ঈদে মিলাদুন্নবী এক অবিস্মরণীয় দিন!!

ঈদে মিলাদুন্নবী এক অবিস্মরণীয় দিন!!
MostPlay

মো: মনিরুল ইসলাম- আজ ১২ রবিউল আউয়াল শুক্রবার, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স:)। প্রায় ১৪শত বছর আগে এই দিনে আরবের মরু প্রান্তরে মা আমিনার কোলকে আলোকিত করে জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (স:)। আবার এই দিনেই তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। আইয়ামে জাহেলিয়াতের অন্ধকার দূর করে তৌহিদের বানী নিয়ে এসেছিলেন এই মহামানব। প্রচার করেছেন শান্তির ধর্ম ইসলাম।

তাঁর আবির্ভাব এবং ইসলামের শান্তির অমীয় বানী বিশ্বের বুকে আলোড়ন সৃষ্টি করে। তিনি নবুওয়াতী সিলসিলার খতামুন নাবিয়্য়ীন তথা সর্বশেষ নবী ও রাসুল। তিনি ৫৭০খ্রিষ্টাব্দ আরবী রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে জন্ম গ্রহণ করেন আবার এ দিনেই ওফাত লাভ করেন। ১২ রবিউল আওয়াল মুসলমানদের কাছে এক পবিত্র দিন। মুসলিম সম্প্রদায় এ দিনটি ঈদে মিলাদুন্নবী (স:) হিসেবে উদ্যাপন করে থাকে।  তাই আজ প্রতিটা মুসলমানের নিকট বিশেষ স্মরণীয় দিন। তিনি তাঁর আদর্শের জন্য সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হিসেবে সারা বিশ্বের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কাছে স্বীকৃত।

তিনি আদর্শের মহিমা দিয়ে বিশ্বকে করেছেন জয়। রেখে গেছেন অনুপ্রেরণার স্বাক্ষর। তরবারি নয়, নমনীয় আচরণ ও কোমল ভাষা দিয়ে মানুষের অন্তরকে করেছেন জয়।  সারা আরব বিশ্বে যখন পৌত্তলিকতার অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিল, তখন আল্লাহ তায়ালা তার পেয়ারা হাবিব বিশ্বনবী (স):- কে বিশ্ব মানবতার মুক্তির জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছিলেন। তিনি অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার, নিপীড়ন দেখলে প্রতিবন্ধক হয়ে দাড়িয়েছেন সামনে। মুলৎপাটন করেছেন এর ভিত্তি।

রুখে দিয়েছেন এর অগ্রযাত্রা। তারই নজির হিসেবে কৈশরে মাত্র ১৫ বছর বয়সে গড়ে তুলেছিলেন হিলফুল ফুজুল নামে শান্তি সংগঠন। যা ফিজার যুদ্ধের ভয়াবহতা রুখতে নিপীড়িত মানুষের পাশে দাড়িয়েছে প্রশান্তির ছায়া হয়ে।তিনি ৪০ বৎসর বয়সে নবুওয়াতী পান। এরপর বিশ্ববাসীকে মুক্তি ও শান্তির পথে আহবান জানান। তিনি অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার, গোড়ামী, দাসত্ব ও পৌত্তলিকতার ভয়াবহতা রুখতে প্রতিষ্ঠা করেছেন মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র। সুষ্ঠু রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য তৈরি করেছেন বিশ্বের প্রথম লিখিত সংবিধান মদীনা সনদ। যার মূল ভিত্তি কুরআন ও হাদীস।

প্রতিষ্ঠা করেছেন জাত,ধর্ম-বর্ণ, উচু-নীচু, ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকলের মাঝে সাম্যবাদ। বলেছেন, আল্লাহর কাছে সকল মুসলমান সমান। সকল মুসলমান ভাই-ভাই। মানুষ বিচার হয় তার কর্মফলের মাধ্যমে। বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসুল (স:) বলেছিলেন, ‘ যদি তোমাদের মাঝে যোগ্যতায় কোন কৃতদাস শাসক নিযুক্ত হয়, তাহলে সকলে তার অনুগত্য করবে।’ মুসলমানের চলার পথের পাথেয় হিসেবে রেখে গেছেন তার উত্তম জীবনাদর্শ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ হচ্ছে রাসুলের (স:) জীবনাদর্শ।’ (সূরা আহযাব-২১) বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসুল (স:) সকলকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘তোমদের জন্য দুইটা জিনিস রেখে গেলাম, যদি আকড়ে ধর তবে কখনো পথভ্রষ্ঠ হবে না। ১. কুরআন ২. সুন্নাহ/ নবীর জীবনাদর্শ।’

মহানবী (স:) সুদীর্ঘ ২৩ বছর মানবসত্তার চিরমুক্তির বার্তা প্রচার করে ইসলামকে একটি পূর্ণঙ্গ কাঠামোতে রূপ দিয়ে ৬৩ বৎসর বয়সে মহান আল্লাহর সান্নীধ্যে ইহলোক ত্যাগ করেন। সকল মুসলমানের নিকট তিনি প্রণাধিক প্রিয়। প্রতিটি মুসলমান গায়ে একবিন্দু রক্ত থাকতে কখনো ইসলাম বা নবীর (স:) শানের অবমাননা হইতে দিতে পারে না। তাইতো কোথাও কোন অমুসলিম ইসলাম বা রাসুলের (স:) শানের খেলাফ কিছু বললে/করলে দিকবিদিক মুসলমানের প্রতিবাদের হুঙ্কার ছড়িয়ে পড়ে। যেমন- সামপ্রতিক ফ্রান্স অবস্থাকে কেন্দ্র করে বর্তমান বিশ্বে প্রতিবাদী অবস্থা বিরাজমান চলছে। মুসলিম জাতি রাসুল (স:)-কে নিজ প্রাণ হতে অধিক ভালোবাসে।

ধর্মের জন্য প্রাণ দিতে কুণ্ঠাবোধ করে না। এটাই মুসলিম জাতির গৌরব। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেছেন - ‘তোমরা যদি আমাকে ভালোবাসতে চাও তাহলে নবীর আনুগত্য কর তবেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন।(সূরা আল-ইমরান-৩১) এ সম্পর্কে রাসুল (স:) বলেছেন, তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না আমাকে তোমাদের পিতা-মাতা, সন্তান ও অন্য সকল হতে অধিক ভালোবাসবে। (নাসয়ী-৫০১৩)  এ মহামানব অ›ধকারাচ্ছন্ন অশান্ত পৃথিবীতে এসেছিলেন শান্তির পয়গাম নিয়ে।

প্রতিষ্ঠা করে গেছেন শান্তির ধর্ম ইসলাম। আজকের এই দিনেই ঘটেছিল এ মহামানবের শুভ আগমন আবার একই দিনেই বিশ্বকে কাদিয়ে শুভ প্রত্যাবর্তন। তাই আজকের এই দিনটিকে মুসলিম জাহান বিশেষভাবে স্মরণ করে থাকে।  কেউ মিলাদ মাহফিল, কেউ বক্তৃতা/ আলোচনা সভা, কেউ আবার দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে দিনটাকে উদ্যাপন করে থাকেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সকল মুসলিমের পক্ষ থেকে রাসুল (স): এর রওজায় দুরুদ ও সালাম পৌছিয়ে দিন। সকল পরলোকবাসী মুসলমানের রুহের মাগফিরাত দান করুন। সকলকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুন। আমীন! 

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password