ক্রিকেটার তাসকিন আহমেদ ভয়ংকর হয়ে উঠবেন

ক্রিকেটার তাসকিন আহমেদ ভয়ংকর হয়ে উঠবেন
MostPlay

গত লকডাউনের সময় কঠোর পরিশ্রম করে নিজেকে বদলে ফেলেছেন তাসকিন আহমেদ, যার প্রতিফলন এখন মাঠে স্পষ্ট। ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে শেষ ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে চার বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা তাসকিন নিউজিল্যান্ড সিরিজেও দুর্দান্ত বোলিং করেন। গতি, আগ্রাসনে অতীতের তাসকিনকে ছাড়িয়ে গেছেন। বোলিংয়ে নিয়ন্ত্রণে আগে অধারাবাহিক হলেও এখন ধারাবাহিক।

শ্রীলঙ্কায় টেস্ট সিরিজে তাসকিনের সব দক্ষতা যেন এক হয়ে প্রস্ফুটিত হলো। নিষ্প্রাণ উইকেটে যখন দুই দলের প্রত্যেক বোলার ধুঁকছেন, তখন তাসকিন ঝরালেন আগুন। দিনের শুরুতে গতি যেমন ছিল, দিনের শেষেও ঠিক তা–ই।

এখন পর্যন্ত তিনিই টেস্ট সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বোলার। আজ টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা ১২৭ রানে ৪ উইকেটসহ তাসকিন নিয়েছেন মোট ৭ উইকেট। সতীর্থদের ক্যাচ হাতছাড়া না হলে সংখ্যাটা ১০ ছাড়াতে পারত।

ঢাকা থেকে প্রিয় ছাত্রের বোলিং দেখছেন গত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের বোলিং কোচ মাহবুব আলী। গত লকডাউনে মাহবুল আলীর সঙ্গেই কাজ করেছেন তাসকিন। এখন দূর থেকে বোলিংয়ের টুকটাক খুঁত চোখে পড়তেই নোটবুকে টুকে রাখছেন।

তাসকিন দেশে ফিরলেই আবার কাজ শুরু করবেন। কাল প্রথম আলোকে তিনি বলছিলেন, ‘প্রথম টেস্ট থেকে এই টেস্টে ভালো করেছে। লাইন-লেংথ ভালো ছিল। কিছু জায়গা নিয়ে আরও কাজ করার আছে। আমি আমাদের ট্রেনারের সঙ্গে কথা বলেছি। সে দেশে ফিরলেই এসব নিয়ে কাজ করব।’

সিরিজজুড়েই তাসকিনের গতি ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটারের আশপাশে ছিল। তবে তাসকিন ও মাহবুব আলীর লক্ষ্য ছিল নিয়মিত ১৪৫ কিলোমিটারে বল করার। গত লকডাউনের পর তিন দলের বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে ১৪৫ কিলোমিটারেই নাকি নিয়মিত বল করেছেন তাসকিন।

অনুশীলন ও ম্যাচে নো বলের ভয় নাকি তাসকিনের আগ্রাসন কিছুটা কমিয়ে দেয়। এখন আবার তাসকিনের গতি বাড়ানোর পরিশ্রমটা করতে হবে তাঁর কোচ ও ট্রেনারের।

‘নো বলের ভয়ে ওর আগ্রাসনটা কমেছে। গতি কিছুটা কমেছে। না হলে নিয়মিত ১৪৫–এর ওপরে বল করতে পারত। ৫ কিলোমিটার গতি কিন্তু বিরাট পার্থক্য। আমাদের এখন আবার গতি বাড়ানোর কাজ করতে হবে। তবে হাতে খুব কম সময় আছে। তাসকিনের টানা খেলায় ব্যস্ত থাকার কথা। এর ফাঁকে যা সময় পাব, তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করব’—বলছিলেন মাহবুব আলী।

নিউজিল্যান্ডে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির ছয় ম্যাচের পাঁচটিতেই খেলেছেন তাসকিন। এক ম্যাচে বিশ্রামে থেকেছেন। শ্রীলঙ্কাতেও পরপর দুই টেস্ট খেলছেন। গতি ও নিয়ন্ত্রণের মিশেলে তাসকিনকেই এখন মনে হচ্ছে বাংলাদেশের ১ নম্বর পেসার। বাংলাদেশ দলও চাইবে তিন সংস্করণের ক্রিকেটেই এখন তাঁকে খেলাতে।

সে ক্ষেত্রে চোটের ভয় তো আছেই। দীর্ঘদিন পর ছন্দে ফেরা তাসকিন আবার টানা ক্রিকেটের ভারে ভেঙে না যান! কোচ মাহবুব আলীকে এসব নিয়েও ভাবতে হচ্ছে, ‘আমরা চিন্তা করছি, ও দেশে ফিরলেই কিছু জিমের কাজ করাব। এক সপ্তাহ সময় পেলেই হবে। বিশ্রাম আর কিছু জিমের কাজ করলে, কিছু পেশি নিয়ে কাজ করলে ঠিক হয়ে যাবে আশা করি।’

আর সঙ্গে দক্ষতার উন্নতি নিয়ে কাজ চলবেই। সামনে প্রচুর সাদা বলের ক্রিকেট। ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে শুরু। এরপর জুনে জিম্বাবুয়ে সফরের পর বাংলাদেশে আসবে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড। এরপর আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। মাঝে আবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিও আছে।

তাসকিনের সামনের অনুশীলনে তাই যোগ হবে নানা রকম ইয়র্কার, ‘ওই সময়টা শুধু ইয়র্কার অনুশীলন করবে। আর কিছু না। জিম আর ইয়র্কার অনুশীলন। প্রিমিয়ার লিগ হলে ভালো। তখন ম্যাচেও অনেক কিছু পরীক্ষা করে দেখা যাবে। ৪ ওভারের ২৪ বলের মধ্যে বেশির ভাগই যেন ইয়র্কার মারতে পারে, সেই ব্যবস্থা করব। এরপর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেটা নিয়ে আসব।’

দেশের হয়ে এখন পর্যন্ত তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৬৪ ম্যাচ খেলে ৭৮ উইকেট নিয়েছেন তাসকিন। নিজের সামর্থ্যের বিচারে যা তেমন কোনো বড় অর্জন নয়। তবে ধাক্কা খেয়ে শেখা তাসকিনের ‘দ্বিতীয় জন্ম’ যেন তাঁকে নিয়ে নতুন আশার জন্ম দিচ্ছে। কঠোর পরিশ্রম, নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে নিজেকে বদলে ফেলা তাসকিন এ যাত্রায় কতদূর যান, সেটিই দেখার বিষয়।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password