কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গৃহবধূকে পিটিয়ে ঘরছাড়া করল ভাসুর

কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গৃহবধূকে পিটিয়ে ঘরছাড়া করল ভাসুর

ফেনীতে ভাসুরের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এক গৃহবধুকে সীমাহীন নির্যাতন চালিয়ে ঘরবাড়ি ছাড়া করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।নির্যাতিত গৃহবধু শনিবার (১৪ মার্চ) সকাল ১১টায় শহরের ট্রাংক রোডস্থ ফেনী প্রেসক্লাবের অস্থায়ী কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে ভাসুরের অত্যাচারের কথা তুলে ধরে স্বামীর সংসারে ফিরে যাবার জন্য সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ফেনী সদর আসনের এমপি নিজাম উদ্দীন হাজারী, পুলিশ সুপার খোন্দকার নুরুন্নবী ও বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহযোগিতা কামনা করেছেন।

লিখিত অভিযোগে ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়া ইউনিয়নের মধ্যম চাঁদপুর গ্রামের মো. ইলিয়াসের মেয়ে সাজনীন আক্তার জানান, ২০১৩ সালের ২৫ জানুয়ারি মুসলিম নিয়ম-কানুনের ভিত্তিতে ফরহাদনগর ইউনিয়নের চরকালিদাস গ্রামের মৃত মো. নুরুজ্জামানের ছেলে বাহরাইন প্রবাসী মোশারফ হোসেনের সাথে ৬ লাখ টাকা দেনমোহরে বিবাহ হয় তার। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই তার ভাসুর, জা, ননদ ও ননশরা বিভিন্ন অজুহাতে অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে। একপর্যায়ে স্বামী তাকে বাহরাইন নিয়ে যায়। সেখানে তাদের সুখের সংসারে সাফওয়ান নামে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। বর্তমানে তার বয়স ৭ বছর।

এদিকে শ্বশুরের মৃত্যুর খবর শুনে গত বছরের ১৫ মে তারা দেশে ফিরে আসে। ২০ মে তাকে কিছু না জানিয়ে মোশাররফ হঠাৎ বাহরাইন চলে যায়। সে চলে যাবার ২/১ দিন পর থেকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ভাসুর মোহাম্মদ উল্লাহ নির্যাতন চালাতে শুরু করে।সহযোগি হিসেবে দেবর আমিরুজ্জামান সোহেল, বড় জা সখিনা বেগম লাকি ও ননশ নুরের নাহার ঐক্যবদ্ধ হয়ে সাজনীনকে ঘরবাড়ি ও স্বামীর সংসার ছাড়া করার উদ্দেশ্যে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। ভাসুর মোহাম্মদ উল্লাহ ও দেবর সোহেল তাকে কয়েকবার শ্লীলতাহানি করলেও মান সম্মানের ভয়ে সে কাউকে তা জানায়নি।

একপর্যায়ে তার ভাসুর মোহাম্মদ উল্লাহ তার স্বামী মোশাররফ হোসেনের নামে ভুয়া স্বাক্ষরে লেমুয়া ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে তারিখ বিহীন তালাকনামা প্রেরণ করে। গত বছরের ২৪ জুন চেয়ারম্যান তা গ্রহণ করেন মর্মে স্বাক্ষর রয়েছে। ফলে সে নিরুপায় হয়ে একই বছরের ৬ জুলাই ফেনী মডেল থানায় জিডি নং ৩৩০ আনয়ন করে।

সর্বশেষ ৭ জুলাই রাতে তাকে ব্যাপক মারধর করে উল্লিখিতরা। ৮ জুলাই সকালে অভিযুক্তরা সাজনীনের বাবা মো. ইলিয়াস ও চাচা গিয়াস উদ্দীনকে ডেকে নিয়ে আটকে রাখে। পরে বাবা ও চাচার সাথে তাকে ও তার ছেলেকে গলাধাক্কা দিয়ে এক কাপড়ে বের করে দেয়। এ ঘটনার পর থেকে স্বামী মোশাররফও বড় ভাই মোহাম্মদ উল্লাহর ভয়ে স্ত্রী, সন্তানের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে একমাত্র ছেলেকে নিয়ে সে বোনের বাসায় আশ্রয় নিয়েও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

এ বিষয়ে গত বছরের ১৫ অক্টোবর ফরহাদনগর ইউপি চেয়ারম্যান টিপুর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পায়নি ভিকটিম। ন্যায়বিচারের আশায় গত ২ ফেব্রুয়ারি ফেনীর পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করার পর প্রতিপক্ষ মা ছেলেকে প্রাণে মেরে ফেলার এবং সাজনীনের পরিবারকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর হুমকি দেয়।

এতেও কাজ না হওয়ায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি তাদের পুরো পরিবারকে আসামী করে ফেনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন ভাসুর মোহাম্মদ উল্লাহ। সাজনীনের প্রশ্ন তার একমাত্র ছেলের কি অপরাধ? অবুঝ শিশুটি বার বার পাপা, পাপা বলে ডাকতে থাকে। ফিরে যেতে চায় তার বাবার কোলে। কিন্তু সন্তানের এ আহাজারি তার বাবার কাছে পৌঁছে না। তার সাজানো সংসার যারা তছনছ করে দিয়েছে তিনি তাদের কঠোর শাস্তি দাবী করেন। ফিরে পেতে চান তার স্বামী ও হারানো সংসার।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password