ফজলে রাব্বি : অধিক জনসংখ্যা হওয়ার কারণে বাংলাদেশ এর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তৈরী অনেক কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি এর নিকটে। এতো বিশাল জনসংখ্যা হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে এই জনসংখ্যাকে মানবসম্পদে রুপ দেওয়ার জন্য। এ দেশের জনসংখ্যার চেয়ে জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক বেশি।
বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১,২৭৫জন। জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে অষ্টম স্থানে আছে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তিনি এমন একটি সমাজ চেয়েছিলেন যেখানে কোথাও শোষিত মানুষ থাকবে না, না থাকবে কোন শ্রেনী বৈষম্য। তার এই দুরদর্শী মনোভাব সকলের মনে সামনে এগোনোর প্রেরনা যুগিয়েছিল। বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে এবং ২০৪০ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ ভুমিকা রেখেছিলেন। দেশটি ক্রমান্বয়ে উন্নতি লাভ করছে এবং ইতোমধ্যে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এর লক্ষে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
সরকারের অনেক জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে যা প্রযুক্তির সহায়তায় নতুন উদ্ভাবনের জন্য সুযোগ তৈরি করছে। যার সুফল ইতোমধ্যে মানুষ ভোগ করা শুরু করেছে। এই জাতীয় পরিকল্পনার অধীনে, সরকার অনেক বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করছে যা নিঃসন্দেহে এক শিল্পের সাথে অন্য শিল্পে একাধিক স্তরের সমঝোতা তৈরি করছে। যেটা অবশ্যই নতুন উদ্ভাবন এর জন্য সুফল বয়ে আনছে।
এটা অনেক বড় সফলতা বয়ে নিয়ে আনতে পারে বিভিন্ন ক্ষেত্রে- উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , সরকারের কৌশলগত হস্তক্ষেপ, ডিজিটাল ফাইন্যান্স/ফিনটেক-এ ডিজিটাল কমার্স, এডুটেক এবং এগ্রিটেক-এ বাজারের সুযোগগুলিকে যথেষ্ট উন্নীত করবে, প্রসারিত করবে এবং নতুন উদ্ভাবন তৈরি করবে। এই প্রতিটি ক্ষেত্রে, স্টার্ট-আপগুলি প্রধান ভূমিকায় থাকতে পারে, ব্যবসা থেকে ভিন্ন গ্রাহক হতে পারে। স্টার্ট-আপগুলি ইতিমধ্যেই এই দেশের দীর্ঘমেয়াদী রূপ নিচ্ছে। আমরা পাঠাও এর দিকে দেখতে পারি, ‘পাঠাও’ আমাদের সহজ যাতায়াতের একটি প্রবণতা তৈরি করেছে ।
প্রধাণ শহরগুলোতে দক্ষ যুবকরা এই পাঠাও এর রাইডার। পাঠাও দ্রুত, সাশ্রয়ী এবং সুবিধাজনক যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করেছে। বাংলাদেশের স্টার্ট-আপ স্কিমের মধ্যে ফ্ল্যাগশিপ স্টার্ট-আপগুলি একসাথে ১.৫ মিলিয়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে, এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কে সমর্থন করেছে এবং ২৪৩ মিলিয়ন বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ এনেছে। বাংলাদেশের নার্সিং প্রকল্পে একটি সহযোগীও রয়েছে যেটি সবেমাত্র তার শুরুর দিকেই ঈর্শনীয় ফলাফল দেখিয়েছে। শুধু আমাদের বিশ্বাস করতে হবে উচ্চতর নীতির সক্ষমতা, জনসাধারণের এবং ব্যক্তিগত বিনিয়োগ, শক্তিশালী অবকাঠামো এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এর উপর।
বর্তমানে সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে পদ্মা সেতু নির্মাণ। সরকার আশাবাদী যে পদ্মা সেতু মোট দেশজ উৎপাদন ১.৫-২% বৃদ্ধি করতে পারবে। প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা- সমস্ত ইস্পাত ও বোর পাইল ড্রাইভ এবং নদী পিয়ার কলাম নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। সমস্ত ইস্পাত স্প্যান গুলো ৪২ জোড়ায় নির্মিত। রেলওয়ের ডেক স্ল্যাব, সমস্ত স্প্যানগুলিতে ঢালাই ও স্থাপন করা সম্পন্ন হয়েছে। ৪০০ কিলো ভোল্ট পাওয়ার ট্রান্সমিশন প্ল্যাটফর্ম, গ্যাস পাইপলাইন এবং লোয়ার ডেক ও ফুটপাত নির্মাণের কাজ চলছে।
পদ্মা বহুমুখী সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম এর অর্থনৈতিক উন্নত সাধিত করবে কারণ দক্ষিণ ভৌগলিক অঞ্চলের সাথে অন্য কয়েকটি দেশের সাথে যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে একই সাথে সেসব দেশের সাথে যোগাযোগ, ব্যবসা, শিল্প, পর্যটন এছাড়াও আর অন্যান্য খাতে বিভিন্ন ভাবে অবদান রাখছে যা পদ্মা সেতু নির্মানের একটি বড় সুফল বয়ে নিয়ে আসবে। বাংলাদেশী মুদ্রা যার মূল্য প্রায় ৩০১.৯৩ বিলিয়ন টাকা যা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্প। ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি দেশের বিভিন্ন জেলাগুলির পাশাপাশি দক্ষিণের ২১ টি জেলার সাথে সরাসরি সংযুক্ত করেছে।
এর ফলে এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হতে পারে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানার প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি হবার ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। পদ্মা সেতু চালু হলে এক সময়ের অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চল আবার রেল যোগাযোগের অনুকুলে ফিরে আসবে। আরেকটি বড় প্রকল্প চলমান, মেট্রোরেল প্রকল্প। এটি ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে এবং আমাদের মূল্যবান সময় বাঁচাবে।
মেট্রো রেল প্রকল্পটি বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া একটি খুব সময় উপযোগী উদ্যোগ। এই প্রকল্পটি ঢাকা শহরের যানজটের সমস্যা কমিয়ে দেবে। এ মেট্রোরেলের লাইনের দৈর্ঘ্য হবে ২০.১ কিলোমিটার। এই প্রকল্পের আনুমানিক খরচ নির্ধারন করা হয়েছে ২.৮ বিলিয়ন ডলার এবং প্রকল্পটি ২০২১ সালে শেষ হবার কথা থাকলেও কিছু জটিলতার কারনে এবং কোভিড-১৯ এ কাজের ধীরগতির জন্য তা শেষ হতে কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে। রেললাইনের কাজে প্রকৌশলী, কর্মকর্তা, কর্মচারী সবাই স্বতস্ফুর্ত হয়ে কাজে অংশগ্রহণ করে এবং সূক্ষাতিসূক্ষ ভাবে তারা প্রতিটা জিনিসের সঠিক পরিমাপ এবং পর্যবেক্ষন করছেন।
কোভিড-১৯ এ যখন সারা দেশ ছুটিতে তখন তারা চব্বিশ ঘন্টা ব্যস্ত থেকে এ কাজ এগিয়ে নিয়ে গেছেন।ট্রেনের কর্মক্ষমতা পরীক্ষার সময় ট্রেনটি প্রথমবারের মতো উত্তরা থেকে আগারগাঁওয়ে পৌঁছায় ২৯ নভেম্বর , ওইদিন সকাল ১১ টায় মেট্রোরেল আগারগাও স্টেশনে এসে পৌঁছছায়ট্রেনটীর গতিবেগ ছিল প্রায় ১০০ কিঃমি; গত ২৯শে আগস্ট ২০২১ সালে ভায়াডাক্টে পারফরম্যান্স পরীক্ষার উদ্বোধন করার সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা করেন যে মেট্রোরেলের প্রথম ধাপ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
সরকার এ বড় প্রকল্প গুলো ছাড়াও এলিভেটেড এক্সপ্রেস, কর্ণফুলী টানেল, ঢাকা চিটাগাং হাইস্পিড রেলওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ আরও অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছে। এসব উন্নয়ন দৃশ্যমান হলে বাংলাদেশের বর্তমান চিত্র অনেকাংশে উন্নত হবে। আর সেই সঙ্গে আগামীতে বাংলাদেশকে একটি সুন্দর, বসবাসের উপযোগী শহর হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়নে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বেড়েছে ৬.৯৪ শতাংশ। ২০৩০ সালের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়াবে ১,৩২৪ বিলিয়ন এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ৩,০৮৪ বিলিয়ন। সব কিছুই সম্ভব হবে যদি দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় থাকে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন