পূজা অনুষ্ঠানের খাবার গ্রহণ হারাম না হালাল?

পূজা অনুষ্ঠানের খাবার গ্রহণ হারাম না হালাল?
MostPlay

মুসলমানদের পূজার উৎসবে যাওয়া ও প্রসাদ খাওয়া সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?পূজার উৎসবে কোন মুসলমানের যাওয়া ও প্রসাদ খাওয়া হারাম কি না।

উত্তর: মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুর'আনের মোট চার জায়গায় উল্লেখ করেছেন-
* সূরা বাকারার ১৭৩ নং আয়াতে,
* সূরা মায়িদাহ’র ৩ নং আয়াতে,
* সূরা আন’আমের ১৪৫ নং আয়াতে, এছাড়াও
* সূরা নাহলের ১১৫ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে,
“আল্লাহ্ তোমাদের জন্য হারাম করেছেন মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের মাংস খাওয়া। আর যে পশু জবাই করার সময় আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো নাম নেয়া হয়েছে” অর্থাৎ যা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো নামে উৎসর্গ করা হয় সেটা আমাদের জন্য আল্লাহ্ হারাম করে দিয়েছেন। আর এই কারনেই পূজার প্রস্বাদ খাওয়া হারাম।

এখন আসি পূজার অনুষ্ঠানে মুসলিমদের যাওয়ার বিষয়ে- আমাদের দেশে যখন হিন্দুদের পূজার উৎসব চলতে থাকে তখন অনেক মুসলিম-ই তাদের ঐ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করে। ঐ অনুষ্ঠানে উপভোগ করে।অনেকে উৎসুক ভাবেই যায়। ঐ সমস্ত মুসলিমদের যদি বলি- ভাই হিন্দুদের পূজায় অংশগ্রহন করো না, উৎসুক ভাবেও যেও না, তাদের দেব-দেবীর নামে উৎসর্গকৃত প্রসাদও খেওনা। তখন তারা উত্তরে খুব বুক ফুলিয়েই বলে-গেসি তো কি হয়েছে? গেলেই কি আমি হিন্দু হয়ে যাব? আমার ঈমান ঠিক আছে। এখন একটু ভেবে দেখুন,মূর্তিপূজা হচ্ছে আল্লাহর সাথে শির্ক করা। আর শির্ক হচ্ছে সবচেয়ে বড় অন্যায়, সবচেয়ে বড় অপরাধ।
মহান আল্লাহ বলেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ্র সাথে শির্ক হচ্ছে সবচেয়ে বড় অন্যায়। (সুরা লুকমানঃ ১৩) আর শির্কের অপরাধ আল্লাহ কখনো ক্ষমা করবেন না। মহান আল্লাহ বলেন : "নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে অংশী স্থাপন করলে তাকে ক্ষমা করবেন না,কিন্তু এর চেয়ে ছোট পাপ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন, এবং যে কেউ আল্লাহর অংশী স্থির করে, সে মহাপাপে আবদ্ধ হয়েছে। (সূরা নিসাঃ ৪৮)। .
এখন দেখুন, সবচেয়ে বড় অন্যায় আপনার সামনে হচ্ছে। আর রাসুল (সাঃ) বললেন-তোমাদের কেউ কোন গর্হিত/ অন্যায় কাজ হতে দেখলে সে যেন নিজের হাতে (শক্তি প্রয়োগে) তা সংশোধন করে দেয়, যদি তার সে ক্ষমতা না থাকে তবে যেন মুখ দ্বারা তা সংশোধন করে দেয়, আর যদি তাও না পারে তবে যেন সে ঐ কাজটিকে অন্তর থেকে ঘৃণা করবে। আর এটা হল ঈমানের নিম্নতম স্তর। [সহিহ মুসলিম,ঈমান অধ্যায়, হাদিস নং ৭৮] .

