।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন