ঈদকে ঘিরে প্রাণঘাতী ছিনতাই চক্রের কর্মকাণ্ড

ঈদকে ঘিরে প্রাণঘাতী ছিনতাই চক্রের কর্মকাণ্ড
MostPlay

ঈদকে ঘিরে বেপরোয়া ছিনতাই চক্র ঢাকার বিভিন্ন স্থানে দিনদুপুরে অস্ত্রের ভয়ভীতি দেখিয়ে লুটে নিচ্ছে মানুষের সর্বস্ব। সীমাবদ্ধ নেই শুধু অর্থকড়ি লুটে নেয়ার মধ্যেই। ছিনতাইয়ে বাধা দিলে তারা মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। সম্প্রতি ঢাকার পৃথক দুটি স্থানে ছিনতাইকারীর হাতে দুজন নিহত হওয়ার পর জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও অনেক সময় ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করতে পারছেন না। মাঝেমধ্যে যাদেরকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠাচ্ছেন তারাও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে জামিনে বের হয়ে ফের একই কাজ করছে। এতে করে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য কমছে না।  বরং প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ছিনতাইকারী চক্র তৈরি হচ্ছে।

করোনাকালীন সময়ে এক শ্রেণির মানুষ আয়-রোজগারের বাইরে চলে গেছে। আগে যেখানে কিছু না কিছু কাজ করে সংসার চালাতে পেরেছে এখন সেটি সম্ভব হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে অনেকে অপরাধের পথে পা বাড়াচ্ছে। ঢাকায় পেশাদার ছিনতাইকারীদের অন্তত ডজনখানেক চক্র রয়েছে। এসব চক্র দাপিয়ে বেড়ায় ঢাকার রাজপথ থেকে বিভিন্ন অলিগলি। প্রতিটি চক্রে অন্তত বিশজন করে সদস্য আছে। যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে একাধিক মামলার আসামি হয়ে জেল খেটেছে। ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা আলাদা আলাদা কৌশলে ছিনতাই করে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ছিনতাইকারী চক্র হচ্ছে গামছা পার্টি ও প্রাইভেটকার নিয়ে ছিনতাইকারী চক্র। এই দুটি চক্রের হাতে পড়লে অনেকেই মৃত্যুবরণ করেন।

ঈদের আগে মানুষের মধ্যে কমবেশি টাকা থাকে। কেনাকাটা থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজের জন্য সঙ্গে করে টাকা বহন করে অনেকে। আর এসব ব্যক্তিদের টার্গেট করে ছিনতাইকারীরা। অনেক সময় ছিনতাইকারীরা ব্যাংকে গিয়ে অবস্থান  নেয়। বড় অঙ্কের টাকা তুলে কেউ বের হলে তাদেরকে টার্গেট করে সুযোগ বুঝে ছিনতাই করে। ইফতারের পরে যখন রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকে তখন এবং ভোরবেলা বিভিন্ন স্থান থেকে আসা যাত্রী বা বিশেষ প্রয়োজনে কেউ ঘরের বাইরে গেলে ছিনতাইকারীরা তাদের কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ছিনতাই করে নিয়ে যায়। তাদের কাজে কেউ বাধা দিলে প্রাণে মেরে ফেলে। গামছা পার্টির কবলে পড়ে অনেক যাত্রীকে প্রাণ দিতে হয়েছে গত কয়েক বছরে। কিছু সিএনজিচালকও ছিনতাই চক্রে কাজ করে। যাত্রীরা ভাড়ায় তাদের সিএনজিতে উঠলে সুবিধামতো স্থানে নিয়ে টাকা পয়সা, মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায়।

গত সপ্তাহের বুধবার ভোরবেলা বাসা থেকে বের হয়েছিলেন ৫০ বছর বয়সী সুনিতা রানী দাস। ভোর ৬টার দিকে ভাগ্নে সুজিতকে মানিকনগরের বাসা থেকে রিকশায় করে নিয়ে শান্তিনগরে যাচ্ছিলেন। তাদেরকে বহনকারী রিকশা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পাড়ি দিয়ে মতিঝিল বিআরটিসির বাস ডিপোর সামনে পৌঁছায়। তখন পেছন থেকে আসা প্রাইভেটকার থেকে ছিনতাইকারী সুনিতার ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে যায়। হেঁচকা টানে চলন্ত রিকশা থেকে মাটিতে ছিটকে পড়েন সুনিতা। মাথায় আঘাত পেয়ে মৃত্যুবরণ করেন। সুনিতা ঢাকার বাসাবো বৌদ্ধ মন্দিরে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। পরের দিন বৃহস্পতিবার খিলক্ষেতের কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে পুলিশ উদ্ধার করে গলায় গামছা পেঁচানো সুভাষ চন্দ্র সূত্রধরের (৩২) মরদেহ। তিনি দুবাই থেকে ২০১৯ সালের ১৩ই নভেম্বর দেশে ফিরছিলেন। গত সপ্তাহের  রোববার দিনদুপুরে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা মোড়ে জাহিদ হাসান নামের এক ব্যবসায়ীকে ছুরি দেখিয়ে তার সঙ্গে থাকা টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।

ছিনতাইয়ের ঘটনা ঢাকায় হরহামেশাই হচ্ছে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মৃত্যুর মতো ঘটনা না ঘটলে এসব বিষয়ে থানায় কোনো মামলা হচ্ছে না। বিশেষ প্রয়োজনে অনেকে সাধারণ ডায়েরি করেন। মামলা না হলে পুলিশ এসব ঘটনাকে তেমন গুরুত্ব দেয় না। এ ছাড়া মামলা না হওয়ার কারণে কি পরিমাণ ছিনতাই হচ্ছে তার কোনো পরিসংখ্যানও মিলছে না। ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে ভুক্তভোগীরা সর্বোচ্চ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছেন। 

একটি গোয়েন্দা সূত্র বলছে, গত ১০ দিনে ঢাকায় ছোট-বড় অর্ধশতাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা ইফতারের পরে ও ভোরবেলা হয়েছে। অর্ধশতাধিক ঘটনায় থানায় মামলা ও জিডি হয়েছে ১৫টির মতো। বেশির ভাগ জিডি হয়েছে মোবাইল, ভোটার আইডিসহ গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হারানোর।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password