নওগাঁর রানীনগরে এক গৃহবধূর মাথার চুল কেটে স্বামীর বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ মিলেছে। গৃহবধূর দাবি, যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন তিনি। ঘটনার পর থানার দারস্থ হলেও থানা পুলিশ মামলা নেয়নি।
নিরুপায় হয়ে নওগাঁ আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের করেছেন ওই গৃহবধূ। আদালতে মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার মধুপুর গ্রামের রেজাউল ইসলামের ছেলে ফিরোজ হোসেন এর সাথে বিয়ে হয় পাশ্ববর্তী ভান্ডারপুর দিঘীরপাড় গ্রামের হোসেন আলীর মেয়ে হাছিনা বেগম (২৬) এর। বিয়ের দিন জামাইকে চুক্তি অনুযায়ী ব্যবসা করার জন্য ১ লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে দেয় হাসিনার বাবা। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই ফিরোজ হোসেন আরও ১ লাখ টাকা এনে দেয়ার জন্য তার স্ত্রী হাছিনা বেগমকে থাকে। হাসিনা দাবি মেনে না নেওয়ায় স্বামী ও স্বামীর পরিবারের লোকজন তার ওপর নির্যাতন চালাতে থাকে নানা সময়। তবুও নির্যাতন সহ্য করে ঘর সংসার করে আসছিল।
নির্যাতনের এক পর্যায়ে চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি স্বামী ফিরোজ হোসেন, তার মামা ফজলু হোসেন এবং খালা শেফালী বেগম এর প্ররোচনায় তাদের সাথে নিয়ে আবার যৌতুকের ১ লাখ টাকা এনে দেয়ার জন্য হাছিনা বেগমকে চাপ প্রয়োগ করে। নির্যাতনের স্বীকার গৃহবধু হাছিনা বেগম বলেন, 'গত ২২শে ফেব্রুয়ারি আমার স্বামীসহ তার মামা ফজলু এবং খালা শেফালী’র প্ররোচনায় বেল্ট দিয়ে আমার সারা শরীরে মারপিট করে। আমি চিৎকার করতে থাকলে তারা মুখে কাপড় গুজে দিয়ে আবারও নির্যাতন করতে তাকে। নির্যাতনের এক পর্যায় প্রায় অজ্ঞান হয়ে পড়লে স্বামীসহ মামা ও খালার নির্দেশে আমার মাথার চুল কাচি দিয়ে কেটে ফেলে। আবার মাথার কোথাও কোথাও প্রায় নেড়ে করে দেয়া হয় এবং বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। তার একদিন পর ২৩ ফেব্রুয়ারি থানায় পরিবারের লোকজন মামলা করতে গেলে কোনো মামলা নেয়নি।
গৃহবধুর বাবা হোসেন আলী বলেন, তিনি একজন দিনমজুর। অনেক কষ্টে করে মেয়েকে বিয়ে ও জামাইয়ের চাহিদামতো যৌতুক দিয়েছিলেন। এরপরও বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই মেয়েকে আবারও যৌতুকের জন্য চাপ ও নিযার্তন করে আসছিল। তাই নিরুপায় হয়ে আদালতে মামলা করা হয়েছে। ঘটনার পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি সকালে গৃহবধু হাছিনা বেগম রানীনগর থানায় মামলা করতে গেলে থানা পুলিশ মামলা বা অভিযোগ নেইনি। অবশেষে ২৮ ফেব্রুয়ারি নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইবুনাল আদালতে মামলা দায়ের করেন তিনি।
রাণীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিন আকন্দ বলেন, ওই গৃহবধুসহ পরিবারের কেউ এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ নিয়ে আসে নাই। তারা যদি থানায় অভিযোগ নিয়ে আসতো তা হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হতো। আর আদালতে মামলা করেছেন এ বিষয়ে কিছুই জানা নেই। আদালত থেকে কোনো নির্দেশনা বা তদন্ত করার জন্য কোনো চিঠিও পাইনি। নির্দেশ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন