বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ ‘খুন হননি, আত্মহত্যা করেছেন’ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের এমন তথ্যের বিষয়ে জানতে সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের সঙ্গে দেখা করে দুই ঘণ্টা আলোচনা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। পরে সহপাঠীরা বলেছেন, আমরা অনেকটা সন্তুষ্ট। আলামত দেখার পর তা প্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে। তবে কিছু জায়গায় হয়তো গ্যাপ আছে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন ফারদিনের সহপাঠীরা। বৈঠক শেষে শিক্ষার্থীদের পক্ষে তাহমিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, তারা আলামতগুলো আমাদের দেখিয়েছেন। আলামতগুলো আমাদের কাছে প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়েছে। তারা এগুলোর পেছনে বেশ এফোর্ট দিয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় হয়তো কিছু গ্যাপ আছে। আশা করি সামনে এগুলো নিয়ে তারা আরো অগ্রসর হবে। এ ব্যাপারে তারা আমাদের একটা আশ্বাসও দিয়েছে।
ডিবির ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট কি না জানতে চাইলে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, তাদের সহযোগিতায় আমরা অনেকটা সন্তুষ্ট। তারা অনেক কাজ করছেন। আমরা চূড়ান্ত কিছু বলছি না। বুয়েটে ফিরে সবার সাথে আলোচনা করে আমরা বিস্তারিত বলব। এদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিএমপি) ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেন, ফারদিনের মৃত্যুর ঘটনাটি আমরা তদন্ত করেছি।
তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আমরা তার মানসিক স্বাস্থ্যের কথা বলেছি। বান্ধবী বুশরাকে রামপুরায় নামিয়ে দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর ব্যাখ্যা দিয়েছি। কিন্তু তার সঙ্গে কেউ ছিলেন না, তিনি একা একাই বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছেন। হারুন অর রশীদ বলেন, যাত্রাবাড়ী থেকে লেগুনায় করে ডেমরার সুলতানা কামাল সেতুর একপাশে তিনি নামেন। কিন্তু তিনি চনপাড়ার দিকে যাননি, সেখানে কোনো ঘটনাও ঘটেনি। ঘটনার ৩৮ দিন তদন্ত শেষে এটিকে আমরা সুইসাইডাল ঘটনা বলেছি।
এ বিষয়ে বুয়েটের ৪০ জন শিক্ষার্থী এসে তিন ঘণ্টা আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা তার পরিবার, বন্ধু-আত্মীয়দের বলেছি, ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন। এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিবি কার্যালয়ের সামনে বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিনের বাবা বলেছেন, আমার ছেলে আত্মহত্যা করেনি, তাকে পরিকল্পিতভাবেই হত্যা করা হয়েছে। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই। পুলিশের এই তদন্ত বিশ্বাস করি না।
গত ৪ নভেম্বর রাজধানীর রামপুরা পুলিশ বক্সের সামনে বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরাকে নামিয়ে দেওয়ার পর নিখোঁজ হন ফারদিন। এ ঘটনায় রামপুরা থানায় একটি নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরি করেন ফারদিনের বাবা কাজী নুর উদ্দিন রানা। ৭ নভেম্বর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাঁর মৃতদেহ পায় নৌ পুলিশ। তাঁর পরিবার ও সহপাঠীরা দাবি করেন, ফারদিনকে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকও তাঁকে হত্যার কথাই বলেন। ঘটনাটি উদ্ঘাটনের জন্য মাঠে নামে ডিবি পুলিশ ও র্যাব।
দুই তদন্ত সংস্থার বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় তাঁর বান্ধবী বুশরাকে। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে নানামুখী খবর এবং পরিবারের সুষ্ঠু তদন্তের দাবির মধ্যে গতকাল বুধবার দুপুরে ডিবির পক্ষ থেকে প্রথমে সংবাদ সম্মেলন করে ফারদিনের আত্মহত্যার কথা জানানো হয়। পরে সন্ধ্যায় র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে একই তথ্য জানায়।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন