বাচ্চা ঠিকমতো বুকের দুধ পাচ্ছেনা? তাহলে বুকের দুধ বাড়াতে এই ৫ টি খাবার ট্রাই করুন

বাচ্চা ঠিকমতো বুকের দুধ পাচ্ছেনা? তাহলে বুকের দুধ বাড়াতে এই ৫ টি খাবার ট্রাই করুন
MostPlay

স্বর্ণা নতুন মা হয়েছেন। নতুন বাবুকে নিয়ে সবাই খুবই খুশি। হাসপাতাল থেকে স্বর্ণা  ও নতুব বেবিকে বাসায় নিয়ে এসে সবাই স্বস্তি ও আনন্দে আছে। কিছু দিন যেতে না যেতে স্বর্ণার দুশ্চিন্তা বাড়তে থাকে কারণ তার বেবির ক্ষুধা মিটছে না অর্থাৎ স্বর্ণার বেবিটা ঠিকমত বুকের দুধ পাচ্ছেনা। এমন সমস্যা অনেক নতুন মায়েদের ক্ষেত্রেই দেখা যায়। এর জন্য অনেকেই ডাক্তারের কাছে ও যান।

ব্রেস্ট ফিডিং করান এমন মায়েদের বুকের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে যে খাবারগুলো তাদের ল্যাকক্টোজেনিক ফুড বা galactagogues বলে। বুকের দুধের  সরবরাহ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে যে ৫ টি খাবার  তা হল –

১। ওটমিল

বুকের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে চমৎকারভাবে কাজ করে ওটমিল। সকালে ১ বাটি গরম ওটমিল খেতে পারেন অথবা দই এর সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন ওটমিল। ওটমিল কোলেস্টেরল কমাতে এবং ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। ওটমিলে অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি গুণ আছে। ইমিউন সিস্টেমকে ঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে ওটমিল। মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্ল্যান্ডের যে হরমোন (অক্সিটোসিন) বুকের দুধের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে তার উপর প্রভাব ফেলে ওটমিল।

২। রসুন

খাদ্যে রসুন যোগ করলে তা শুধু খাবারের স্বাদই বৃদ্ধি করেনা বুকের দুধের সরবরাহ বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। বুকের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে বলে প্রাচীনকাল থেকেই বাচ্চাকে দুধ পান করান যে মায়েরা তাদের রসুন খেতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। রসুনের নিরাময় ক্ষমতা আছে বলে ইমিউন সিস্টেমের জন্য উপকারী এবং হৃদরোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে। রসুন বুকের দুধের স্বাদ ও গন্ধের উপর প্রভাব বিস্তার করে। এক গবেষণায় জানা যায় যে, যে সব নবজাতকের মায়েরা রসুন খান তাদের মধ্যে বাচ্চাকে দীর্ঘ সময় ধরে দুধ পান করাতে দেখা যায়। ধারণা করা হয় যে, শিশুরা হয়তো বুকের দুধে রসুনের গন্ধ পছন্দ করে। যারা রসুন পছন্দ করেন না তারা স্বাদহীন গারলিক পিল গ্রহণ করতে পারেন।

৩। গাজর

গাজরে ফাইটোনিউট্রিইয়েন্ট থাকে এবং এতে উচ্চমাত্রার বিটা-ক্যারোটিন ও ভিটামিন এ ও থাকে যা দুধ পান করান যে মায়েরা তাদের জন্য প্রয়োজনীয়। বিশেষ করে  গাজরের জুস ব্রেস্ট ফিডিং করার এমন মায়েদের জন্য অনেক উপকারী কারণ এটি এনার্জি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি বুকের দুধের মান ও সরবরাহ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

৪। মেথি

বুকের দুধের সরবরাহ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে বলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে মেথি বীজ। মেথি বীজ ভিটামিনের চমৎকার উৎস বলে বাচ্চাকে দুধ পান করান যে মায়েরা তাদের জন্য উপকারী। ওমেগা ৩ ফ্যাট  বাচ্চার মস্তিষ্কের গঠনে সাহায্য করে। নতুন মায়েদের জন্য মেথি চা জনপ্রিয় পানীয়। এছাড়াও বিভিন্ন খাবার তৈরিতে বিশেষ করে সবজি ও মাংস রান্না করতেও ব্যবহার করা হয় মেথি।

৫। বাদাম

প্রোটিন এবং এসেনশিয়াল ফ্যাটি এসিডে সমৃদ্ধ বাদাম। নবজাতকের মায়েরা যদি ক্লান্ত অনুভব করেন তাহলে এক মুঠো বাদাম খান। এর ফলে দুধের সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে। দুধের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে কাজু বাদাম, কাঠ বাদাম ইত্যাদি বাদামগুলো। দুধের সাথে বাদাম ব্লেন্ড করে মিশিয়ে পান করতে পারেন। বাদামে ভালো ফ্যাট ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও থাকে।

