হাইকোর্টে জিতলেন সামিয়া, সব সুযোগ-সুবিধা ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ

হাইকোর্টে জিতলেন সামিয়া, সব সুযোগ-সুবিধা ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ
MostPlay

গবেষণা নিবন্ধে 'চৌর্যবৃত্তির' অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমানের পদাবনতির আদেশ অবৈধ ঘোষণা করে তা বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে এ শিক্ষিকাকে তার আগের পদ অনুযায়ী ভূতাপেক্ষভাবে আর্থিক সুবিধাসহ চাকরিসংক্রান্ত সব সুযোগ-সুবিধা ফিরিয়ে দিতে বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এসংক্রান্ত রুল যথাযথ ঘোষণা করে বৃহস্পতিবার এ রায় দেন বিচারপতি জাফর আহমেদ এবং বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী হাসান এম এস আজিম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী নাইম আহমেদ। রায়ের পর সামিয়া রহমানের আইনজীবী হাসান এম এস আজিম  বলেন, “সামিয়া রহমানকে পদাবনতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে তা বাতিল করেছেন হাইকোর্ট।

ওনাকে চাকরিসংক্রান্ত সব সুবিধা এবং আর্থিক সুবিধা ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। " এ আইনজীবী বলেন, "এই রায়ের মধ্য দিয়ে ‘সত্যের জয়’ হয়েছে। সামিয়া রহমান হারানো সম্মান ফিরে পেয়েছেন বলে বিশ্বাস করি। এই রায়ের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, চৌর্যবৃত্তির যে অভিযোগ উঠেছিল এবং এর জন্য যে সাজা ওনাকে দেওয়া হয়েছিল তা অন্যায়ভাবে দেওয়া হয়েছিল। " ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সামিয়া রহমান এবং অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের যৌথভাবে লেখা ‘আ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার : এ কেইস স্ট্যাডি অব দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ শিরোনামের আট পৃষ্ঠার একটি গবেষণা নিবন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউ’ জার্নালে ছাপা হয়।

সেটি ১৯৮২ সালের শিকাগো ইউনিভার্সিটির জার্নাল ‘ক্রিটিক্যাল ইনকোয়ারি’তে প্রকাশিত ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ নামের একটি নিবন্ধ থেকে প্রায় পাঁচ পৃষ্ঠার ‘হুবহু নকল’ বলে অভিযোগ ওঠে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এক লিখিত অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ওই অভিযোগ জানিয়েছিল ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস। শুধু মিশেল ফুকোই নন, বুদ্ধিজীবী এডওয়ার্ড সাঈদের ‘কালচার অ্যান্ড ইমপেরিয়ালিজম' বই থেকেও সামিয়া ‘নকল করেন’ বলে অভিযোগ ওঠে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরিন আহমেদকে প্রধান করে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। দীর্ঘদিন অনুসন্ধান শেষে গত বছর ওই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়।

ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দুই শিক্ষকের বিষয়ে একাডেমিক অপরাধের শাস্তির সুপারিশ করতে আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহকে আহ্বায়ক করে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে শাস্তির বিষয়ে সুপারিশ করলে গত বছর ২৮ জানুয়ারি সিন্ডিকেটের সভায় পদাবনতির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সামিয়া রহমান গত বছর ৩১ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করেন।

সে রিটের প্রাথমিক শুনানির পর আদালত গত বছরের ৫ সেপ্টম্বর রুলসহ আদেশ দেন। সামিয়া রহমানকে সহযোগী অধ্যাপক থেকে এক ধাপ নামিয়ে দুই বছর পর্যন্ত সহকারী অধ্যাপক রাখার সিদ্ধান্ত কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে। শিক্ষাসচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, সমাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউ জার্নালের সম্পাদনা পর্ষদের সম্পাদকসহ ১২ বিবাদীকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

আর 'চৌর্যবৃত্তির’ অভিযোগ ওঠা ওই গবেষণা নিবন্ধের পর্যালোচনা, চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ অনুসন্ধানকারী কমিটির প্রতিবেদন ও চৌর্যবৃত্তির শাস্তি নির্ধারণে গঠিত ট্রাইব্যুনালের সুপারিশ প্রতিবেদন আকারে তিন সপ্তাহের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। সে ধারাবাহিকতায় রুল শুনানির পর সামিয়া রহমানের পক্ষে রায় দিলেন উচ্চ আদালত। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কি না সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী নাঈম আহমেদ কিছু জানাতে পারেননি।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password