অথচ আপনি ঐ অন্যায়কে বাঁধা তো দেনই না, মনথেকেও ঘৃণা করেন না বরং ঐ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করে মনে মনে উপভোগ করেন। অন্তত মন থেকে ঘৃণা করলেও দুর্বলতম ঈমানদার হিসেবে আপনার ঈমান থাকত কিন্তু ঐ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করে তাদের অনুষ্ঠান মনে মনে উপভোগ করার পরেও কি আপনি দাবী করবেন যে- আপনার ঈমান ঠিক আছে। এটা হাস্যকর ছাড়া কিছুই নয়।

আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের (সা.) কিছু কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি:
→১/ সাওবান (রা:) বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "......অচিরেই আমার উম্মতের কিছু লোক মূর্তিপূজা করবে। আর অতি শীঘ্রই আমার উম্মতের কিছু লোক মুশরিকদের সাথে মিশে যাবে।" (ইবনে মাজাহঃ ৩৯৫২)

→২/"নিশ্চয়ই আল্লাহর সাথে শিরক হচ্ছে সবচেয়ে বড় অন্যায়।" (সুরা লুকমানঃ ১৩)

→৩/ "নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে অংশী স্থাপন করলে তাকে ক্ষমা করবেন না, কিন্তু এর চেয়ে ছোট পাপ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন, এবং যে কেউ আল্লাহর অংশী স্থির করে, সে মহাপাপে আবদ্ধ হয়েছে। (সূরানিসাঃ ৪৮)

→৪/ “মুমিনগণ, তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা তো তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাও, অথচ তারা যে সত্য
তোমাদের কাছে আগমন করেছে, তা অস্বীকার করছে।” (সূরা আল-মুমতাহিনা, আয়াত: ১)

→৫/ “আর পাপিষ্ঠদের প্রতি ঝুঁকবে না। নতুবা তোমাদেরকেও আগুনে ধরবে। আর আল্লাহ ব্যতীত
তোমাদের কোন বন্ধু নাই। অতএব কোথাও সাহায্য পাবে
না।” (সূরা হুদ, আয়াত: ১১৩)

→৬/ “আল্লাহ্ তোমাদের জন্য হারাম করেছেন মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের মাংস খাওয়া। আর যে পশু জবাই করার সময় আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো নাম নেয়া হয়েছে” (সূরা মায়িদাহঃ ৩)

→৭/ উমার ইবনে খাত্তাব (রা) বলেছেন "তোমরা মুশরিকদের উপসনালয়ে তাদের উৎসবের দিনগুলোতে প্রবেশ করোনা। কারন সেই সময় তাদের উপর আল্লাহর গযব নাযিল হতে থাকে। (বায়হাক্বী)

→৮/ আবু মূসা (রা) থেকে বর্ণিত, নবী (সা) বলেছেনঃ "মানুষ (দুনিয়াতে) যাকে ভালোবাসে (কিয়ামতে) সে
তারই সাথী হবে ।" - [রিয়াযুস স্বা-লিহীনঃ ৩৭২]

→৯/ রসূলুল্লাহ্ (সা) হতে আরো ইরশাদ হয়েছে, “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল বা সাদৃশ্য রাখবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে।” (আবু দাউদ)

→১০/ “আল্লাহ ও তাঁর রসুল (সঃ) কোন কাজের আদেশ করলে কোন মু’মিন পুরুষ ও নারীর ঐ বিষয়ে
আপত্তি করার ক্ষমতা নেই। যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়।” (সুরা আহযাবঃ ৩৬)

→১১/ "মুসলমানের উচিত তার ধর্ম নিয়ে গর্ববোধ করা। ধর্মীয় বিধানগুলো বাস্তবায়ন করা। লজ্জাবোধ করে অথবা সৌজন্য দেখাতে গিয়ে এক্ষেত্রে কোন শৈথিল্য না দেখানো। বরং আল্লাহকে লজ্জাবোধ করা অধিক যুক্তিযুক্ত।" (শাইখ সালিহ আল মুনাজ্জিদ)

★ তাহলে কি করে পূজার মতো শিরকের আস্তানায় একজন মুসলিম উপস্থিত থাকতে পারে ?আল্লাহ্‌ আমাদের সকলকে এসব ঘৃণ্য কাজ হতে হেফাযত করুন। আমীন।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password