বুকের দুধের ফ্লো বাড়াতে আরও কিছু টিপস

সুষম খাদ্য খাওয়া প্রয়োজন –

যদি আপনি খুব কম খাবার খান এবং একই ধরণের খাবার খান তাহলে তা বুকের দুধের পরিমাণকে প্রভাবিত করে। যদি আপনি খাদ্য থেকে প্রয়োজনীয় পুস্টি গ্রহণ না  করেন তাহলে শরীর তার সঞ্চিত খাবার ব্যবহার করতে শুরু করবে। এতে শরীরের  শক্তি নিঃশেষিত হতে থাকে। নতুন বেবির যত্ন নেয়ার জন্য আপনার পর্যাপ্ত শক্তি ও সামর্থ্য থাকা প্রয়োজন। যে মায়েরা ব্রেস্টফিডিং করান তাদের ক্ষুধা লাগে বেশি। বুকের দুধ তৈরি করার জন্য আপনার শরীর দিবারাত্রি কাজ করে যাচ্ছে। দিনের প্রধান খাবারের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স খাওয়া প্রয়োজন, যেমনটা আপনি গর্ভাবস্থায় খেয়েছেন। এর ফলে ক্ষুধাও দমন হবে এবং আপনি এনার্জি ও পাবেন।

ক্যালোরির হিসাব করবেন না –

ব্রেস্টফিডিং করান এমন মায়েদের জন্য কত ক্যালোরি গ্রহণ করা প্রয়োজন তার কোন একক উত্তর নেই। সাধারণত দৈনিক ২০০০-২৫০০ ক্যালরি গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়। ক্যালরির হিসাব না করে আপনার ক্ষুধা লাগলেই খান।

ধীরে এবং ক্রমান্বয়ে ওজন কমান –

ওজন কমানো নির্ভর করে ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা, খাদ্যের পছন্দ, সক্রিয়তার মাত্রা এবং বিপাকের মাত্রার উপর। আপনার প্রেগনেন্সি পরবর্তী ওজন কমান ধীরে ধীরে। একবছর যাবৎ ওজন কমানোর পরিকল্পনা করুন। আপনি যদি ওজন কমানোর জন্য জন্য হঠাৎ করেই খাওয়া কমিয়ে দেন তাহলে দুধের সাপ্লাইয়ের উপর প্রভাব পড়বে।

বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্যকর খাবার খান –

আপনার খাদ্যতালিকায় কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাট এর সমন্বয় করুন। এর ফলে পেট ভরা থাকবে ও শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান ও পাবে শরীর। স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যুক্ত খাবার খান। স্যাচুরেটেড ও ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণ এড়িয়ে চলুন। জটিল কার্বোহাইড্রেট যেমন- আস্ত শস্য, সিরিয়াল, তাজা ফলমূল ও শাকসবজি শুধু পুষ্টিই সরবরাহ করবেনা বরং দীর্ঘস্থায়ী শক্তি প্রদান করবে। সব ধরণের খাদ্যের গ্রুপ থেকেই খাদ্য নির্বাচন করা ও খাওয়া প্রয়োজন। এতে আপনি ও আপনার শিশু উভয়েরই পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে। তাই আজকে যা খেলেন আগামীকাল তার চেয়ে একটু ভিন্ন কিছু খাওয়া ভালো।

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন-

বেশি পানি পান করাও দুধের সরবরাহ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। শিশুকে বুকের দুধ পান করালে মায়ের শরীর থেকে তরল বের হয়ে যায় বলে পানি পান করলে হাইড্রেটেড থাকতে সাহায্য করবে এবং অনেক বেশি দুধ উৎপন্ন হতেও সাহায্য করবে। যখনই তৃষ্ণা অনুভব করবেন তখনই পানি পান করুন এবং বাচ্চাকে ব্রেস্ট ফিডিং করানোর আগে এক গ্লাস পানি পান করে নিন।

পরিশিষ্টঃ

বুকের দুধ পাচ্ছেনা বা কম পাচ্ছে এই টেনশন থাকে অনেক মায়ের ক্ষেত্রেই। এবং হুট করেই ইনফ্যান্ট ফর্মুলা খাওয়ানো শুরু করেন। এটা না করে আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে আসলেই আপনার বাচ্চা পরিমাণ মত দুধ পাচ্ছে কি না। আর শুরুর দিকে, অর্থাৎ, বাচ্চা জন্মের পর প্রথম এক দুই সপ্তাহ পর্যন্ত মনে হতে পারে যে বুকের দুধের ফ্লো ঠিক মত আসছেনা, এই অবস্থায় হাল ছেড়ে না দিয়ে বাচ্চাকে বারবার ব্রেস্টফিড করাবেন। আপনি যত বেশি ট্রাই করবেন, দুধের ফ্লো তত বেশি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। আর মনে রাখবেন যে, মায়ের বুকের দুধের কোন বিকল্প আসলেও নেই।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password