বিপর্যয়ের পথে যুক্তরাষ্ট্র বাইডেনের শপথের আগেই

বিপর্যয়ের পথে যুক্তরাষ্ট্র বাইডেনের শপথের আগেই
MostPlay

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অগ্রাধিকারভিত্তিতে করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ন্ত্রণের অঙ্গীকার করেছেন। একই সঙ্গে দেশটিতে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার রোধে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখতে আরও বেশি আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। কিন্তু আগামী ২০ জানুয়ারি ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের শপথ নেওয়ার আগে দেশটিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ 'আকাশচুম্বী' হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর তাই এ সময়ের মধ্যেই দ্বিতীয় দফায় জেঁকে বসা করোনায় দেশটিতে বড় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, এএফপি বার্তা সংস্থা 'রয়টার্স'র পরিসংখ্যান বলছে, বাইডেনের শপথের আগে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে আরও ৮০ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হতে পারে এবং প্রাণহানি ঘটতে পারে আরও ৭০ হাজার মানুষের। অর্থাৎ, আগামী দুই মাসে দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত প্রায় ৮০ শতাংশ এবং মৃতু্য ২৯ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।

যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছে এক কোটি ১০ লাখ ৬৪ হাজারের বেশি মানুষ এবং মৃতু্য ছাড়িয়েছে দুই লাখ ৪৯ হাজার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার এই প্রভাব কমিয়ে আনার একমাত্র উপায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নেতৃত্বাধীন প্রশাশনের নেওয়া কৌশলের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ, আরও কঠোর স্বাস্থ্যবিধি ও সমন্বিত পদক্ষেপ চালু করা। এছাড়া শীতকালীন আবহাওয়া করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলাকে আরও বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে। ইয়েল ইউনিভার্সিটির মহামারিবিষয়ক অধ্যাপক ও স্বাস্থ্য সেবাকর্মী গ্রেগ গনসালভেস বলেন, 'এই মহামারি গত বসন্তের চেয়ে খারাপ হতে যাচ্ছে।' এদিকে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই হোয়াইট হাউসের করোনাভাইরাস টাস্কফোর্সের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের তেমন সংশ্লিষ্টতা দেখা যাচ্ছে না। এর পরিবর্তে তিনি পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ওপরই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। ট্রাম্প থেকে শুরু করে তার পরিবার; এমনকি উপদেষ্টারা পর্যন্ত উঠেপড়ে লেগে আছেন প্রেসিডেন্সি বাঁচাতে।

নির্বাচনের আগে হোয়াইট হাউসের চিফ অফ স্টাফ মার্ক মিডৌস 'স্টেট অব দি ইউনিয়নে' বলেছিলেন, মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না, বরং এর প্রতিকারের পথে তারা এগোবেন। আর এখন নির্বাচনের পর ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসকে মহামারির ব্যাপারে আগের চেয়েও আরও বেশি উদাসীন মনে হচ্ছে। নির্বাচনের সময় থেকে যুক্তরাষ্ট্রে মহামারি পরিস্থিতি বিস্ফোরক হয়ে উঠেছে। দেশটিতে সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে, তাতে চিকিৎসকরাও উদ্বিগ্ন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কায় আছেন তারা। এই ধারা চলতে থাকলে জানুয়ারিতে মেয়াদ শেষের আগে ট্রাম্প দেশকে স্বাস্থ্যের দিক থেকে এক ভয়ংকর খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে যাবেন এবং তখন বাইডেনের জন্য এই বিপর্যয় দিন দিনই আরও খারাপের দিকে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে। মহামারির ব্যাপারে কেবল ট্রাম্পই উদাসীন তাই নন, হোয়াইট হাউসের করোনাভাইরাস টাস্কফোর্সের প্রধান মাইক পেন্সও কয়েক সপ্তাহ ধরে কোনো ব্রিফিং দেননি। ফলে বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার আগে বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দেওয়া নিয়ে একরকম অন্ধকারে আছে মার্কিনিরা।

অন্যদিকে, 'সিএনএন'র চিকিৎসাবিষয়ক বিশ্লেষক ড. ইয়াসমিন বলেন, 'শুরু থেকেই আমাদের যা দরকার ছিল, এখনো সেটাই আমাদের প্রয়োজন। আর তা হচ্ছে, মহামারি মোকাবিলায় জোরাল পদক্ষেপ। কিন্তু আমরা সেটা দেখতে পাব না বলেই উৎকণ্ঠায় আছি, অন্তত নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ না নেওয়া পর্যন্ত। আর এই সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি তো খারাপ হতেই থাকবে।' এপ্রিলেই মার্কিনিদের জন্য ভ্যাকসিন সহজলভ্য হবে : ট্রাম্প এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর প্রথমবারের মতো ভাষণ দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় শুক্রবারের ওই ভাষণে করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে আশার কথা শোনালেন তিনি। মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ফাইজারের তৈরি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের কথা উলেস্নখ করে ট্রাম্প বলেন, 'আগামী বছরের এপ্রিলেই সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য হবে এই ভ্যাকসিন।'

হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেন থেকে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প বলেন, 'আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সম্মুখ সারির কর্মী, বয়স্ক এবং উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা মার্কিনিদের এই ভ্যাকসিন বিতরণ করা হবে।' তিনি আরও বলেন, 'ফাইজারের ভ্যাকসিন বিনামূল্যে দেওয়ার জন্য আমরা বিনিয়োগ করেছি। আগামী এপ্রিলেই এই ভ্যাকসিন যুক্তরাষ্ট্রের সব মানুষের জন্য সহজলভ্য হবে।' উলেস্নখ্য, ডেমোক্রেট নেতা জো বাইডেনের কাছে হেরে যাওয়ার পর জনগণের উদ্দেশে প্রথম ভাষণে এভাবেই ভ্যাকসিনের সর্বশেষ তথ্য জানালেন ট্রাম্প।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password