ভারতের জম্মুতে যেন শুরু হয়েছে রোহিঙ্গা তাড়াও কর্মযজ্ঞ। ওই অঞ্চলে বসবাসরত কয়েক হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর বিরুদ্ধে অভিযান ও ধরপাকড় শুরু করেছে পুলিশ প্রশাসন। রোহিঙ্গাদের ওপর এ নির্যাতনে সমর্থন দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। সেখানে ‘রোহিঙ্গা খেদাও’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, উপযুক্ত পরিচয়পত্র না থাকার অভিযোগ এনে আড়াইশ’র বেশি রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে হীরানগরের বন্দী শিবিরে আটক করা হয়েছে। ফলে অনেক রোহিঙ্গা শিশুই বাবা-মার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে দিল্লিতে জাতিসংঘ কার্যালয়ের সামনে রোহিঙ্গারা আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানা গেছে।
এর আগে শনিবার সকালে রোহিঙ্গা কলোনিতে গিয়ে সবাইকে স্থানীয় মৌলানা আজাদ স্টেডিয়ামে সবাইকে হাজিরা দিতে বলে। পরে সেখানে পরিচয়পত্র যাচাই বাছাই করা হয়। এদিকে দিল্লির একটি রোহিঙ্গা শিবিরেও সোমবার রাতে দুষ্কৃতিকারীরা আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর রাজধানীর রোহিঙ্গাদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
রোহিঙ্গা কলোনিতে বসবাস করেন মুহাম্মদ সুলেমান। তিনি জানান, “ভেরিফিকেশনের পর আমরা যে আড়াইশোর মতো লোক গিয়েছিলাম তার মধ্যে ১৫৫ জনকেই পুলিশ আটক করে সাম্বা জেলে ঢুকিয়ে দেয়। আটকের পর অভিযোগ করা হয় তারা জাল নথি দিয়ে ভারতের পরিচয়পত্র বা আধার কার্ড জোগাড় করেছেন।
তবে, জম্মুতে বসবাসকারী রোহিঙ্গা জাফর বলেন, “আমাদের কাছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার দেওয়া পরিচয়পত্র ছাড়া দ্বিতীয় আর কোনো কার্ড। দু-একজন বানিয়ে থাকলেও তারা হয়তো ভুল করে করেছে।”
দিল্লিতে রোহিঙ্গা মানবাধিকার কর্মী তাসমিদা জোহর বলেন, আসলে জম্মুর প্রশাসন ও স্থানীয় মানুষ চায় না রোহিঙ্গারা সেখানে থাকুন, সে জন্যই এই ঢালাও ধরপাকড় শুরু হয়েছে। আসলে জম্মুতে রোহিঙ্গারা থাকুক, সেটা সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারাও চাইছে না অনেকদিন ধরেই। স্থানীয় বাসিন্দারাও চাইছে না।”
জম্মুতে চলা অভিযান নিয়ে পুলিশ কোনো কথা না বললেও জম্মুতে বিজেপির সভাপতি রবীন্দ্র রায়না দাবি করছেন, প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের অনুরোধেই এই পদক্ষেপ। মিয়ানমার সরকার ভারতের কাছে এ দেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের তালিকা চেয়েছে বলেই যাচাই করে দেখা হচ্ছে এদের মধ্যে কারা কারা সে দেশের নাগরিক। এমনটাই দাবি করেন তিনি।
গোটা ভারতে প্রায় চল্লিশ হাজার রোহিঙ্গার বসবাস। তার প্রায় ৪ ভাগের এক ভাগই জম্মু শহর ও তার আশেপাশের বিভিন্ন বস্তিতে। দিনমজুরি ও মাছধরাসহ বিভিন্ন ছোট কাজ করে তারা জীবিকা নির্বাহ করেন। এদের মধ্যে অনেকেই দশ বা বিশ বছর ধরে জম্মুতে আছেন, কিন্তু গত কয়েক বছরে রোহিঙ্গাদের জম্মু থেকে তাড়াতে স্থানীয় বাসিন্দারা আন্দোলন শুরু করেছেন।
সুত্রঃ বিবিসি
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন