ভারতফেরত তিন শিক্ষার্থীর করোনা পজিটিভ

ভারতফেরত তিন শিক্ষার্থীর করোনা পজিটিভ
MostPlay

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরের আন্তর্জাতিক অভিবাসন চৌকি (আইসিপি) দিয়ে ভারত থেকে ফেরত আসা ২০২ জন বাংলাদেশি নাগরিককে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে গত ২ মার্চ ভারত থেকে আসা তিনজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর করোনার নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ এসেছে। 

গত শুক্রবার (১৪ মে) তাদের করোনার নমুনা পরীক্ষা করার জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়। সেই ফলাফল আজ রবিবার  পজিটিভ এসেছে। এদের মধ্যে তৃতীয় দফা আজ রবিবার (১৬ মে) কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে ২৩ জন। তাদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে শেষ হয়েছে। ওই ২৩ ব্যক্তির মধ্যে কোনো সমস্যা ছিল না। এরপরও তাদের করোনার নমুনা পরীক্ষা জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়। সেই ফলাফল নেগেটিভ এসেছে। তারা আজ রবিবার বাড়িতে ফিরত যাবেন।

এর আগে প্রথম দফায় গত বৃহস্পতিবার কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে ছয়জন ও দ্বিতীয় দফা গত শুক্রবার ছয়জন ছাড়পত্র পেয়েছেন। পাটগ্রাম উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার (১৫ মে) বাইরে থেকে খাবার কিনতে হয়নি পাটগ্রাম উপজেলা সদরের দুই আবাসিক হোটেল ও বুড়িমারী স্থলবন্দরের তিন আবাসিক হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন তাদেরকে। স্থানীয় সাংসদ মোতাহার হোসেন ব্যক্তিগত অর্থায়নে তাদের খাবার দিয়েছেন।

এর আগে তাদের গত শুক্রবার ঈদের দিন স্থানীয় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমীন বাবুলের ব্যক্তিগত অর্থায়নে ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাবার দেওয়া হয়। এছাড়াও ঈদের দিন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের পক্ষে থেকে জেলা কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন তাঁদের উন্নত মানের সকালের নাশতা ও দুপুরের খাবারের প্যাকেট বিনা মূল্যে খাবার সরবরাহ করা হয়েছে।

পাটগ্রাম উপজেলা প্রশাসন ও বুড়িমারী ইমিগ্রেশন পুলিশের সূত্রে ভাষ্যমতে জানা গেছে, প্রথম দফা ২৬ এপ্রিল থেকে এ স্থলবন্দর দিয়ে পাসপোর্ট যাত্রী পারাপার সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয় ১৪ দিনের জন্য। পরে গত ৮ মে দ্বিতীয় দফা আরো ১৪ দিন বাড়ানো হয়েছে।

এরপর ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাসের অনুমতি নিয়ে ২৮ এপ্রিল প্রথম দিন ছয় ব্যক্তি দেশে ফেরত আসেন। এরপর পর্যায়ক্রমে আজ রবিবার একজনসহ ২০২ জন দেশে ফিরেছেন। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ভিসার মেয়াদ ১৫ দিনের কম থাকা যাত্রীরা দেশে ফিরতে পারবেন।

বুড়িমারী স্থবন্দরের পুলিশ অভিবাসন কেন্দ্রের ভাষ্যমতে, ভারতের কলকাতায় বাংলাদেশি উপ-হাইকমিশনার কার্যালয় থেকে এনওসিসহ করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে এ অভিবাসন কেন্দ্র দিয়ে বাংলাদেশ ও একইভাবে ভারত   পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন এমন নির্দেশনা রয়েছে।

পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনা ফোকাল পারসন ডা. কে এম তানজির আলম বলেন, করোনায় আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের শরীরে কোনো উপসর্গ নেই। এজন্য তিন জনই সামটাইমস আবাসিক হোটেলে আইসোলেশনে থাকবে। নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাটগ্রাম উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রের ভাষ্যমতে, গত ২৬ এপ্রিল উপজেলা প্রশাসনের এক জরুরি সভায় ভারত থেকে ফিরে আসা বাংলাদেশি পাসপোর্ট যাত্রীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এরপর থেকে ভারত থেকে আসা বাংলাদেশি নাগরিকদের ১৪ দিনের ছয় হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হচ্ছে। সঙ্গে তাদের অভিভাবক ও বাবা-মা রয়েছে। তবে এ প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে সম্পূর্ণ নিজ খরচে থাকতে হবে। আর তা দেখভাল করবে স্থানীয় উপজেলা ও থানা প্রশাসন।

পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা গেছে, জেলা সদর ও উপজেলা মিলে ছয়টি আবাসিক হোটেল প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন সেন্টার করা হয়েছে। তাছাড়াও লালমনিরহাট নার্সিং ইনস্টিটিউট ও সদর হাসপাতালও রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তাছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি কক্ষে পাঁচ শয্যাবিশিষ্ট আইসোলেশন সেন্টার প্রস্তত রাখা হয়েছে।

পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ভারত থেকে ফিরে আসা আজ রবিবার ১ জনসহ ২০২ ব্যক্তিকে বুড়িমারী স্থলবন্দরসহ ছয় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হচ্ছে। বাংলাদেশি তিনজন শিক্ষার্থীর শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তাদের বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজ- খবর নিচ্ছি। আমরা জনগণের সহযোগিতা কামনা করছি।

রবিবার (১৬ মে) বিকেল সাড়ে ৫টায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব থেকে পাওয়া পরীক্ষায় করোনাভাইরাস শনাক্তের বিষয় জানা যায়। এটি করোনা ভাইরাসাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট, সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট কিনা জানা যায়নি। এর পর রবিবার (১৬ মে) আবারও নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার আইডিসিআরে পাঠানো হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, ঢাকায় পরীক্ষার পর জানা যাবে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট করোনা ভাইরাস কি না। এ পর্যন্ত তিন দফায় কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে ৩৫ জন।

এ বিষয়ে পাটগ্রাম উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুর রহমান বলেন,  আমরা সব সময় তাদেরকে দেখভাল করছি। গতকাল স্থানীয় সাংসদের অর্থায়নে তাদের খাবার দেওয়া হয়েছে। এর আগে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ঈদের দিন তাদের উন্নত মানের খাবার সরবরাহ করা হয়েছে।

বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাত বলেন, ভারতফেরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থাকা অভিভাবকরা অবাধে বুড়িমারী ইউনিয়নের বাজারে চলাফেরা করছে। বাধা করলে কর্ণপাত করে না। ভারত থেকে আসা পণ্যবাহী গাড়ির চালকদেরকেও সর্তকভাবে গাড়িতে থাকার অনুরোধ ও যত্রতত্র চলাফেরায় নিষেধ করা হলেও কেউ এসব কথা শুনছেন না।

স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন কয়েক শ ট্রাকের সঙ্গে চালকরা প্রবেশ করছেন। বুড়িমারী ইউনিয়নের জনগণ ভারতীয় উদ্বেগজনক করোনাভাইরাসের ভয়ের মধ্যে রয়েছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password