করোনা ভাইরাস: সোমবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হচ্ছে টিকাদান

করোনা ভাইরাস: সোমবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হচ্ছে টিকাদান
MostPlay

জরুরী ব্যবহারের অনুমোদন পাওয়ার পর সোমবার থেকে মার্কিন জনগণ ফাইজার/বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন নেয়ার সুযোগ পাবে বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

ভ্যাকসিন বণ্টনের কাজ তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত জেনারেল গুস্তাভ পেরনা বলেছেন, এই সপ্তাহান্তেই ভ্যাকসিনের প্রথম ৩০ লাখ ডোজ যুক্তরাষ্ট্রের "সব রাজ্যে" পৌঁছে দেয়া হবে।

কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনটি ৯৫% সুরক্ষা দেয় এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনেরও (এফডিএ) ছাড়পত্র পেয়েছে।

শনিবারও যুক্তরাষ্ট্রে কোভিডের কারণে মারা যায় ৩ হাজার ৩০৯ জন।

জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এই তথ্য বিশ্বের যেকোন জায়গার চেয়ে ঐদিনে মৃত্যুর সর্বোচ্চ সংখ্যা এটি।

যুক্তরাষ্ট্রে নভেম্বর থেকে করোনাভাইরাসের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে।

ফাইজার/বায়োএনটেকের টিকা জরুরী ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেয়ার পর মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন-এফডিএ বলেছে এই মহামারিতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলস্টোন। এই ভ্যাকসিনটিতে অনুমোদন দিতে এফডিএ'র উপর ট্রাম্প প্রশাসন চাপ দিয়ে আসছিল।

এরইমধ্যে যুক্তরাজ্যে এই ভ্যাকসিনটির ব্যবহার শুরু হয়েছে।

শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জেনারেল পেরনা, যিনি মার্কিন সরকারের টিকাদান কর্মসূচী অপারেশন ওয়ার্প স্পিডের বিষয়ে বলেন যে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভ্যাকসিনগুলো পরিবহনের জন্য শিপিং কন্টেইনারে তোলা হবে।

সোমবার বিভিন্ন রাজ্যের ১৩৪টি স্থানে ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হবে। পরে মঙ্গলবারে আরো ৪২৫টি এবং বুধবার আরো ৬৬টি স্থানে ভ্যাকসিন দেয়ার কার্যক্রম চলবে।" তিনি বলেন।

পরের সপ্তাহে ফাইজার/বায়োএনটেকের প্রথম চালানের সব টিকা সরবরাহ শেষ হবে এবং আশা করা হচ্ছে যে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ ভ্যাকসিনের আওতায় আসবে।

জেনারেল পেরনা সাংবাদিকদের বলেন যে, তিনি শতভাগ নিশ্চিত যে কোভিডের মতো শত্রুকে পরাজয়ে প্রয়োজনীয় এই ডোজগুলো সুরক্ষিতভাবে পরিবহন করা হবে।

তিনি সতর্ক করে বলেন যে, যদিও এই কাজটি করতে সপ্তাহ খানেক লাগবে কিন্তু "প্রতিটি আমেরিকান ভ্যাকসিনের আওতায় আসার আগ পর্যন্ত আমরা থামবো না।"

ফাইজারের ভ্যাকসিন এরইমধ্যে যুক্তরাজ্য, কানাডা, বাহরাইন এবং সৌদি আরবের অনুমোদন পেয়েছে। এসব দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রও স্বাস্থ্যকর্মী এবং কেয়ার হোমে থাকা বাসিন্দাদের সবার আগে ভ্যাকসিন দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অগ্রাধিকারের তালিকার বাইরে থাকা মার্কিনীরা জানুয়ারির দিকে ভ্যাকসিন পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এপ্রিল থেকে স্বাভাবিকভাবেই ভ্যাকসিন সবার আওতায় আসবে।

ভ্যাকসিন নিয়ে এফডিএ কী বলেছে?

খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন-এফডিএ'র প্রধান স্টিফেন হান বলেন, ""যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্ব জুড়ে যে মহামারি এতো পরিবারকে আক্রান্ত করেছে তার বিরুদ্ধে লড়তে এই ভ্যাকসিনের অনুমোদন নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।"

তিনি বলেন যে, "উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার পরই" এই অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, "ভ্যাকসিনটি সুরক্ষা, কার্যক্ষমতা এবং উৎপাদন মানের দিক থেকে এফডিএ'র কঠোর, বৈজ্ঞানিক মানদণ্ড পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে।"

বৃহস্পতিবার, এফডিএ'র চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা ভ্যাকসিনটির জরুরী ব্যবহার অনুমোদন করে। ২৩ সদস্যের একটি প্যানেল নিশ্চিত করে যে, ভ্যাকসিনটির কার্যক্ষমতা এর ঝুঁকির তুলনায় অনেক বেশি।

এফডিএ বলছে যে, জরুরী ব্যবহারের অনুমোদন আর পূর্ণ অনুমোদন এক নয়। পূর্ণ অনুমোদন পেতে হলে ফাইজারকে আলাদা করে আবেদন করতে হবে।

মার্কিন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এর আগে বলা হয়েছিল যে, শুক্রবারের মধ্যে ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন দিতে মি. হানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এবং তা না হলে তাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছিল।

তবে এসব প্রতিবেদন "অসত্য" বলে উল্লেখ করে মি. হান বলেন, চাপের মুখে পড়ে সংস্থাটি টিকার পরীক্ষায় সুরক্ষার সাথে কোন আপোষ করেনি।

ভ্যাকসিনটি কীভাবে কাজ করবে?

করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে ফাইজার/বায়োএনটেকের ভ্যাকসিনটিই একমাত্র ভ্যাকসিন যেটি টেস্টের শেষের দিকে গিয়েও উল্লেখযোগ্য ফলাফল দেখাতে পেরেছে।

এটি নতুন ধরণের এমআরএনএ ভ্যাকসিন, যেটি মহামারির ভাইরাসটির জেনেটিক কোডের একটি ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে শরীরকে শেখায় যে কিভাবে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়তে হবে এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে।

এফডিএ বলে, "ভ্যাকসিনে কোভিড-১৯ ভাইরাসের ছোট এক টুকরো এমআরএনএ রয়েছে যা দেহের কোষকে ভাইরাসের স্বাতন্ত্র্য স্পাইক প্রোটিন তৈরির নির্দেশ দেয়।"

"যখন একজন ব্যক্তি ভ্যাকসিনটি গ্রহণ করেন, তখন তার দেহ স্পাইক প্রোটিনের কতগুলো কপি তৈরি করে, যা রোগ সৃষ্টি করে না, কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শেখায় যে কিভাবে সেগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে হয়, যা কোভিডে-১৯ এর বিরুদ্ধে একটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সহায়তা করে।"

২১ দিনের ব্যবধানে ভ্যাকসিনটির দুটি ডোজ দেয়া হয়। এরমধ্যে দ্বিতীয় ডোজটি একটি বুস্টার ডোজ। প্রথম ডোজটি দেয়ার পর থেকেই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী হতে শুরু করে কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার সাত দিন পর এটি পূর্ণ শক্তিশালী হয়।

ভ্যাকসিনটিকে অবশ্যই অত্যন্ত কম তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয় যার কারণে এটির বিতরণ প্রক্রিয়া কঠিন। ফাইজার জানায়, বিশেষভাবে তৈরি কন্টেইনার যা ড্রাই আইস ব্যবহার করে ভ্যাকসিনটিকে জমিয়ে রাখতে সহায়তা করে সেটিতে করে সরাসরি টিকাদানের স্থানে এটি সরবরাহ করা হবে।

ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিটি মার্চ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রকে ১০কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দিতে রাজি হয়েছে।

জুন নাগাদ মডার্না এবং জাতীয় স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের তৈরি আরেকটি ভ্যাকসিনের ২০কোটি ডোজ পাওয়ার কথা রয়েছে। তবে ভ্যাকসিনটি যুক্তরাষ্ট্রে এখনো অনুমোদন পায়নি।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password