রোদ বৃষ্টি সামাল দিতে পলিথিন ঝুলিয়ে রাখা ছোট একটি মাটির ঘর। সেই ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাস করেন সৈয়দ নূর (৩৬) নামে একজন টমটম (ইজিবাইক) চালক। তিনি ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিনে স্ত্রীকে দিয়েছেন ২২ ভরি ওজনের স্বর্ণের হার। যার মূল্য ১৪ লাখ টাকা।
সৈয়দ নূরের বাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালী গাজিপাড়া এলাকায়। হতদরিদ্রের আসল চেহারা ধরা পড়েছে বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের অভিযানে। বিশাল ইয়াবা কারবারের হোতা তিনি। আলোচিত মাটির ঘরেই মিলেছে ১০ হাজার ইয়াবা।
জানা গেছে, দুই সপ্তাহ আগে টেকনাফের বড় ইয়াবা ব্যবসায়ী নুর হাফেজ বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। সে সময় পাওয়া কিছু তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের নজর পড়ে স্থানীয় টমটম চালক সৈয়দ নুরের দিকে। তবে তিনি বড় মাপের ইয়াবা ব্যবসায়ী এমন ধার না মেলেনি। সৈয়দ নুর বসবাস করেন একটি ছোট্ট মাটির ভাঙাচোরা ঘরে। কথিত শ্রমজীবীর সেই মাটির ঘরেই সন্দেহবশত পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১০ হাজার ইয়াবার চালানসহ সৈয়দ নুরকে হাতেনাতে আটক করে। এরপর ঘরের মালামাল তল্লাশি করতে গিয়ে পুলিশের নজরে আসে আকর্ষণীয় একটি স্বর্ণের হার।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সৈয়দ নুর জানান, বছরের প্রথম দিনে স্ত্রীকে উপহার দিয়েছেন ২২ ভরি ওজনের স্বর্ণের হারটি। ঘরেই পাওয়া যায় স্বর্ণালঙ্কার কেনার রশিদ। মূল্য দেখা যায় ১৪ লাখ টাকা। পুলিশ টাকার রশিদসহ হারটি জব্দ করেছে।
টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, সীমান্তে গত দুই বছর ধরে ইয়াবা আটকের অভিযান চালাচ্ছি। এবারের ঘটনা পুরোটাই ভিন্ন। আটক ইয়াবা ব্যবসায়ী সৈয়দ নূরকে সন্দেহ করার মতো কোন ধারণাই ছিল না। দিনের আলোয় তিনি একজন টমটম চালক। প্রত্যন্ত রঙ্গিখালী গাজিপাড়ার বাসিন্দা সৈয়দ নুর সম্পর্কে তথ্য মেলে ইয়াবা ডন নুর হাফেজ বন্দুকযুদ্ধে নিহত হবার পর পরই। এখন নিশ্চিত হওয়া গেছে নুর একজন বড় মাপের ইয়াবা ব্যবসায়ী।
ইয়াবা ব্যবসায়ী সৈয়দ নূরের গ্রেপ্তারসহ অবাক করা কাহিনী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তুলে ধরেছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন। তিনি জানান, ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এখন কৌশল পরিবর্তন করেছেন। তারা প্রকাশ্যে দীনহীন জীবনযাপন করছেন। আগের ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এলাকায় আলিশান বাড়ি নির্মাণ করে সবার নজরে পড়েছিলেন। সেসব বাড়ি অভিযানে ভেঙে দেয়ার কারণে এখন তারা মাটি ও খড়ের ভাঙাচোরা ঘরে বাসবাসের কৌশল নিয়েছেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন