রমজানের দিনগুলোতে আমরা চেষ্টা করছি সকল পাপ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে

রমজানের দিনগুলোতে আমরা চেষ্টা করছি সকল পাপ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে
MostPlay

আলহামদুলিল্লাহ, পবিত্র মাহে রমজানের রোজাগুলো সুস্থতার সঙ্গে রাখার সৌভাগ্য পাচ্ছি। রমজানের এই দিনগুলোতে আমরা চেষ্টা করছি সকল প্রকার ছোট বড় পাপ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে। জানি না, কতটুকু এতে সফল হতে পারব।আমরা যদি নিষ্ঠার সঙ্গে রমজানের রোজাগুলো রাখি এবং পূর্বের পাপের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই- তাহলে হয়তো তিনি রমজানের কল্যাণে আমাদেরকে ক্ষমা করেও দিতে পারেন। যেভাবে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সওয়াবের প্রত্যাশা ও বিশ্বাস নিয়ে রোজা রাখবে, তার পূর্ববর্তী জীবনের পাপরাশি মোচন করে দেওয়া হবে।’ (বোখারি-মুসলিম)

আমাদের জানা অজানা অনেক পাপ রয়েছে। সকল পাপের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে পরিশুদ্ধ হতে হবে। পাপ মোচনের উত্তম মাস হল মাহে রমজান। অনেক সময় ছোট-খাট পাপ কাজকে আমরা গুরুত্ব দেই না। কিন্তু পাপ ছোট হোক বা বড় সব ধরণের পাপ ইসলামে নিষিদ্ধ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এবং তোমরা তোমাদের পাপসমূহকে এই কারণে গোপন করতে না যে, পরকালে তোমাদের কর্ণ, তোমাদের চক্ষু এবং তোমাদের চর্ম তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে, বরং তোমরা ধারণা করতে যে, আল্লাহ তোমাদের অনেক কার্যকলাপ সম্বন্ধে অবগত নন যা তোমরা করছ’ (সুরা হামিম আস সাজদা, আয়াত: ২২)।

হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, হজরত আব্দুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেছেন,  বায়তুল্লাহর কাছে দু’জন কুরায়শী এবং একজন সাকাফী অথবা দু’জন সাকাফী ও একজন কুরায়শী বসেছিলেন। তাদের পেটের চর্বি ছিল খুব বেশি। কিন্তু অন্তরে বুদ্ধি ছিল খুব কম। তাদের একজন বললো, তুমি কি মনে কর আমরা যা বলছি আল্লাহ তা শুনছেন? 

অপরজন বললো, আমরা জোরে বললে তিনি শুনতে পান আর চুপে চুপে বললে শুনতে পান  না। অপরজন বললো, জোরে জোরে বললে যদি শুনতে পান তবে চুপে চুপে বললেও শুনতে পাবেন। তখন আল্লাহতায়ালা নাযেল করলেন, তোমরা দুনিয়ার অপরাধ করার সময় যখন লুকোতে, তখন তোমাদের এ চিন্তা ছিল না যে, তোমাদের চোখ, কান, চামড়া তোমাদেরই বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে, বরং তোমরা ধারণা করছিলে যে, তোমরা যা জান এর অনেক কিছুই আল্লাহ জানেন না’ (বোখারি)। 

মূলত যারা পাপ কাজ করবে তাদের অঙ্গ-প্রতঙ্গই বিচার দিবসে সাক্ষ্য দিবে যে তারা কি করেছে। আর মহান আল্লাহতায়ালা সবই দেখেন ও জানেন। সে দিন পাপীদের অপকর্মের ছবি তাদের চোখে মুখেই ফুটে উঠবে, তারা ঐ সব পাপ কর্ম করেছে কি করে নি, এরূপ প্রশ্নের কোনোই প্রয়োজন হবে না। মানুষ আল্লাহপাকের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হয়েও আজ আমরা কত পাপ কাজই না করি। গায়ে শক্তি আছে বলে শক্তিহীনের ওপর চড়াও হচ্ছি, অর্থ আছে বলে অর্থহীনকে তুচ্ছ জ্ঞান করছি, এক কথায় যত পাপ আছে সবই আমার দ্বারা সংঘটিত হচ্ছে। 

রমজান আসলে অধিক মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে দেই। এমন কোন পাপ কাজ নেই যা মানুষের দ্বারা হচ্ছে না।কবি শেখ সাদী (রহ.) কত সুন্দরই না বলেছেন ‘আমি ওই পিপীলিকা, যাকে প্রতিদিন মানুষেরা ইচ্ছায় অনিচ্ছায় পদদলিত করে চলে যায়। আমি বল্লা নই যে, মানুষকে দংশন করে কান্না-কাটি করার এবং কষ্ট দেব। আমি এ নেয়ামতের শোকর কীভাবে আদায় করব যে, মানুষকে কষ্ট দেয়ার শক্তি আমার নেই।’ 

আমরা কী কখনও ভেবে দেখেছি যে, সৃষ্টির মাঝে শ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী আমরা কিন্তু আমাদের কাজকর্মে কী আদৌ এর প্রমাণ দিতে পেরেছি? এর জন্য তো আমাদেরকে দিনরাত আল্লাহপাকের দরবারে শুকরিয়া আদায় করা উচিত। অথচ শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হয়েও আজ আমার দ্বারা কতই পাপই না সংঘটিত হচ্ছে। আমাদেরকে এমনভাবে জীবন পরিচালনা করতে হবে আমাদের দ্বারা যেন কোনো ধরণের পাপ কাজ সংঘটিত না হয়। 

যেহেতু পবিত্র রমজান মাস অতিবাহিত করছি, তাই আসুন নিজের সব পাপের জন্য ক্ষমা চেয়ে রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের আধ্যাত্মিক পানীয় পানে সিক্ত হই। নিজেদের পাপের জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাই। হে দয়াময় আল্লাহ! পবিত্র মাহে রমজানের কল্যাণে আমাদেরকে ক্ষমা করে তোমার রহমতের চাদরে আবৃত করে নাও, আমিন।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password