শীত প্রধান দেশের নজরকাড়া ফুল টিউলিপ এখন চাষ হচ্ছে ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের গদখালীতে। সম্প্রতি ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে নিবিড় যত্নে টিউলিপ ফোটাতে সক্ষম হয়েছেন গদখালীর ফুলচাষী ইসমাইল হোসেন। তার এই চাষের মধ্য দিয়ে প্রথম বারের মতো ফুলের রাজ্য থেকে বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপ চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। শীত প্রধান দেশে এ ফুলটি হরহামেশাই দেখা যায়।
তবে গ্রীষ্মকালীন দেশে এতদিন এর দেখা পাওয়া না গেলেও, সম্প্রতি তা সম্ভব করেছেন ইসমাইল হোসেন। জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে তার বাগানে দোল খাচ্ছে বাহারি রঙের চোখ ধাঁধানো টিউলিপ। যা দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছে দূরদূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা।
মনমাতানো নজরকাড়া সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে টিউলিপ ফুলের সৌন্দর্যকে উপভোগ করছেন তারা। ফুল দেখতে আসা দর্শনার্থীরা বলেন, আমাদের দেশে এই ফুলটি প্রথম ফুটেছে। তাই আমরা আগ্রহ নিয়ে দেখতে এসেছি। নতুন এই আকর্ষনীয় ফুল দেখার জন্য প্রতিদিন শত শত মানুষ আসছেন এবং মুগ্ধ হচ্ছেন।
টিউলিপ চাষের বিষয়ে ফুল চাষি ইসমাইল হোসেন বলেন, প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে টিউলিপ চাষ করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে শুরু করার চেষ্টা করছি। তবে এদেশে ফুল ফুটলেও পরবর্তীকালে রোপণের জন্য টিউলিপ গাছের বীজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই এখানে। একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় বাল্ব সংরক্ষণ করতে হয়। তাই এটা টিউলিপ চাষের বড় সীমাবদ্ধতা। বাণিজ্যিক চাষের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের জলবায়ুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে টিউলিপ ফুলের জাত উদ্ভাবন করতে গবেষণা চলছে। আশা করছি পরীক্ষামূলকভাবে এ চাষ সাফল্যের মুখ দেখবে এবং পর্যটন শিল্পে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
এই ফুল চাষের মধ্যে দিয়ে গদখালীর ফুলের রাজ্য একখন্ড নেদারল্যান্ডসে পরিনত হবে বলে আশা করছি। টিউলিপ ফুল চাষের বিষয়ে ঝিকরগাছা কৃষি অধিদপ্তরের কৃষিবিদ মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও সবসময় কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। যাতে তারা বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করে লাভবান হতে পারে।
বিদেশি এ ফুলের বাল্ব আনতে অনেক টাকা শুল্ক লাগে। তাই দেশে নজরকারা এ ফুলের উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় সার্বিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। ফুলের রাজ্যে মাত্র ৫ শতক জমিতে পরীক্ষামূলক ভাবে টিউলিপ লাগানো হয়েছে। বীজ লাগানোর প্রায় এক মাসের মাথায় ফুল আসতে শুরু করেছে। এই অঞ্চলে বিদেশী ফুল চাষ হবে কল্পনাও করিনি অনেকে।
বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এই ফুল দেখতে আসছে। এ ফুল বাণিজ্যিকভাবে বিক্রয় হলে আগামীতে আরও জমিতে এ ফুল চাষ করা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। বৃহত্তর কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চল কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক রুহুল কবির টিউলিপ ফুলের প্রদর্শনি সরেজমিনে দেখতে এসে জানান,
বৃহত্তর কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চল কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গদখালীতে আমরা পরীক্ষামূলক ভাবে টিউলিপ চাষ শুরু করেছি। প্রথম অবস্থাতে আমরা আশানুরূপ সাফল্য পেয়েছি। এই চাষকে আগামীতে এই অঞ্চলে আরো বৃহৎ পরিসরে চাষ করার জন্য সর্বাত্তোক চেষ্টা করবো। এসময় ঝিকরগাছা উপসহকারী কৃষি অফিসার মফিজুর রহমান, অর্ধেন্দু পাড়ে সহ কৃষি বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন