এক হাজার পাকিস্তানি নারীকে জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয়

এক হাজার পাকিস্তানি নারীকে জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয়
MostPlay

নেহা গান ভালোবাসতো। কিন্তু গত বছর থেকে গান গাওয়ার সেই সুযোগ হারিয়ে ফেলেছে এই কিশোরী। কারণ ১৪ বছরের এই কিশোরীকে গত বছর খ্রিস্টান ধর্ম থেকে জোর করে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে। তাকে জোর করে ৪৫ বছর বয়সী এক মুসলিম ব্যক্তির সঙ্গে বিয়েও দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন ঘটনাটি ঘটেছে পাকিস্তানে। এপির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে। 

শুধু নেহা নয়। প্রতি বছর পাকিস্তানে এক হাজার নারীকে জোর করে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়। অন্য ধর্মের মেয়েদের বিয়ে করার রাস্তাটা পাকা করার জন্যই মূলত ধর্মান্তরিত করা হয়। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে আরোপ করা লকডাউনের সময় ধর্মান্তরিতকরণের কাজটি আরো ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ লকডাউনের সময় বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় মেয়েরা মানুষের দৃষ্টিগোচর হয় বেশি। এদিকে, আবার কনে পাচারকারীরা ইন্টারনেটে বেশি সক্রিয়। পরিবারগুলোরও বেশি ঋণের বোঝা বইতে হচ্ছে। 

এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট পাকিস্তানকে ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনের জন্য ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। কিন্তু মার্কিন এই আখ্যা পাকিস্তান সরকার প্রত্যাখ্যান করেছে। এই ঘোষণাটি আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা সম্পর্কিত মার্কিন কমিশনের মূল্যায়নের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছিল। দেশটিতে সংখ্যালঘু হিন্দু, খ্রিস্টান ও শিখ সম্প্রদায়ের অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের জোর করে ইসলামে ধর্মান্তরের জন্য অপহরণ করা হয়... জোর করে বিয়ে করা হয় এবং ধর্ষণও করা হয়। বেশিরভাগ ধর্মান্তরিত মেয়েরা সিন্ধু প্রদেশের দরিদ্র পরিবারের হিন্দু ধর্মের। তবে নেহাসহ খ্রিস্টান ধর্মের নারীদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া দুটি নতুন ঘটনা সামনে এসেছে।

এপির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, অবৈধ কাজের সহযোগী, আত্মীয় বা বিয়ের জন্য পাত্র খোঁজছে এমন ব্যক্তিরা নারীদের অপহরণ করে। কখনও কখনও পিতামাতার বকেয়া ঋণের দায় পরিশোধের উপাদান হিসেবে শক্তিশালী বাড়িওয়ালারা কিংবা জমির মালিকরা তরুণীদের নিয়ে যায়। একবার ধর্মান্তরিত হওয়ার পরে মেয়েদের দ্রুত বিয়ে করিয়ে দেওয়া হয়। প্রায়শই বয়স্ক পুরুষ বা অপহরণকারীদের সঙ্গে তাদের বিয়ে দেওয়া হয়। পাকিস্তানের স্বাধীন মানবাধিকার কমিশন এমনটাই জানিয়েছে। 

পাকিস্তানের দু’শ ২০ মিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে মাত্র ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হলো সংখ্যালঘু। প্রায়ই তারা বৈষম্যের শিকার হন। উদাহরণস্বরূপ যারা জোর করে ধর্মান্তরিত হওয়া নিয়ে কানাঘুষো করে তাদেরকে ব্লাসফেমির আইনে অভিযুক্ত করা হয়। 

এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, সিন্ধু প্রদেশের কাশমোর অঞ্চলে ১৩ বছরের কিশোরী সোনিয়াকে অপহরণ করা হয়েছিল। কিন্তু একদিন পর স্থানীয় পুলিশ তার বাবা-মাকে জানায়, ওই কিশোরী হিন্দু ধর্ম থেকে ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছে। এরপর তার মা এক ভিডিও বার্তায় কিশোরীকে ফিরে দেওয়ার মিনতি করেন। এই বিষয়টি নিয়ে এক হিন্দু কর্মী জানান, তিনি একটি চিঠি পেয়েছেন যেটি ওই কিশোরীর পরিবারকে লিখতে বাধ্য করা হয়েছিল। চিঠিতে দাবি করা হয়, ১৩ বছর বয়সী ওই কিশোরী স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হয়েছেন। সোনিয়া ৩৬ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেছে। ওই ব্যক্তি আবার বিবাহিত। তার দুই সন্তানও রয়েছে। এরপর কিশোরীর মা-বাবা হাল ছেড়ে দেন।

আরজু রাজা নামের ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরী করাচির নিজ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। খ্রিস্টান ওই কিশোরীর বাবা-মা পুলিশকে অনুরোধ করে তাকে খুঁজে বের করার জন্য। কিন্তু দু'দিন পরে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের (কিশোরীর বাবা-মাকে) জানান, ওই কিশোরী ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছে। ৪০ বছর বয়সী এক মুসলিম প্রতিবেশী সঙ্গে তার বিয়েও হয়ে গেছে। সিন্ধু প্রদেশে নারীদের বিয়ের বয়স ১৮ নির্ধারণ করা। আরজুর বিয়ের সনদপত্রে ১৯ বছর দেখানো হয়েছে।

নেহা জানিয়েছে, বিয়ে নিয়ে তাকে ফাঁদে ফেলা হয়েছিল। তার এক খালা হাসপাতালে অসুস্থ সন্তানকে দেখতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে ফাঁদে ফেলেন। হাসপাতালে না গিয়ে তাকে তার খালার শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং বলা হয়, তার খালার ৪৫ বছর বয়সী ভাইকে (শ্বশুরবাড়ির সম্পর্কিত ভাই) বিয়ে করা জন্য। সান্দেস বালুচ নামের তার সেই খালা বছর কয়েক আগে ধর্মান্তরিত হন।

নেহা বলেন, আমি তাকে বলেছিলাম আমি পারবো না। আমি খুব ছোট এবং আমি বিয়েও করতে চাই না। নেহার দাবি, এই কথা শোনার পর তার খালা তাকে চড় মারেন। এরপর একটি ঘরে তাকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। পরে তাকে দু’জন ব্যক্তির সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্যে একজন হলেন তার স্বামী। আরেকজন হলেন যিনি বিয়ে পড়িয়েছিলেন। নেহা জানান, বিয়ের সময় তার ১৯ বছর বলে জানানো হয়।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password