কর্মকর্তাকে পিটিয়ে হত্যা,সড়কে ব্যাংকাররা

কর্মকর্তাকে পিটিয়ে হত্যা,সড়কে ব্যাংকাররা
MostPlay

সিলেট নগরীর প্রাণকেন্দ্র কোর্ট পয়েন্টে ব্যাংক কর্মকর্তাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করেছে সর্বমহল। ব্যাংকাররা ঘটনার প্রতিবাদে রাজপথে বিক্ষোভ মিছিল করে স্মারকলিপি দিয়েছেন সোমবার।

এ সময় খুনিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়। এছাড়াও ঘাতকদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে মঙ্গলবার মানববন্ধন ও সমাবেশ করবেন ব্যাংকাররা।

নগরীর প্রাণকেন্দ্র কোর্ট পয়েন্টে এমন হত্যাকাণ্ডের পর উদ্বিগ্ন সুশীল সমাজ ও সচেতন মহল। তারা বলছেন, নগরীর চৌহাট্টায় পরিবহন শ্রমিকরা মেয়র, পুলিশ ও সংস্কার কর্মীদের ওপর হামলার তিন দিনের মাথায় নির্মম হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে। এ হত্যাকাণ্ডেও সরাসরি পরিবহন শ্রমিকরা জড়িত। তাছাড়া যেখানে প্রকাশ্যে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে সেই বন্দরবাজার পয়েন্ট বিভাগীয় সদরের প্রাণকেন্দ্র। সেখানে হাজার-লাখো মানুষের সমাগম প্রতিদিন।

ব্যাংকার হত্যাকাণ্ড স্থল থেকে বহুল আলোচিত বন্দর পুলিশ ফাঁড়ির দূরত্ব মাত্র কয়েক গজ। মাত্র চার মাস আগে যুবক রায়হানকে ওই পুলিশ ফাঁড়িতে পিটিয়ে হত্যা করেছিল পুলিশ। আইনের শাসনের অভাবেই একের পর এক এমন জঘন্য-নৃশংস ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তারা।

সিলেটের আইনজ্ঞ মো. শহীদুজ্জামান বলেন, চিহ্নিত অপরাধীরা পরিবহন শ্রমিক পরিচয়ে নিরাপদে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও স্ট্যান্ডে নিরাপদে অবস্থান করছে কিনা তা খতিয়ে দেখা জরুরি। কারণ শুধু এই হত্যাকাণ্ড নয়, সিলেটে মাজার জিয়ারতসহ বেড়াতে আসা পর্যটকদের বিভ্রান্ত করে, অচেনা পথে নিয়ে মালামাল লুটের অসংখ্য ঘটনার সঙ্গে পরিবহন শ্রমিক নামধারীদের সম্পৃক্ততা অসংখ্য ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে। হত্যা, লাশ গুমেও পরিবহন শ্রমিকদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে বেশ কয়েকটি আলোচিত মামলায়।

তিনি জানান, অপরাধ সংশ্লিষ্ট এমন কতিপয় পরিবহন চালকের কারণে এখন পুরো পরিবহন শ্রমিক গোষ্ঠীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। তাদের ওপর আস্থা হারাচ্ছে যাত্রীসহ সাধারণ মানুষ। অপরাধ সংশ্লিষ্টদের কাছে অনেকটা জিম্মি খোদ পরিবহন শ্রমিকরাই। এমন অবস্থা থেকে নিরীহ প্রকৃত পরিবহন শ্রমিকদের রক্ষা করতে হবে। নগরবাসীর হাঁটাচলার ফুটপাত-রাস্তা নিরাপদ করতে প্রশাসনসহ সকল রাজনৈতিক ও শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

রাজনীতিবিদ লোকমান আহমদ বলেন, নির্মমভাবে ব্যাংকার হত্যার ঘটনা চরম নিন্দনীয় ও জঘন্য। অপরাধী নামক চিলের পেছনে দৌড়ানোর পাশাপাশি বারবার কেনো এমন বেপরোয়া, হিংস্র ও মানবতা বিবর্জিত কর্মকাণ্ড ঘটছে তা খতিয়ে দেখা জরুরি। আইনের শাসনের শাসনের অভাব অরাজকতাকে উস্কে দিচ্ছে কিনা এখনই খতিয়ে দেখে অপরাধের মুখে লাগাম দেয়া জরুরি।

