যে কারণে নাজমাকে খুন করেন রিপন

যে কারণে নাজমাকে খুন করেন রিপন
MostPlay

অনলাইনভিত্তিক ব‌্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ডেলিভারিম্যান হিসেবে কাজ করেন আবু জাহিদ রিপন। কাজের কোনো নির্দিষ্ট সময়সূচি না থাকায় যখন-তখন অফিসে যাওয়া-আসা করতে পারতেন। অফিসের চাবিও ছিল তার কাছে। এ সুযোগে গত ৩১ মার্চ রাতে নাজমা বেগম নামে এক যৌনকর্মীকে ভাড়া করেন। সেদিন অফিসে আর কেউই ছিলেন না। ৪০০ টাকার চুক্তি করা হলেও পরে রিপনের কাছে দেড় লাখ টাকা দাবি করেন নাজমা। এমনকি রিপনকে মামলার হুমকি এবং লাঞ্চিত করেন ওই তিনি। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে নাজমাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন রিপন।

গত ১ এপ্রিল এ ঘটনায় রাজধানীর ভাষানটেক থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগীর মা। মামলা দায়েরের তিন দিন পর রিপনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৫ এপ্রিল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমামের আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন রিপন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারেই আছেন। এদিকে, একই দিনে একই আদালতে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন ফিরোজ নামে আরেক ব্যক্তি।

এ সম্পর্কে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভাসানটেক থানার এসআই শহিদুল ইসলাম জানান, সোহাগ এবং ফিরোজ অনলাইনে ব্যবসা করেন। সোহাগের বাড়ি চাঁদপুরে এবং ফিরোজের বাড়ি কুষ্টিয়ায়। যেখানে নাজমাকে হত‌্যা করা হয়েছে, সেটা সোহাগ ও ফিরোজের অফিস এবং বাসা। সোহাগ ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল নম্বর ফিরোজকে দিয়ে যান। নাম্বারটি একটি কার্টনের ওপর লিখে রাখা হয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘মামলার পর তদন্ত শুরু করি। হত্যার পর নাজমাকে যে কার্টনে ভরে ফেলা দেওয়া হয়েছিল, সে কার্টনে একটা মোবাইল নাম্বার লেখা ছিল। নাম্বারটি ট্র‌্যাক করে দেখলাম, ঘটনার আগে নাম্বারটি ঢাকায় ছিল। পরে দেখা যায়, এর অবস্থান কুষ্টিয়ার মিরপুর থানায়। ধারণা ছিল, তাকে ধরতে পারলে রহস্য উদঘাটন করা যাবে। কিন্তু মাঝে ওই নাম্বারটি বন্ধ ছিল। পরে ওই নাম্বারের মালিক ফিরোজকে ধরতে কুষ্টিয়ায় যাই। সেখানে গিয়ে নাম-ঠিকানা বের করে তার বাড়িতে যাই। সে এ বিষয়ে কিছুই জানে না। পরে থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানাই। সোহাগ ও ফিরোজের অফিসে আরও কার্টন আছে কি না, তা দেখার জন্য বলি। পরে জানানো হয়, ওই ধরনের কার্টন সেখানে আছে।’

তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বাসার সামনে সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। ঢাকা থেকে আমাকে সেই ফুটেজ পাঠানো হয়। ফুটেজটি ফিরোজকে দেখালে সে বলে, এ তো তাদের ডেলিভারিম্যান রিপন। পরে তাকে গ্রেপ্তার করি। এরপর রিপন আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।’

হত্যার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে শহিদুল ইসলাম বলেন, ’৩১ মার্চ রিপন মিরপুর-১০ নম্বরে মাল ডেলিভারি দেন। অফিস ফাঁকা থাকায় রিপন ওই নারী যৌনকর্মীকে ৪০০ টাকা চুক্তিতে অফিসে নিয়ে যান। কিন্তু ওই নারী বাসায় গিয়ে রিপনের কাছে দেড় লাখ টাকা দাবি করেন। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে রিপন ওই নারীকে গলা টিপে হত্যা করেন। পরে প্রথমে লাশ বস্তায় ভরেন। এরপর কার্টনে ঢোকান। পরে বাইরে গিয়ে বই পার্সেল দেওয়ার কথা বলে একটা রিকশা ডেকে আনেন। রিপন এবং রিকশাওয়ালা ওই কার্টন নামান। মিরপুর ডেন্টাল কলেজের সামনের জায়গাটা সন্ধ্যার পর নিরিবিলি থাকে। সেখানে গিয়ে কার্টন নামিয়ে রিকশাওয়ালাকে ছেড়ে দেন রিপন। পরে সে লাশভর্তি কার্টন রেখে সটকে পড়েন তিনি।

নাজমা বেগম খুনের ঘটনায় তার মা সাহানুর ওরফে সানু গত ১ এপ্রিল ভাষানটেক থানায় অজ্ঞাত ব‌্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ১৫ বছর আগে নাজমা বেগমের সঙ্গে জুয়েল নামের এক ব্যক্তির বিয়ে হয়। ওই সংসারে একটি মেয়ে সন্তান জন্মায়। বিয়ের দুই বছর পর তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। চার বছর আগে মহসিন নামের আরেক ব‌্যক্তির সঙ্গে নাজমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে মহসিন নাজমাকে অত্যাচার করতো এবং ভরণপোষণ দিতো না। এদিকে, নাজমা জর্ডানে যাওয়ার জন্য সব কাগজপত্র প্রস্তুত করেন। গত ৩১ মার্চ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নাজমা বাসা থেকে বের হন। মেয়ে বাসায় ফিরে না যাওয়ায় মা সানু তাকে ফোন দেন। কিন্তু ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরদিন বেলা আড়াইটার দিকে রূপনগর থানা পুলিশ সানুকে ফোন দিয়ে তার মেয়ের খুন হওয়ার কথা জানান।

এ বিষয়ে জানতে নাজমার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। নাজমার ফুফু নিরু বলেন, ‘টিভিতে দেখতেছি তাকে নিয়ে এসব খবর। কিন্তু এটা আমরা বিশ্বাস করি না। গত শুক্রবার ওর জর্ডানে যাওয়ার কথা ছিল। সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। আর ওর ছোট বোন সব খরচ দিয়ে ওকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের তো মনে হয়, ছেলেটা নাজমার কাছে দেড় লাখ টাকা চাইছে। টাকা না দেওয়ায় তাকে খুন করছে। আর যদি ধরে নিই যে, নাজমা টাকা চাইছে। তাহলেই কি তাকে খুন করতে হবে। তার মেয়ে দুইটা এতিম হয়ে গেল। কে তাদের দেখাশোনা করবে? নাজমাকে যে খুন করছে, তার ফাঁসি চাই।’ 

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password