দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্তদের টিকা নিয়ে প্রশ্ন বেশি

দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্তদের টিকা নিয়ে প্রশ্ন বেশি
MostPlay

করোনার টিকা নিয়ে মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন। স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ নম্বরে ফোন করে মানুষ এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে চান। এ পর্যন্ত আসা প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন এসেছে দীর্ঘমেয়াদি রোগকে ঘিরে। ২২ শতাংশ প্রশ্নকারী জানতে চেয়েছেন, দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির টিকা নেওয়া ঠিক হবে কি না?

কে টিকা নেবেন, কে টিকা নেবেন না, টিকার ক্ষেত্রে কে অগ্রাধিকার পাচ্ছেন, নিবন্ধনের প্রক্রিয়া, টিকার কার্যকারিতা ও টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে মানুষ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কল সেন্টার স্বাস্থ্য বাতায়নে নিয়মিত ফোন করছেন। কল সেন্টারে কর্মরত চিকিৎসকেরা এসব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন। সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা এই কল সেন্টারে ফোন করার সুযোগ আছে। তবে মানুষ সঠিক উত্তর পাচ্ছেন কি না বা মানুষ উত্তর পেয়ে সন্তুষ্ট কি না, তা নিয়ে অবশ্য কোনো মূল্যায়ন হয়নি।

বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্য বাতায়নের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দীন আহমেদ বিডিটাইপ কে বলেন, গণটিকাদান শুরু হওয়ার সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয় টিকা সম্পর্কিত মানুষের জিজ্ঞাসার উত্তর দেওয়ার জন্য। প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ মানুষ প্রশ্ন করছেন। শুরুর দিকে মানুষ নিবন্ধন বিষয়ে বেশি জানতে চাইতেন।

জাতীয় টেলিমেডিসিন সেবার কল সেন্টারের নাম ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩’। ২০১৫ সালে এর যাত্রা শুরু হয়। গত বছর দেশে করোনা সংক্রমণের প্রায় শুরু থেকে স্বাস্থ্য বাতায়ন দেশের মানুষকে করোনার জন্য টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে আসছে। মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ কোটি ২৬ লাখ কলের মাধ্যমে মানুষ করোনা সম্পর্কিত সেবা নিয়েছেন। করোনার সংক্রমণের সময় মানুষ যখন হাসপাতালের সেবা থেকে দূরে ছিলেন, তখন অনেকের কাছে বড় সহায় হয়ে দাঁড়ায় স্বাস্থ্য বাতায়ন। বিশ্বের বেশ কিছু দেশে করোনাকালে টেলিমেডিসিন সেবা বেড়েছে। চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি ১৬২৬৩ থেকে এখন করোনার টিকাবিষয়ক পরামর্শ পাওয়া যাচ্ছে। এর বাইরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রচারিত বিজ্ঞাপনে টিকা নিয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

জাতীয় টেলিমেডিসিন সেবার কল সেন্টারের নাম ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩’। ২০১৫ সালে এর যাত্রা শুরু হয়। গত বছর দেশে করোনা সংক্রমণের প্রায় শুরু থেকে স্বাস্থ্য বাতায়ন দেশের মানুষকে করোনার জন্য টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে আসছে। মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ কোটি ২৬ লাখ কলের মাধ্যমে মানুষ করোনা সম্পর্কিত সেবা নিয়েছেন।

স্বাস্থ্য বাতায়নের কর্মকর্তারা জানান, ২৭ জানুয়ারি থেকে ১৬২৬৩–তে টিকাবিষয়ক ফোন আসতে থাকে। ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ৯৭৭টি ফোন এসেছে। ইতিমধ্যে এসব ফোনে আসা প্রশ্নের একটি পর্যালোচনা তাঁরা করেছেন।

স্বাস্থ্য বাতায়নে আসা প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে মতামত জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বিডিটাইপ কে বলেন, ‘করোনার টিকাবিষয়ক যেসব বিজ্ঞাপন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে, তাতে অনেক প্রশ্নের উত্তর আছে। ১৬২৬৩–তে আসা প্রশ্ন সম্পর্কে আমরা এখনো ওয়াকিবহাল নই। আমরা এসব প্রশ্ন জেনে জনগণকে উত্তর জানানোর পদক্ষেপ নেব।’

টিকা নিয়ে প্রশ্ন

২২ শতাংশ বা সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন হয়েছে দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি টিকা নেবেন কি না, তা জানার জন্য। যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তি, অ্যালার্জির সমস্যা আছে—এমন ব্যক্তির টিকা নেওয়া উচিত হবে কি না? করোনা চিকিৎসার অংশ হিসেবে প্লাজমা থেরাপি নিয়েছেন, এমন ব্যক্তি টিকা নিতে পারবেন কি না; অথবা কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি নিচ্ছেন—তাঁরা টিকা নিতে পারবেন কি না। কেউ কেউ জানতে চেয়েছেন দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগা ব্যক্তি টিকা নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন কি না?

এ ব্যাপারে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর বলেন, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তি টিকা নেবেন। অন্য টিকায় অ্যালার্জি দেখা গিয়েছিল, এমন হলে টিকা নেওয়া থেকে আপাতত বিবরত থাকবেন। প্লাজমা থেরাপি নিয়েছেন, এমন ব্যক্তিও টিকা নেওয়া থেকে আপাতত বিরত থাকবেন। কেমোথেরাপি নিচ্ছেন, এমন ব্যক্তি টিকা নেবেন না। রেডিওথেরাপি নিচ্ছেন, এমন ব্যক্তির টিকা নেওয়ায় সমস্যা নেই। তবে কোনো সন্দেহ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তি টিকা নেবেন। অন্য টিকায় অ্যালার্জি দেখা গিয়েছিল, এমন হলে টিকা নেওয়া থেকে আপাতত বিবরত থাকবেন। প্লাজমা থেরাপি নিয়েছেন, এমন ব্যক্তিও টিকা নেওয়া থেকে আপাতত বিরত থাকবেন।

এ এস এম আলমগীর, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, আইইডিসিআর

 

কে টিকা পাবে আর কে পাবে না বা অগ্রাধিকার পাওয়া জনগোষ্ঠীর বিষয়ে প্রশ্ন এসেছে ২১ শতাংশ। প্রশ্ন ছিল এমন: কবে থেকে সব নাগরিক টিকা পাবেন, ৪০ বছরের কম বয়সীরা টিকা পাবেন না কেন, ১৮ বছরের কম বয়সীরা টিকা নিলে সমস্যা কী, অগ্রাধিকার পাওয়া জনগোষ্ঠীর তালিকা কীভাবে প্রস্তুত হলো, গর্ভবতী বা দুগ্ধ দানকারী মা টিকা নিলে কেন অসুবিধা হবে?

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, সরকার সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষকে টিকা দিতে চায়। অগ্রাধিকার পাওয়া জনগোষ্ঠীর তালিকা হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসরণ করে ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে। ১৮ বছরের কম বয়সী এবং গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মায়েদের ওপর করোনা টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হয়নি। তাঁদের ওপর এই টিকার প্রভাব বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ধারণা নেই। তাই এঁদের করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে না।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password