সেনা-পুলিশের গুম, অপহরণ ও ধরপাকড় থেকে বাঁচতে নিজেরাই উদ্যোগ নিচ্ছে মিয়ানমারের নাগরিকেরা।পাড়া-মহল্লায় নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি অতিরিক্ত আলোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে রাস্তায় রাস্তায়। ফলে মিয়ানমারজুড়ে দেখা দিয়েছে লাইট বাল্ব ও ফ্লাশলাইটের ঘাটতি।
মহল্লায় যাতে পুলিশ ঢুকতে না পারে সেজন্য রাস্তার ওপর ফেলে রাখা হচ্ছে গাছের গুঁড়ি। গুম-অপহরণ ও চুরি-ডাকাতি ঠেকাতে পাড়ায় পাড়ায় বসানো হচ্ছে নৈশ পাহারা। প্রতিবেশীদের সুরক্ষায় রাত জেগে টহল দিচ্ছে লাঠিয়াল বাহিনী। খবর আলজাজিরার।
চলতি মাসের শুরুতে রক্তপাতহীন এক অভ্যুত্থানের পর দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা, হাজার হাজার সেনা মোতায়েন ও রাজনৈতিক নেতা ও নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের গ্রেফতার-আটকের মধ্য দিয়ে দেশজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
কিন্তু সব ভয় তুচ্ছ করে বিক্ষোভ-আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে দেশটির গণতন্ত্রকামী জনগণ। দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলমান এই বিক্ষোভ প্রতিদিনই তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠছে।
কিন্তু বিক্ষোভ-আন্দোলন ভেস্তে দিতে এখন নানা ফন্দি করছে সেনা কর্তৃপক্ষ। সন্ধ্যা-সকাল কারফিউয়ের পর রোববার প্রধান দুই শহর ইয়াঙ্গুন ও মান্দালয়সহ সব বড় শহরে নতুন করে শত শত সাঁজোয়া যানের পাশাপাশি হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এসব সাঁজোয়া যান সারা দিন রাজপথে টহল দিচ্ছে।
রাত হলেই পাড়া-মহল্লায় ঢুকে পড়ছে। টার্গেট করা হচ্ছে বিক্ষোভকারী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের। রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারে অভিযান চালিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা ‘অ্যাসিসট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজোনারস’র তথ্য মতে, অভ্যুত্থানের পর এখন পর্যন্ত অন্তত ৪০০ জনকে আটক করা হয়েছে।
এ ছাড়া এসব বন্দিদের শাস্তি আরও কঠিন করতে রোববারই নতুন করে একটি দণ্ডবিধি প্রকাশ করেছে সেনা কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতিদৃষ্টে জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার টম অ্যান্ড্র– বলেছেন, ‘মনে হচ্ছে, জেনারেলরা যেন জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।’
এক টুইটে তিনি আরও বলেন, ‘গভীর রাতে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, পাড়া-মহল্লায় ঢুকে ব্যাপক ধরপাকড় ও জনগণের অধিকার হরণ চলছে ঢালাওভাবে।’নেপিদোর এক ডাক্তারের কণ্ঠেও উঠে এসেছে একই ভাষ্য। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে তিনি বলেছেন, সকাল-সন্ধ্যা কারফিউ চলাকালে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
তিনি বলেন, ‘রাত ৮টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত কারফিউ চলে। কিন্তু এই সময়টাকেই আমাদের মতো মানুষকে গ্রেফতার-আটকের জন্য ব্যবহার করছে পুলিশ ও সেনারা।’ সেনাবাহিনী ও পুলিশের এই গুম, অপহরণ ও ধরপাকড়ে শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শুক্রবার থেকে সেই উদ্বেগ আরও জোরালো হয়।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন