মনোহরদীতে শ্রাবন নামের এক কলেজ ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

মনোহরদীতে শ্রাবন নামের এক কলেজ ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
MostPlay

নরসিংদী প্রতিবেদক : নরসিংদীর মনোহরদীতে এক কলেজছাত্রকে তাঁর বন্ধুরা মুঠোফোনে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও একজন। গতকাল সোমবার উপজেলার একদুয়ারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়–সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আজ মঙ্গলবার এ ঘটনায় নিহত কলেজছাত্রের বাবা থানায় হত্যা মামলা করেছেন।

পিটুনিতে মারা যাওয়া কলেজছাত্রের নাম মো. শ্রাবণ মিয়া (২২)। তিনি মনোহরদী উপজেলার একদুয়ারিয়া ইউনিয়নের কামারআলগী গ্রামের মো. শাহজাহানের ছেলে। তিনি শিবপুরের আবদুল মান্নান ভূঁইয়া কলেজের স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। এ ঘটনায় শ্রাবণের বন্ধু সাখাওয়াত হোসেন আহত হয়েছেন। পুলিশ এ ঘটনায় হওয়া মামলার দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা হলেন মনোহরদীর একদুয়ারিয়ার হৃদয় মিয়া ও মৃদুল মিয়া।

পুলিশ ও নিহতের স্বজনেরা জানান, একদল কিশোর ও তরুণ ৫০০ টাকা করে চাঁদা দিয়ে ২৫ জুলাই শিবপুরের লাখপুর বাজার এলাকার শীতলক্ষা নদীতে নৌকাভ্রমণে যান। ওই সময় কঠোর বিধিনিষেধ নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসনের একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত সেখানে অভিযান চালান। ওই অভিযানে নৌকাটির ৭১ জন কিশোর ও তরুণকে আটক করা হয়। পরে অপ্রাপ্তবয়স্ক ৩১ জনকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং ৪০ জনকে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে শ্রাবণ ও সাখাওয়াত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে চলে আসায় তাঁদের অর্থদণ্ড দিতে হয়নি।

এ অর্থদন্ড ইস্যু করে হৃদয় ও মৃদুলের সঙ্গে শ্রাবণ ও সাখাওয়াতের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এর জের ধরেই গতকাল রাতে শ্রাবণকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার বিকেলে এক বন্ধুর ফোন পাওয়ার পর শ্রাবণ ও সাখাওয়াত একটি মোটরসাইকেলে একদুয়ারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে যান। সেখানে হৃদয়, মৃদুলসহ সাতজনের সঙ্গে শ্রাবণ ও সাখাওয়াতের কথা–কাটাকাটি হয়। উত্তেজনার একপর্যায়ে তাঁরা বাঁশের লাঠি দিয়ে তাঁদের পেটাতে শুরু করেন।

এ সময় শ্রাবণ মোটরসাইকেল দিয়ে চলে যাওয়ার সময় মাটিতে পড়ে যান। পরে তাঁকে উপর্যুপরি মারধর করেন ওই সাতজন। একপর্যায়ে হামলাকারীরা সেখান থেকে চলে যান। পরে রাত সাড়ে আটটার দিকে স্থানীয় ব্যক্তিরা শ্রাবণ ও সাখাওয়াতকে উদ্ধার করে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক শ্রাবণকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে মনোহরদী থানার পুলিশ শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যায় এবং শ্রাবণের লাশের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

হামলায় আহত মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ফোন পেয়ে শ্রাবণের মোটরসাইকেলে করে আমরা দুজন একদুয়ারিয়াতে গিয়েছিলাম। তাদের জরিমানা দিতে হয়েছে অথচ আমাদের দিতে হয়নি, এ কথা বলে আমাদের কাছ থেকে ওই টাকা ফেরত চাইছিল তারা। এ নিয়ে আমাদের সঙ্গে তাদের কথা–কাটাকাটি হয়। পরে আমাদের দুজনকেই উপর্যুপরি মারধর করা হয়।

ঘটনার সময় আমি কোনো রকমে দৌড়ে পালিয়ে আসতে পারায় এখনো বেঁচে আছি।’ এ বিষয়ে নিহত শ্রাবণের বাবা ও মামলার বাদী মো. শাহজাহান বলেন, ‘তুচ্ছ ঘটনায় আমার ছেলেকে তারা পিটিয়ে মেরে ফেলল। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।’ মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আনিচুর রহমান জানান, এই ঘটনায় নিহত শ্রাবণের বাবা মো. শাহজাহানের বাদী হয়ে দুজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪–৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এজাহারভুক্ত দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password