জাবির ৩ হল সিলগালা,আন্দোলন চলবে

জাবির ৩ হল সিলগালা,আন্দোলন চলবে
MostPlay

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে হল খুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উঠে পড়া তিনটি আবাসিক হল তালা দিয়ে সিলগালা করেছে হল প্রশাসন। মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক-জব্বার হল, শহীদ সালাম বরকত হল ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল সিলগালা করা হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট হলের প্রভোস্টরা। 

এদিকে তিনদিন ধরে হল খোলার দাবিতে চলা কর্মসূচি মঙ্গলবার স্থগিত করলেও পরে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া উপাচার্যের বাসভবনের সামনে নিরাপত্তার জন্য প্রায় অর্ধশত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান।

এদিকে সব বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের সব ধরনের পরীক্ষা স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পাশাপাশি উইকেন্ড এবং ইভিনিং প্রোগ্রামেরও সব পরীক্ষা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।  বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কার্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। 

মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে সংবাদ সম্মেলন করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থী সিরাজুল হক বলেন, 'আমরা আন্দোলন স্থগিত করিনি। শুধু আজ (মঙ্গলবার) দুপুরের বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি স্থগিত করেছি। এছাড়া কোনো কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়নি।'

তিনি বলেন, 'শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা, হল খোলা ও প্রয়োজনীয় সুযোগসুবিধা দেওয়া এবং হামলায় আহতদের চিকিৎসাব্যয় ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দিতে হবে।' এসব দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।

সিরাজুল হক আরও বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের অধিকাংশ দাবি মেনে নিয়েছে। কিন্তু অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে আমাদের পরিস্থিতি ভিন্ন। তাই হলে থাকার বিষয়টি তারা যেন বিবেচনা করেন। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও ভোগান্তির বিষয়টি বিবেচনা করে আমরা হলে থাকব। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি আমাদের ক্যাম্পাসে বিকল্প জায়গা দেয় সেখানেও আমরা থাকতে রাজি।'

এর আগে দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়। এ বিষয়ে তারা বলেন, 'দুপুরে যারা সংবাদ সম্মেলন করেছে তারা বিষয়টি ভালোভাবে বোঝাতে পারেনি। যার কারণে সমস্যা হয়েছে। এজন্য আমরা দুঃখিত।'

এদিকে ছাত্রলীগের হল ছাড়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সামিয়া হাসান সাংবাদিকদের বলেন, 'এটা তাদের দলীয় বিষয়। তারা হল ছাড়তে পারে। তবে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তার জন্য হলে ওঠেছি। হলেই থাকব।'

হল সিলগালা কার বিষয়ে শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, 'আমরা হলে সিলগালা করেছি। পরবর্তীতে নির্দেশনা মোতাবেক হল খোলা হবে। আমার শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার বিষয়ে বলার পর তারা নিজ ইচ্ছায় হল ছেড়েছে। পাশাপাশি ছাত্রলীগের ছেলেরাও হল ছেড়েছে। এজন্য তাদের আমি ধন্যবাদ জানাই।'

এদিকে প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি মোতাহার হোসেন বলেন, 'আমাদের শহীদ রফিক জব্বার হল, শহীদ সালাম বরকত হল, মীর মশাররফ হোসেন হল ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল ফাঁকা হয়েছে। তাই এগুলোতে তালা দেওয়া হয়েছে,যার মধ্যে তিনটি সিলগালা করা হয়েছে। আর দুটি হলে কিছু শিক্ষার্থী রয়েছে। তারাও আস্তে আস্তে যাচ্ছেন। বাকিগুলোতে শিক্ষার্থী নেই। প্রভোস্ট কমিটির মিটিংয়ে স্ব স্ব হলের প্রভোস্টরা শিক্ষার্থীদের বুঝিয়েছেন। অনেক শিক্ষার্থী চলে গেছেন। তবে এর পরেও যারা থাকবে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

এদিকে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনার পর হল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। সেই সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও হল ছাড়তে আহ্বান জানিয়েছে তারা। এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক নীলাদ্রী বলেন, 'শিক্ষামন্ত্রী বলার পর কাল রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে হল ছাড়ার নির্দেশনা আসে। সেই জায়গা থেকে আমরা যারা ছাত্রলীগ করি তাদের আদেশ অমান্য করে হলে থাকার সুযোগ নেই। তাই আমরা হল ছেড়ে দেব।'

এর আগে সোমবার সকালে করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতিতে আদেশ অমান্য করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদের সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন গেরুয়া বাজারে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে জাবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দারের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর শনিবার হল খুলে দেওয়াসহ তিন দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের (ভিসি) বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।

পরে বিভিন্ন হলের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের ওপর গেরুয়া গ্রামবাসীর অতর্কিত হামলার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ২৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password