দুর্দান্ত দুটি গোলে বেঁচে গেল শেখ জামাল

দুর্দান্ত দুটি গোলে বেঁচে গেল শেখ জামাল
MostPlay

লিগে ৭ ম্যাচ খেলে অপরাজিত শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। বড় দলের বিপক্ষেও দাপট দেখিয়ে এসেছে তারা। আগের ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গেও গোলশূন্য ড্র করেছে শেখ জামাল।

অথচ ধানমন্ডির অপরাজিত দলটিই কিনা আজ হারতে হারতে ড্র করেছে পয়েন্ট টেবিলে নিচের দিকে থাকা উত্তর বারিধারার বিপক্ষে। ১-৩ গোলে পিছিয়ে পড়া ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ৩-৩ গোলে ড্রয়ের স্বস্তি নিয়ে মাঠ ছেড়েছে শেখ জামাল।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে নাটকীয় এক ম্যাচই অনুষ্ঠিত হলো আজ। ম্যাচের শেষের দিকে ১৭ মিনিটের ব্যবধানে দুর্দান্ত দুটি গোল করে দলকে হারের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন শেখ জামালের গাম্বিয়ান ফরোয়ার্ড ওমর জোবে।

বিশেষ করে ম্যাচের শেষ মুহূর্তে তাঁর ডান পায়ের ব্যাকহিলের বুলেট গতির শটের গোলটি ছিল চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মতো

আজ জোবেকে বিশেষ কিছু না করে দেখানো ছাড়া উপায় ছিল না। কারণ, নিষেধাজ্ঞার কারণে খেলতে পারেননি দলের অধিনায়ক ও প্রাণভোমরা সলোমন কিং। তিনি নেই বলে কোচ শফিকুল ইসলামকেও দল সাজাতে হয়েছে ভিন্ন কৌশলে।

সাধারণত ৪-৩-৩ ফরমেশনে খেলে থাকে শেখ জামাল। বিদেশি চার ফরোয়ার্ডকে কেন্দ্রে রেখেই তাদের মূল পরিকল্পনা। কিংয়ের অনুপস্থিতিতে স্থানীয় স্ট্রাইকার নুরুল আবসারকে সামনে রেখে ৪-২-৩-১ ফরমেশনে খেলেছে তারা।

৯ মিনিটে আবসারের গোলেই এগিয়ে যাওয়া। সুলাইমান সিল্লাহ ‘ফ্লিক’ হেডে বক্সের মধ্যে বল নামিয়ে দিলে গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে টোকায় জালে পাঠিয়েছেন আবসার। লিগে এটি তাঁর তৃতীয় গোল।

গোল করে যেন ভুলই করে ফেলে অপরাজিত থাকা দলটি! ম্যাচের ৭০ মিনিটের মধ্যে স্কোরলাইন—শেখ জামাল ১-৩ বারিধারা। এক স্ট্রাইকারকে ওপরে রেখে প্রতি আক্রমণনির্ভর ফুটবল খেলে গোল পেয়েছে তারা।

দলের মূল প্রাণভোমরা মিসরের ফরোয়ার্ড মোস্তফা মাহমুদ আবদেল খালেক। বলের ওপর দুর্দান্ত নিয়ন্ত্রণ এই প্লেমেকারের। বারিধারার বেশির ভাগ আক্রমণ রচনা হয় তাঁর পা থেকেই।

আবদেল খালেক সহায়তায় ২৮ মিনিটে দুর্দান্ত এক গোল করে বারিধারাকে সমতায় ফেরান মোহাম্মদ সুজন। মোস্তফা বক্সের সামনে কয়েকজন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে পাস দেওয়ার চেষ্টা করেন। সেটি ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হন শেখ জামাল ডিফেন্ডার।

ফিরতি বলে দুর্দান্ত ভলিতে সুজনের গোল। লিগে এ নিয়ে দুটি গোল করলেন তিনি।
অন্যদিকে লিগে এরই মধ্যে দুটি হলুদ কার্ড দেখায় তৃতীয় কার্ডের শঙ্কায় আজ প্রথমে নামানো হয়নি বারিধারার অধিনায়ক ও স্ট্রাইকার সুমন রেজাকে।

কারণ, আজ তৃতীয় কার্ড দেখলে পরের ম্যাচে আরামবাগের বিপক্ষে খেলতে পারবেন না তিনি। সে ম্যাচে বারিধারার জয়ের সম্ভাবনা থাকায় ম্যাচটি তাদের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু শেখ জামালকে চাপ দিয়ে ধরা সম্ভব হলে ৩৯ মিনিটে বদলি হিসেবে নামানো হয় সুমনকে। ৬ মিনিটের মধ্যেই তাঁর গোল এবং সে গোলেও আছেন মিসরীয় মোস্তফা।

৪৫ মিনিটে মাঝমাঠের ওপর থেকে বল কেড়ে নিয়ে ওপরে উঠে দুই ডিফেন্ডারের ফাঁক গলে সুমনের উদ্দেশে থ্রু দিয়েছিলেন মোস্তফা। বক্সের মধ্য থেকে প্রথম স্পর্শে জালে পাঠিয়ে ১-২ করেছেন জাতীয় দলের এই ফরোয়ার্ড।

লিগে এটি তাঁর তৃতীয় গোল। ৭০ মিনিটে ১-৩ করেন মিডফিল্ডার পাপন সিং। বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের জোরালো শটে গোলটি করেছেন তিনি।

১-৩ গোলে পিছিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় শেখ জামালের। এমন প্রয়োজনের সময় খোলস ছেড়ে বের হয়ে এলেন জোবে। ৭৩ মিনিটে করলেন ২-৩। রাইটব্যাক মনির হোসেনের ক্রস সাইড পোস্টে লেগে ফিরে এলে ফিরতি বলে জোবে পা লাগালে জালে জড়ায়।

২-৩ গোলে পিছিয়ে থেকে শেখ জামালের হারের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিল ম্যাচটি। ৯০ মিনিটে চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়া গোল করে দলকে হারের হাত থেকে বাঁচালেন জোবে। সুলাইমানের কাটব্যাক বক্সের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে নেন তিনি। কিন্তু ঘুরে ছিলেন গোলপোস্টের উল্টো দিকে। আচমকা বুলেট গতির ব্যাকহিল জালে। অবিশ্বাস্য রকমের এক গোল।

পিছিয়ে পড়ে ড্র করতে পারার সন্তুষ্টি জামাল কোচ শফিকুল ইসলামের। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘প্রথমার্ধে খেলোয়াড়েরা ম্যাচটি গুরুত্ব দেয়নি। প্রয়োজনের সময় তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। পিছিয়ে পড়ে ড্র করতে পেরে সন্তুষ্ট। তবে এমন দলের বিপক্ষে ২ পয়েন্ট হারানোটা আমাদের জন্য ভালো হলো না।’

শেখ জামালের বিপক্ষে ড্র করার তৃপ্তি আছে বারিধারার কোচ মাহবুব আলির। কিন্তু সঙ্গে আফসোসও আছে তাঁর, ‘জেতা উচিত ছিল। আমরা ছোট দল হয়েও তো আজ জিতেই গিয়েছিলাম। খেলোয়াড়েরা খুব ভালো খেলেছে।’ এই ড্রয়ে ৮ ম্যাচ শেষে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয় স্থানে শেখ জামাল। সমানসংখ্যক ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে দশম স্থানে বারিধারা।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password