আমি এর মুখোমুখি হয়েছি।
আমার বড় বাবুটার বয়স তখন ৩ বছর। আমি আবারো কনসিভ করি। বয়স কম হওয়ায় অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যায়।
এতোটাই দুর্বল হয়ে গিয়েছিলাম যে বিছানা থেকেও উঠতে পারতাম না।
আমার ছোট বোন কে আমার মা আমার বাসায় পাঠায় আমার মেয়েটার দেখাশুনা করার জন্য।
বাচ্চা নেয়ার কোনো ইচ্ছাই ছিলোনা, কিন্তু শ্বশুড় বাড়ির সবার আবদার ছেলে না হলে বংশের হাল কে ধরবে।
শাশুড়ি ও বুঝাতেন। কারন আমার স্বামী সবুজ ছিলো বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান।
অবশেষে আল্লাহ মুখ তুলে তাকালেন, কন্সিভ করলাম।
ছেলে হোক বা মেয়ে আমি চাই আমার বাবুটা সুস্থ হোক।
শুরু থেকেই আমার ছোট বোন আমার সাথেই আমার বাড়িতে থাকতো।
সবুজ আর ইরার ( ছোট বোন) মেলামেশা আমি কখনোই সন্দেহের চোখে দেখিনি।
ভাবতাম সবুজের ভাই বোন নেই ও হয়তো আমার বোনকে নিজের বোনের মতোই ভালোবাসে।
তাদের ঘনিষ্ঠতা ঠিক কখন থেকে শুরু হয়েছিলো আমার জানা নাই।
যখন আমি ৭ মাসের গর্ভবতী।
এক রাতে ঘুম ভেঙে গেলো। পাশে তাকিয়ে দেখি সবুজ বিছানায় নাই।
উঠে পানি খেতে গেলাম, হঠাৎ ইরার ঘর থেকে কিছু একটা পরে যাওয়ার শব্দ পেলাম।
ভাবলাম ইরা হয়তো জেগেই আছে।
দরজার কাছে যেতেই, সবুজ বের হয়ে এলো।
ওকে খুব বিষন্ন দেখাচ্ছিলো।
আমাকে দেখে ভূত দেখার মতো আৎকে উঠলো।
বললো বাবুকে দেখতে আসছিলাম।
ইরার সাথে আমার মেয়েটাও ঘুমায় বলে সেদিন আর কোন সন্দেহ হয়নি।
আমি এতোটাই বোকা ছিলাম এর পরেও সন্দেহ হয়নি।
এর কিছুদিন পর পাশের বাসার এক ভাবী বললেন ইরাকে নাকি প্রায়ই সবুজের সাথে বাইকে করে ঘুরতে দেখে।
আমি কিছুটা অবাক হই, ঘুরবে তো আমাকে লুকানোর কি আছে।
ভাবীকে উলটা দশ কথা শুনিয়ে দেই ছোট মন মানসিকতার কথা বলে।
একদিন আমার শাশুড়ি আমাকে বলে ইরা কে বাসায় পাঠায় দিতে, আমি উলটা বলি ও গেলে আমি সামলাতে পারবো না।
তখন আমার ৮ মাস।
আমার শাশুড়ি আর আমি ডাক্তার দেখাতে যাই, ইরা বাসায় একা।
সবুজ অফিসে।
ডাক্তার দেখানো শেষে বাসায় ফিরে দেখি দরজা ভিতর থেকে লক করা, চাবি থাকায় আমি তালা খুলে ডিরেক্ট আমার ঘরে যাই।
হঠাৎ সবুজের কন্ঠ শুনতে পাই ইরার ঘর থেকে, আমি গিয়ে ওদের ঐ অবস্থায় দেখে নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগছে ও এই দেখে আমার মাসুম বাচ্চাটাকে পাশেই ঘুমন্ত অবস্থায় রেখে ওরা এই পাপ কাজ অনায়াসে করছে।
আমি বের হয়ে আসি, পিছনে দেখি আমার শাশুড়ি মা।
উনি উনার ছেলেকে গালাগালি করা শুরু করলো, হয়তো চড় ও মেরেছিলো কয়েকটা।
আমার বোনকে সেদিনই বাসা থেকে বের করে দিয়েছিলো আমার শাশুড়ি।
আমার কি বলা উচিৎ ছিলো জানিনা, আমি কিছুই বলিনি সেদিন।
সবুজ আর ইরা দুজনই অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চেয়েছিলো অনেকবার।
আমি কেনো জানি উদার হতে পারিনি। ক্ষমা করতে পারিনি ওদের।
সবুজের সাথে বিয়েটা পারিবারিক ভাবেই হয়েছিলো, অনেক ভালোবাসতাম ওকে।
বিশ্বাস টা ছিলো প্রবল।
ইরা আমার চেয়েও রুপবতী, মেধাবী। কিন্তু ও আমার আপন বোন হয়ে এরকম একটা কাজ করবে ভাবতেও পারিনি।
আমার ছেলেটা জন্মালো।
দেখতে ঠিক বাবার মতো হয়েছে। ছেলেকে পেয়ে শ্বশুড় শাশুড়ি সবুজ কে মাফ করে দিতে বললেন।
এই প্রথম আমি তাদের মুখের উপর কথা বলি, ক্ষমা করা সম্ভব না বলেছিলাম।
ঠিক করলাম ডিভোর্স দিবো।
সব কিছু রেডি করতে কিছুদিন সময় লাগলো।
প্রায় ২ মাস আমি একই বাড়ি থেকেও সবুজের সাথে কোনো কথা বলিনি।
এর কিছুদিন পরেই শুনলাম ইরা প্রেগনেন্ট।
আমার বাবা মা আত্মীয় স্বজন সবাই জানা জানি হলো।
আমি সবুজ কে ডিভোর্স দিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে আসি।
আসার সময় আমার শ্বাশুড়ি কে অনুরোধ করি ইরাকে পুত্রবধূ করে আনতে। উনি প্রথমে রাজী না হলেও পরে মানুষের কথা বন্ধ করার জন্য রাজী হন।
বাবা মা ইরাকে বিয়ে দিয়ে আমার সাথে রাজশাহী চলে আসেন।
ইরার সাথে এর পর আর কখনো যোগাযোগ হয়নি।
কেমন আছে ওরা জানিনা।
হয়তো অনেক ভালো আছে।
ধোকাবাজরা ভালোই থাকে কারণ তারা ভালো থাকার জন্য ধোকাবাজী করে।
আমার ছেলের বয়স এখন ১০ বছর, মেয়ের ১৩।
বাবা মা আর ছেলে মেয়েকে নিয়েই ভালো আছি।
আল্লাহর রহমতে একটা ভালো জব পাই, যা বেতন পাই চলে যায়।
আমার সন্তানেরা জানে তার বাবা মৃত।
আমি চাই না আমার সন্তান তার বাবাকে প্রতারক হিসেবে জানুক।
সেদিন সবুজকে কিছুই বলিনি, কারণ আমার বিশ্বাস আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন