পিবিআইয়ের এসআই তৌহিদুল ইসলামের অডিও কথোপকথন ফাঁস। এ নিয়ে ঝিনাইদহের আদালত এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি। ঘটনা ধামা চাপা দেওয়ার পায়তারা চলছে। ইতোমধ্যে টাকা লেন দেনের কথোপকথনের অডিও সাংবাদিকের কাছে জমা হয়েছে।
আসামির কথিত সুন্দরী স্ত্রীর সঙ্গে এসআই তৌহিদ বলেছেন, আপনি কপারেট করেন, যে ভাই আমি এটা দিচ্ছি, আমি সেটা ইয়ে করবো, আপনি যদি দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে পরবর্তীতে তাকে (ওই নারীর স্বামী) মামলা থেকে বাঁচানোর জন্য আমি যা করার সবই করবো।
নগদ ১৫ লাখ টাকা জব্দ তালিকায় ইচ্ছে করলে নিতে পারতাম মর্মেও ওই নারীকে বলেন এসআই তৌহিদ। কয়েক দফায় কথা বলেছেন তারা। সেই সূত্রে বেরিয়ে পড়েছে আরও অনেক তথ্য। যা সম্পূর্ণ প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
এদিকে প্রতারণা মামলায় জামিনপ্রাপ্ত তিনজনকে মাগুরা জেলা কারাগারে নেওয়া হয়েছে। তারা হলেন- ঝিনাইদহ জেলা শহরের আরাপপুর মাস্টার পাড়ার মো. আক্তারুজ্জামান ওরফে লিটন, বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ থানার মাধবপাশা গ্রামের মনিরুজ্জামান কামরুল ওরফে জামান ও চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার বলিহুদা গ্রামের মো. আবু তাহের জবা।
মাগুরা সদর থানায় দায়ের করা অন্য একটি প্রতারণার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে তাদের। ওই মামলায় রোববার ঝিনাইদহ জেলা কারাগার থেকে মাগুরা জেলা কারাগারে নেওয়া হয় ওই আসামিদের। নতুন এ মামলাটিরও তদন্ত ভার গ্রহণ করেছে পিবিআই।
মাগুরা থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ফেব্রুয়ারি মাসের ১০ তারিখে মাগুরা মুহাম্মদপুর থানার মোবারেকপুর গ্রামের মৃত রাখাল সরকারের ছেলে রমেশ সরকার (৪২) একটি মামলা দায়ের করেন। প্রাথমিক ভাবে এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয় ওই থানার এসআই (নিরস্ত্র) মো. আনিছুর রহমানকে।
সূত্র মতে, পরবর্তী সময়ে চলতি মাসের ৬ তারিখে তদন্তভার গ্রহণ করেন ঝিনাইদহ পিবিআইয়ের এসআই চন্দ্র শেখর পাল। এর আগে চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি ঢাকার আনন্দ গ্রুপের মহা ব্যবস্থাপক এএইচএম মাহবুব আলাম সরকার ঝিনাইদহ থানায় দুইজনের নাম উল্লেখ করে দেড় কোটি টাকার কয়েন প্রতারণা মামলা দায়ের করেন।
ঝিনাইদহ থানায় দায়ের করা মামলাটি পুলিশের কাছ থেকে তদন্তভার পিবিআই ঝিনাইদহের এসআই মো. তৌহিদুল ইসলামকে দেওয়া হয়। উল্লেখিত তিন আসামিসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেন মর্মে আদালতকে অবহিত করেন তিনি। অভিযোগ করা হয়েছে বিপুল অংকের নগদ টাকা উদ্ধারের বিষয়টি বেমালুম চেপে যান তদন্তকারী কর্মকর্তা।
অভিযানের সময় প্রতারক চক্রের সদস্য মো. আবু তাহের জবা, মো. মনিরুজ্জামান কামরুল ওরফে জামান, আক্তারুজ্জামান আক্তার ওরফে সালাম, মো. শফিকুল ইমলাম স্বপন ও মো. স্বপন ব্যাপারীকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহার করা কয়েনসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, পাসপোর্ট, মোবাইল, সিম কার্ড, চেক বই এবং বিপুল অংকের নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। কিন্তু আদালতে জমা দেওয়া জব্দ তালিকায় নগদ টাকা হিসেবে মাত্র দুই লাখ ৫৮ হাজার ৩৫০ টাকা উদ্ধার দেখানো হয়। পাশাপাশি আসামি গ্রেফতারের চার দিন পরে আদালতে পাঠানোর বিষয়টি নজরে আনেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা।
সংশ্লিষ্ট ঝিনাইদহ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এক আদেশে পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. তৌহিদুল ইসলামকে সশরীরে হাজির হয়ে সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ দেন। আদালতের এ আদেশের বিরুদ্ধে ঝিনাইদহ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ক্রিমিনাল রিভিশন করেন এসআই তৌহিদ। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক শুনানি শেষে তার ওই আবেদন নামঞ্জুর করেন।
শেষ পর্যন্ত সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আগের আদেশ পালন করতে বাধ্য হন এসআই তৌহিদ। আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার পরিবর্তন ঘটে।
৪ মার্চ আমলী আদালত ঝিনাইদহ সদরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এমএ আজহারুল ইসলাম মো. মনিরুজ্জামান কামরুল ওরফে জামান, মো. শফিকুল ইসলাম স্বপন, এবং মো. স্বপন ব্যাপারীকে অন্তবর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন। কিন্তু কারাগার থেকে বের হতে পারলেন না তারা। উদ্ধার করা পাসপোর্টের সূত্র ধরে মাগুরা থানায় দায়ের করা চার লাখ টাকা প্রতারনা করে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগের (অন্য একটি) মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট করা হয় তাদের।
জানা গেছে, পিবিআই যে কয়টি পাসপোর্ট জব্দ করেছে তার মধ্যে মাগুরা থানায় দায়ের করা ওই মামলার বাদী রমেশ সরকারেরটি রয়েছে।
ঝিনাইদহ পিবিআইয়ের পরিদর্শক (প্রশাসন) মোহা. আবদুর রব (নিরস্ত্র) সোমবার সাংবাদিকে জানান, মামলার তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। দুইজন আসামিকে এক দিন করে এবং সবাইকে ঝিনাইদহ জেলা কারাগারের গেটে একদিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জব্দ তালিকায় উদ্ধার করা বিপুল অংকের টাকা নেই মর্মে শুনেছেন।
ঝিনাইদহের দায়ের করা মামলা সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের একজনের কাছে একটি মূল্যবান কয়েন আছে। যা নাসা গবেষণা কাজে ব্যবহার হয়। একজন আমেরিকান ক্রেতা আছে যিনি উক্ত কয়েন ক্রয় করবেন। কিন্তু সরাসরি আমেরিকানরা উক্ত কয়েন ক্রয় করতে পারেন না। তাই আপনার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিক্রয় করা সম্ভব। কয়েনের মূল্য ১ হাজার ২শ কোটি টাকা।
এর পর আনন্দ গ্রুপের চেয়ারম্যান ড. বারীর ব্যাংক একাউন্ট থেকে উত্তোলন করা নগদ দেড় কোটি টাকা বাদীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় প্রতারকরা। প্রতারকরা নিজেরা ক্রেতা বিক্রেতা সেজে ঘটনাটি ঘটায়। চক্রের দুইজন গার্মেন্টস ও প্রতিষ্ঠিত কাপড় ব্যবসায়ী রয়েছেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন