মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন ৩০টি শহরের ৭০টি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল বিভাগের কর্মীরা। বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে এ কর্মবিরতি পালন করবেন তারা। নবগঠিত মিয়ানমার সিভিল ডিসওবিডিয়েন্স মুভমেন্ট-এর পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) ভোরে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। এদিন অভিযান চালিয়ে রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি এবং ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের আটক করা হয়। রাজধানী নেপিডো ও প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় রাস্তায় টহল দিতে শুরু করে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। এরপর সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যুত্থানের খবর নিশ্চিত করে সেনাবাহিনী।
এরইমধ্যে সেনা অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করে মিয়ানমারে অসহযোগ আন্দোলন ঘোষণা করেছে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। মিয়ানমার সিভিল ডিসওবিডিয়েন্স মুভমেন্ট নামে ওই বিক্ষোভ চলছে। এরইমধ্যে এতে শামিল হয়েছেন চিকিৎসাকর্মীরা।
বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে হিমশিম খাওয়া অসহায় জনগণের চেয়ে নিজেদের স্বার্থকেই ঊর্ধ্বে রেখেছে সেনাবাহিনী। মিয়ানমারে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৩ হাজার ১শ’রও বেশি মানুষ মারা গেছে, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ প্রাণহানি। অবৈধ সামরিক সরকার যারা কিনা আমাদের দরিদ্র রোগীদের প্রতি এতটুকু সম্মান দেখাতে পারেনি, তাদের যেকোনও আদেশ মানতে আমরা অস্বীকৃতি জানাচ্ছি।’
চারজন চিকিৎসক রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন যে তারা কর্মবিরতি পালন করছেন। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়েছেন তারা।
ইয়াঙ্গুনভিত্তিক ২৯ বছর বয়সী এক চিকিৎসক রয়টার্সকে বলেন, ‘আমি চাই সেনারা তাদের ব্যারাকে ফিরে যাবেন। আর সে দাবি জানিয়েই আমরা চিকিৎসকরা হাসপাতালে যাচ্ছি না। কতক্ষণ পর্যন্ত এ ধর্মঘট চলবে তার কোনও সময়সীমা নেই। এটা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।’
মিয়ানমারের প্রধান শহরগুলোতে সেনাবাহিনীর টহল চলেছে। মঙ্গলবার রাতে ইয়াঙ্গুনে বিক্ষোভকারীরা গাড়ির হর্ন ও থালাবাসন বাজিয়ে প্রতিবাদ জানান। শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন তরুণ সংগঠনও অসহযোগ আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশ সেনা অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে। সু চিকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তারা। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনা উপেক্ষা করেই নতুন গভর্নিং কাউন্সিল ঘোষণা করেছে সেনাবাহিনী। সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাং-এর নেতৃত্বে আটজন জেনারেল এ কাউন্সিলে কাজ করবেন। এর আগে ২০১১ সাল পর্যন্ত প্রায় অর্ধ শতক ধরে মিয়ানমার সেনাশাসনের অধীনে ছিল।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন