মুসলিম নারীদের অবদান বিভিন্ন পেশায়

মুসলিম নারীদের অবদান বিভিন্ন পেশায়
MostPlay

সভ্যতার ইতিহাসে ইসলামই সর্বপ্রথম নির্যাতিত নারীর পাশে দাঁড়িয়েছে, এ বিষয়ে বিতর্কের সুযোগ সীমিত। সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছেন একজন নারী, খাদিজা (রা.)। সর্বপ্রথম ইসলামের জন্য শহীদ হয়েছেন একজন নারী, সুমাইয়া (রা.)। এগুলো প্রসিদ্ধ ঘটনা। কিন্তু এর বাইরেও আমরা দেখতে পাই, পরিপূর্ণ ইসলাম মোতাবেক জীবন যাপন করে মুসলিম নারীরা পেশাদারিত্বের জগতেও অনুপম কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁদের কয়েকজনের নাম এখানে উপস্থাপন করা হলো—আয়েশা (রা.) হাদিস বর্ণনা, ইসলামী আইন, ফিকহ, ইতিহাস, বংশলতিকা, কবিতা ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে পারদর্শী ছিলেন। আসমা বিনতে আবি বকর (রা.) ও উম্মে আবদিল্লাহ বিন জুবায়ের হাদিস বর্ণনায় পারদর্শী ছিলেন।

আয়েশা বিনতে তালহা কবিতা, সাহিত্য, জ্যোতিষশাস্ত্র ও নভোমণ্ডল বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন। সাকিনা বিনতে হোসাইন ও খানসা কাব্য ও সাহিত্যে পারদর্শী ছিলেন। মায়মুনা বিনতে সাদ (রা.) হাদিসে পারদর্শী ছিলেন। হজরত আলী (রা.)ও তাঁর কাছ থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। কারিমা মারজিয়া (রহ.) হাদিসের পণ্ডিত ছিলেন। ইমাম বুখারি (রহ.) তাঁর কাছ থেকে হাদিস সংগ্রহ করেছেন। ফাতিমা বিনতে আব্বাস প্রখ্যাত ইসলামী আইনবিদ। তিনি মিসর ও দামেশকের প্রভাবশালী নেত্রী। উখত মজনি (রহ.) ছিলেন ইমাম শাফেয়ী (রহ.)-এর শিক্ষক। আল্লামা মারাদিয়ি (রহ.) তাঁর কাছ থেকে জাকাতবিষয়ক মাসআলা বর্ণনা করেছেন। হুজায়মা বিনতে হায়ই (রহ.) প্রখ্যাত তাবেয়ি ও হাদিসবিদ ছিলেন।

ইমাম তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ (রহ.) তাঁর কাছ থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। আয়েশা বিনতে আহমদ বিন কাদিম স্পেনের অধিবাসী ছিলেন। তিনি ক্যালিওগ্রাফিতে পারদর্শী ছিলেন। লুবনি (রহ.) ভাষাবিদ ও আরবি ব্যাকরণশাস্ত্রে পারদর্শী ছিলেন। ফাতিমা বিনতে আলী বিন হোসাইন বিন হামজাহ ছিলেন হাম্বলি মাজহাবের পণ্ডিত। সমসাময়িক আলেমরা তাঁর কাছ থেকে হাদিস শিখেছেন এবং প্রসিদ্ধ হাদিসগ্রন্থ দারেমি শরিফের সনদের অনুমতি নিয়েছেন।

রাবিয়া কসিসাহ সুপ্রসিদ্ধ বক্তা ছিলেন। ইমাম হাসান বসরি (রহ.)ও তাঁর কাছ থেকে বিভিন্নভাবে উপকৃত হয়েছেন। ফাতিমা বিনতে কায়েস শিক্ষাবিদ ও আইনবিদ ছিলেন। উম্মে ফজল, উম্মে সিনান হাদিস বর্ণনাকারী ছিলেন। শিফা বিনতে আবদিল্লাহ প্রখ্যাত আইনজ্ঞ ছিলেন। ওমর (রা.) তাঁকে ইসলামী আদালতের ‘কাজাউল হাসাবাহ’ (অপপড়ঁহঃধনরষরঃু পড়ঁত্ঃ) ও ‘কাজাউস সুক’ (গধত্শবঃ ধফসরহরংঃত্ধঃরড়হ) ইত্যাদির দায়িত্বভার অর্পণ করেন। (সূত্র, তাবকাতে ইবনে সাদ : ৮/৪৫-৪৮; দালায়িলুন নবুয়্যাহ : ৫/৪১৬; ইবনে আসির : ৫/৪৫০; আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়া : ৫/৭৮)

শায়েখ আলাউদ্দীন সমরকন্দি (রহ.) ‘তুহফাতুল ফুকাহা’ নামে একটি কিতাব লেখেন। এর ব্যাখ্যা রচনা করেছেন তাঁরই ছাত্র আবু বকর ইবনে মাসউদ কাস্তানি (রহ.)। ব্যাখ্যাগ্রন্থটির নাম ‘বাদায়েউস সানায়ে’। ইসলামী ফিকহশাস্ত্রে এটি নজিরবিহীন কিতাব। এটি দেখে শিক্ষক তাঁর ছাত্রের কাছে নিজ মেয়েকে বিয়ে দেন। মেয়েটির নাম ফাতিমা। সমকালীন রাজা-বাদশাহরা মেয়েটিকে বিবাহ করতে আগ্রহী ছিলেন। তিনি ছিলেন মুফতি। তাঁর স্বাক্ষরিত অসংখ্য ফতোয়া বের হয়েছে। (ফতোয়ায়ে শামি : ১/১০০)

ইবনে কায়েসের বর্ণনায় দেখা যায়, প্রায় ২২ জন নারী সাহাবি ফতোয়া ও ইসলামী আইন শাস্ত্রে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তাঁদের মধ্যে সাতজন উম্মাহাতুল মুমিনীন বা নবীপত্নী ছিলেন। ১১ শতাব্দীতে মামলুক শাসনামলে তৎকালীন মুসলিম নারীরা দামেশকে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় ও ১২টি জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পূর্ণরূপে মুসলিম নারীদের দ্বারা পরিচালিত হতো।

যুদ্ধবিগ্রহে নারী

আয়েশা (রা.) ও উম্মে সালমা (রা.) ওহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মহানবী (সা.)-এর ফুফু সুফিয়া বিনতে আবদিল মুত্তালিব (রা.) খায়বর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। উম্মুল খায়ের, জুরকা বিনতে আদি, ইকরামা বিনতে আতরাশ ও উম্মে সিনান অসংখ্য যুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক কাজে সহযোগিতা করেন। আজরা বিনতে হারিস বিন কালদা সেনাদলের নেতৃত্ব প্রদান ও আহলে বিসানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। উম্মে আম্মারা (রা.) ওহুদের যুদ্ধে মহানবী (সা.)-এর জীবন রক্ষায় প্রতিরক্ষা বলয় তৈরি করেছিলেন। মহানবী (সা.) তাঁকে ‘খাতুনে ওহুদ’ উপাধি দিয়েছিলেন। ইসলামের ইতিহাসে সর্বপ্রথম সামুদ্রিক অভিযানে প্রথম শাহাদাতবরণ করেন উম্মে হারাম বিনতে মিলহান (রা.)। উম্মে আতিয়া আনসারি (রা.) মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে সাতটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। উমাইয়া বিনতে কায়েস কিফারিয়া খায়বর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। উম্মে হাকিম বিনতে হারিস রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। উম্মে আয়মন হাবশি (রা.) ওহুদ, হুনাইন, খায়বর ও মোতার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। উম্মে সুলাইম (রা.) খায়বর ও হুনাইনের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। উম্মে হারাম বিনতে মিলহান ইসলামের প্রথম নারী নৌযোদ্ধা। রাবি বিনতে মুয়াওয়াজ (রা.) বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। নাসিবাহ বিনতে কাব আনসারিয়া ওহুদ, বনি কুরাইজা, হুদায়বিয়া, খায়বর, হুনাইন ও ইয়ামার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। (সূত্র : তাবকাতে ইবনে সাদ : ৮/৪১৫; দালায়িলুন নবুয়্যাহ : ২/৭১২)

শরিয়তের সীমারেখা অনুসরণ করেও মুসলিম নারীরা কী কী অবদান রেখেছেন, এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে ‘সুন্নতে রাসুল ও আধুনিক বিজ্ঞান’ বইয়ের নবম ও দশম খণ্ড দেখা যেতে পারে। বইটি বাংলাবাজার থেকে আল কাউসার প্রকাশনী বের করেছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password