আটাব সিলেটের সাবেক সভাপতি আব্দুল জব্বার জলিল বলেন, সিলেট শান্তির নগরী, দেশ নয় বিদেশেও এই সুনাম রয়েছে। কিন্তু একের পর এক অরাজকতা চরম উদ্বিগ্ন করে তুলছে নগরবাসীকে। বেপরোয়া হয়ে উঠা অপরাধীদের আড়াল থেকে হয়তো কোনো কোনো রাজনৈতিক শক্তি আস্কারা দিচ্ছে। নতুবা লাখো লাখো নগরবাসীর জীবন গুটিকয়েক অপরাধী অশান্ত করে তুলতে পারত না। এখনই তাদের প্রতিরোধ করা না গেলে এজন্য চরম মাশুল দিতে হবে।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, ব্যাংকারকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা নিন্দনীয়। এসব বিষয়ে আমরা চুল পরিমাণ ছাড় দেব না। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া এধরনের সামাজিক অবক্ষয়জনিত সমস্যার সমাধান বড় কঠিন। শিগগিরই এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

ব্যাংক অফিসার্স ক্লাব সিলেটের সভাপতি সৈয়দ মো. নকিব হোসেন বলেন, ব্যাংকার হত্যার প্রতিবাদে লাগাতার কর্মসূচি দেয়ার আলোচনা চলছে।

মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সিলেট রিজিওন প্রধান কামরান আহমদ বলেন, করোনার সংকটাপন্ন সময়েও ব্যাংকাররা সম্মুখযোদ্ধার মতো কাজ করে যাচ্ছেন। এমন একজন যোদ্ধাকে পিটিয়ে হত্যা আমাদের মানবিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এই নির্মম ঘটনার আসামি গ্রেফতার ও ন্যায্য বিচার না পেলে কঠোর আন্দোলন আসবে। কর্মসূচির প্রস্তুতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

অগ্রণী ব্যাংক অফিসার্স সমিতি সিলেটের সভাপতি ওলিউর রহমান জানান, পিটিয়ে হত্যা করা মওদুদ আহমেদ (৩৫) আমার সহকর্মী। তিনি সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার অগ্রণী ব্যাংক, হরিপুর গ্যাস ফিল্ড শাখার অফিসার (ক্যাশ) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। নগরীর রাজারগলির একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। মুল বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলার টেংগুরিপাড়া গ্রামে। তার পিতার নাম মো. আব্দুল ওয়াহেদ। সোমবার জানাজা শেষে তার লাশ দাফন হয়েছে।

তিনি জানান, হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি আড়াল করার অপচেষ্টা ছিল ঘাতকদের। হত্যার বিষয়টি ফাঁস হলেও জানাজানি হতে সময় লেগে যায়। সোমবার আমরা নগরীতে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছি। মিছিল শেষে জেলা প্রশাসক এমদাদুল হক, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নেছারুল আরিফ ও বিভাগীয় কমিশনার মশিউর রহমান বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছি। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে গত শনিবার বন্দরবাজারের কোর্ট পয়েন্টে সিএনজি অটোরিকশা চালকদের পিটুনিতে নিহত ব্যাংকার মওদুদ আহমেদ হত্যা মামলায় কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি।

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি এসএম আবু ফরহাদ জানান, এ ঘটনায় জড়িতদের কাউকে গ্রেফতার করা না গেলেও তাদের অনেক তথ্য এখন পুলিশের হাতে। আসামিরাও যে কোনো মুহূর্তে ধরা পড়বে, অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত শনিবার বিকালে জৈন্তাপুরের হরিপুর থেকে একটি সিএনজি অটোরিকশায় নগরীর বন্দরবাজারে আসেন ব্যাংক কর্মকর্তা মওদুদ আহমেদ। একপর্যায়ে চালক নোমান হাছনুরের (২৮) সাথে ভাড়া নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয় মওদুদের। তখন হাছনুরসহ সিএনজি অটোরিকশা চালকরা মওদুদ আহমেদকে বেধড়ক মারধর করেন। এতে তিনি গুরুতর আহত হলে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর পর হত্যাকাণ্ডকে সড়ক দুর্ঘটনা বলে প্রচার চালায় পরিবহন শ্রমিকরা।

নিহত মওদুদের বড়ভাই আব্দুল ওয়াদুদ বাদী হয়ে সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের টুকেরগাঁও পশ্চিমপাড়া গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে সিএনজি অটোরিকশাচালক নোমান হাছনুর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password