যে ৫ কারণে বাংলাদেশকে করোনা ঝুঁকিপূর্ণ ভাবছে বিশ্ব

যে ৫ কারণে বাংলাদেশকে করোনা ঝুঁকিপূর্ণ ভাবছে বিশ্ব
MostPlay

বাংলাদেশে এখনো করোনা মহামারী আকার ধারণ করেনি। সীমিত সংখ্যক করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে, যার অর্ধেকের বেশিই এখন সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে গেছে। মৃত্যুর সংখ্যাও খুব বেশি নয়। তারপরেও সারা বিশ্ব যেন বাংলাদেশকে নিয়ে আতঙ্কিত, উদ্বিগ্ন। সত্য-মিথ্যা তথ্য-পরিসংখ্যান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরছে ফিরছে।
এগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা কতটুকু তা নিয়ে নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও গত কয়েকদিনে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশিরা বাংলাদেশ ত্যাগ করছে। মার্কিন দূতাবাসের একটি বিশাল অংশের কর্মকর্তারা আজ দেশ ত্যাগ করেছেন, এছাড়া জাপানসহ বিভিন্ন কূটনৈতিকরা দেশ ত্যাগ করছেন। বিভিন্ন কূটনৈতিক মহলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে যে, বাংলাদেশে করোনা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়লে সেটা নিরাপদ হবেনা।
তাঁর তুলনায় তাঁরা নিজেদের দেশেই চলে যেতে যান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থা বাংলাদেশের তুলনায় ভয়াবহ তারপরেও মার্কিন কূটনৈতিকরা কেন বাংলাদেশ ছেড়ে তাঁদের দেশে চলে যাচ্ছেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে কয়েকজন কূটনৈতিক বলেছেন যে, নানা কারণেই তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তবে সবথেকে বড় কারণ হলো, তাঁরা নিজেদের দেশে ফিরে আশ্বস্ত হতে চান। বিভিন্ন কূটনৈতিক মহলের সাথে যোগাযোগ করে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মহলে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করার পাঁচটি কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে। বাংলাদেশকে করোনাভাইরাসের ঝুঁকিপূর্ণ মনে করার পেছনে সেই পাঁচটি কারণ হলো-
১. সীমিত পরীক্ষা:- প্রত্যেকটি দেশ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে যে, বাংলাদেশের যে জনসংখ্যা সেই তুলনায় পরীক্ষা করা হচ্ছেনা। সীমিত আকারে পরীক্ষা হচ্ছে, সীমিত পরীক্ষার কারণে আসলে করোনা সংক্রমণের প্রকৃত ধারণাটা পাওয়া যায় না। ৮ মার্চ থেকে এই পর্যন্ত ১২শ মানুষের পরীক্ষা করা হয়েছে, যেটা অন্যান্য দেশের তুলনায় খুবই কম। আর এই কারণেই বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে অনেকে।
২. চিকিৎসার অপ্রতুলতা:-
বাংলাদেশে করোনা চিকিৎসার যে প্রস্তুতি, সেই প্রস্তুতিকে সন্তোষজনক মনে করছে না অনেকে। যদিও বাংলাদেশের তরফ থেকে বারবার বলা হচ্ছে যে বাংলাদেশের প্রস্তুতি ভালো। কিন্তু বিভিন্ন কূটনৈতিক মহল মনে করছে যে, এখন পর্যন্ত সব চিকিৎসকের হাতে পিপিই পৌঁছান হয়নি, এখন পর্যন্ত আইসিইউ, ভেন্টিলেটরের সংখ্যাও খুব অপ্রতুল।
যদি বাংলাদেশে করোনা ব্যাপক হারে সংক্রমণ হয়, তাহলে এই অপ্রতুল চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে তা মোকাবেলা করা সম্ভব না। যদিও সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে যে, প্রস্তুতির অভাব নেই। কিন্তু বাংলাদেশের জনসংখ্যা অনুপাতে যে পরিমাণ আইসিইউ, ভেন্টিলেটর থাকা উচিত তা নেই এবং এটাও তাঁদের উদ্বেগের একটি বড় কারণ।
৩. সামাজিক মেলামেশা:-
বাংলাদেশের মানুষ সামাজিক মেলামেশা পছন্দ করেন এবং ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখেন। এমনকি সরকারের বাধ্যতামূলক ১০ দিনের সাধারণ ছুটিতেও সামাজিক মেলামেশা বন্ধ হয়নি। আর একারণেই বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন কূটনীতিকরা।
৪. নিয়ন্ত্রিত তথ্য এবং তথ্য গোপন:-
বাংলাদেশে তথ্য নিয়ন্ত্রিত হয় বা তথ্য গোপন করা হচ্ছে বলে মার্কিন দূতাবাসের বেশকিছু কূটনীতিকরা মনে করেন। আর একারণেই তাঁরা মনে করেন যে, যদি বাংলাদেশে করোনা সংক্রমিত হয় তাহলেও সেই তথ্য প্রকাশ পাবেনা। ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলেও তা বোঝা যাবেনা। যে কারণে তাঁরা বাংলাদেশকে নিরাপদ মনে করছেন না।
৫. বৈজ্ঞানিক গবেষণার অভাব:-
সবশেষ কারণ হলো বৈজ্ঞানিক গবেষণার অভাব। একথা বাংলাদেশে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকরা মনেকরেন যে, বাংলাদেশে ভালো মানের বেশ কিছু গবেষক রয়েছে, কিন্তু বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং এই গবেষণাকে পৃষ্ঠপোষকতা করার অভাব রয়েছে। বাংলাদেশে যদিও পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা রয়েছে, তবে এই বৈজ্ঞানিক গবেষণাগুলো কিছু সরকারের নিয়ন্ত্রণে।
করোনা পরীক্ষার প্রথম ৩ সপ্তাহ পুরো পরীক্ষা ব্যবস্থাটি সরকারি প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর কর্তিক নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে আইইডিসিআর ছাড়াও বেশকিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা বৈজ্ঞানিক কাজকর্ম করায় বিশ্বে প্রশংসিত এবং আলোচিত। আর এই বৈজ্ঞানিক গবেষণার অভাবের কারণে বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন অনেকে।
শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাস কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হবে সেটা পরের বিষয়। তবে যারা বাংলাদেশকে ঝুকিপূর্ণ মনে করছেন তাঁদের কাছেও সেরকম কোন তথ্য-প্রমাণ নেই। শুধুমাত্র অনুমান নির্ভর কারণেই তাঁরা বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে তাঁরা দেশত্যাগ করছেন বলে জানা গেছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password