স্বাধীন মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, যশোর থেকে:- আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শাহীন চাকলাদার বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে যশোর-৬ সংসদীয় আসনটি দুই যুগ ধরে ক্ষমতাসীনদের দখলে। ১৯৯৬ সাল থেকে এ আসনটি আওয়ামীলীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিণত হয়েছে। সদ্য শেষ হওয়া উপনির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহীন চাকলাদারকে বেছে নিয়েছে এ জনপদের ভোটাররা।
গত ২১ জানুয়ারি ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুর পর যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনটি জাতীয় সংসদে ২৮ জানুয়ারি শূন্য ঘোষণা করা হয়। তার মৃত্যুর পর উপজেলা আওয়ামীলীগকে সুসংগঠিত করতে কেশবপুরের মাটিতে শাহীন চাকলাদারের বিকল্প নেই- এমনটিই মনে করছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগ। তাই গত ১১ ফেব্রুয়ারি কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় উপস্থিত সকলের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের জন্য শাহীন চাকলাদারের নাম চুড়ান্ত করে হাইকমান্ডে লিখিত প্রস্তাব করেন।
কেশবপুরের রাজনৈতিক পেক্ষাপট বিবেচনা করে ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের সংসদীয় বোর্ড ও সংগঠনের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভায় যশোর-৬ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে যশোর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারকে মনোনয়ন দিয়ে নির্বাচনের জন্য নৌকার প্রার্থী হিসাবে মনোনীত করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের কার্যালয় থেকে এ আসনে ২৯ মার্চ উপনির্বাচনের দিন ধার্য করে ১৬ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণা করা হয়। বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে ২১ মার্চ এ আসনটির নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এ মাসের ৪ জুলাই নির্বাচন কমিশন থেকে ফের ১৪ জুলাই নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিলে শাহীন চাকলাদার ১ লাখ ২ হাজার ৩ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
তবে ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত যশোর-৬ (কেশবপুর) আসন ছিল সাদেক পরিবারের হাতের মুঠোয়। শুধুমাত্র এই সময়ের মধ্যে ২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৬ (অভয়নগর, কেশবপুর উপজেলা ও মনিরামপুরের মনোহরপুর ইউনিয়ন) আসন থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ আব্দুল ওহাব বিজয়ী হয়ে হুইপ নির্বাচিত হন।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ইসমাত আরা সাদেক জয়লাভ করেন।
এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ইসমাত আরা সাদেক বিজয়ী হয়ে সংসদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১২ জানুয়ারি, ২০১৪ তারিখে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হলে তাকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে ১৫ জানুয়ারি, ২০১৪ তারিখ থেকে তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।
২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৬ (অভয়নগর, কেশবপুর উপজেলা ও মনিরামপুরের মনোহরপুর ইউনিয়ন) আসন থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ আব্দুল ওহাব বিজয়ী হয়ে হুইপ নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এ.এস.এইচ.কে সাদেক। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হিসেবে শপথ নেন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন।
এ.এস.এইচ.কে সাদেক ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি সরকারি হিসাব এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন।
১৯৯৬ সালের পূর্বে এই আসন থেকে ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন জয়ী হন। ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হন জাতীয় পার্টির আবদুল কাদের। ১৯৮৬ সালে কেশবপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হালিম দলীয় মনোনয়ন লাভে ব্যর্থ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বিজয়ী হন এবং ১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থী গাজী এরশাদ আলী।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন