ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে করোনা হাসপাতাল

ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে করোনা হাসপাতাল
MostPlay

শূন্য হয়ে পড়ছে কভিড-১৯ আক্রান্তদের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলো। গতকাল সারা দেশে করোনা হাসপাতালের সাধারণ শয্যা ৭৯ ও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) শয্যা ৫৪ শতাংশই ফাঁকা ছিল। রোগী না থাকায় ৬টি হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি বন্ধ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

দেশে প্রতিদিনই কমছে করোনা শনাক্তে নমুনা টেস্টের সংখ্যা। গতকাল টেস্ট হয়েছে ১১ হাজার ২৫৬টি। করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ২৭৮ জনের। সংক্রমণ হার ছিল ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ধীরে ধীরে কমছে সংক্রমণ হার। তবে মৃত্যুহার এখনো আশঙ্কাজনক। গতকাল মারা গেছেন ১৭ জন। মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. ফরিদ হোসেন মিয়া বিডিটাইপকে বলেন, ‘রোগী কমে যাওয়ায় আমরা ১২টি কভিড হাসপাতালকে নন-কভিডে রূপান্তর করার প্রস্তাব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। এর মধ্যে ৬টি হাসপাতালে করোনা সেবা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।রোগী না থাকায় এ হাসপাতালগুলোয় অনেক শয্যা ফাঁকা থাকত। এজন্য করোনা চিকিৎসা বন্ধ করে সাধারণ চিকিৎসা দেওয়া হবে।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো দেশে শনাক্তের হার টানা তিন সপ্তাহ ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে ধরা যায়। সে হিসেবে দেশের সংক্রমণ পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা না আসা পর্যন্ত নতুন এ ভাইরাস প্রতিরোধের অন্যতম উপায় হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে আছে বাইরে বের হলে মাস্ক পরা, কিছু সময় পরপর সাবানপানি দিয়ে হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজার ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা এবং লোকসমাগম এড়িয়ে চলা। এসব একসঙ্গে মেনে চলতে হবে। কিন্তু এখন স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে শৈথিল্য দেখা যাচ্ছে।

এতে সংক্রমণ আবার যে কোনো সময় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীর সংখ্যা ৮০ হাজার ৪৮১। এর মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২ হাজার ৭৭২ জন। বাকিরা বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালে শয্যা ফাঁকা থাকলেও যাচ্ছেন না রোগীরা। গত আগস্ট থেকে করোনা টেস্টেও দেখা দিয়েছে ধীরগতি। ২২ আগস্ট নমুনা টেস্ট হয়েছে ১১ হাজার ৩৫৬টি। শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ২৬৫ জন। শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

মারা গেছেন ৪৬ জন। মৃত্যুহার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ২৩ আগস্ট নমুনা টেস্ট হয়েছে ১০ হাজার ৮০১টি। শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৯৭৩ জন। শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। মারা গেছেন ৩৪ জন। মৃত্যুহার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ২৪ আগস্ট করোনা টেস্ট হয়েছে ১৩ হাজার ৩৮২টি। শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৪৮৫ জন। সংক্রমণ হার ১৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। মারা গেছেন ৪২ জন। মৃত্যুহার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ২৫ আগস্ট করোনা টেস্ট হয়েছে ১৪ হাজার ১৫৩টি। শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৫৪৫ জন। শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ। মারা গেছেন ৪৫ জন। মৃত্যুহার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

গত ২২ সেপ্টেম্বর নমুনা টেস্ট হয়েছে ১৪ হাজার ১৬৪টি। করোনা পজিটিভ হয়েছেন ১ হাজার ৫৫৭ জন। সংক্রমণ হার ১০ দশমিক ৯৯ শতাংশ। মারা গেছেন ২৮ জন। মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪২ শতাংশ। ২৩ সেপ্টেম্বর নমুনা টেস্ট হয়েছে ১৪ হাজার ১৫০টি। শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৬৬৬ জন। সংক্রমণ হার ১১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। মারা গেছেন ৩৭ জন। মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ২৪ সেপ্টেম্বর নমুনা টেস্ট হয়েছে ১২ হাজার ৯০০টি। শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৪০ জন। সংক্রমণ হার ১১ দশমিক ৯৪ শতাংশ। মারা গেছেন ২৮ জন। মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ২৫ সেপ্টেম্বর নমুনা টেস্ট হয়েছে ১২ হাজার ৪৭৩টি। শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩৮৩ জন। সংক্রমণ হার ১১ দশমিক ০৯ শতাংশ। মারা গেছেন ২১ জন। মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

দুই মাসের করোনা টেস্ট ও সংক্রমণ বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে ১০ হাজার থেকে ১৪ হাজারের মধ্যে ওঠানামা করেছে করোনা নমুনা টেস্ট। তবে কমেছে সংক্রমণ হার। ২২ আগস্ট সংক্রমণ হার ছিল ১৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ২২ সেপ্টেম্বর সংক্রমণ হার নেমে এসেছে ১০ দশমিক ৯৯ শতাংশে। ২৩ আগস্ট শনাক্তের হার ছিল ১৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। ২৩ সেপ্টেম্বর সংক্রমণ হার কমে এসেছে ১১ দশমিক ৭৭ শতাংশে। তবে কমেনি মৃত্যুহার। ২২ আগস্ট মারা গেছেন ৪৬ জন। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুহার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ২৩ আগস্ট মারা গেছেন ৩৪ জন। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুহার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ২২ সেপ্টেম্বর মারা গেছেন ২৮ জন। মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪২ শতাংশ। ২৩ সেপ্টেম্বর মারা গেছেন ৩৭ জন। মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। তথ্যানুযায়ী শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুহার বেড়েছে দেখা যায়। ৮ অক্টোবর ১২ হাজার ৬০৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৪৪১ জনের, সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৬৮৫ জন, মারা গেছেন ২০ জন। সংক্রমণ হার ১১ দশমিক ৪৩ এবং মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৬।

জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য ডা. নজরুল ইসলাম বিডিটাইপকে বলেন, ‘ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে টেস্ট বাড়ানো এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। টেস্ট করে আক্রান্তদের আলাদা করতে হবে। তাহলে একজন থেকে একাধিক ব্যক্তি করোনা সংক্রমিত হতে পারবে না। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি ধীরে ধীরে কমছে টেস্টের সংখ্যা। টেস্ট কম হলে আক্রান্ত, পিক টাইম কিংবা সেকেন্ড ওয়েভ সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া সম্ভব নয়।’

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password