সব হারিয়ে স্কুলকক্ষে কাটছে অতুল হাউইয়ের জীবন

সব হারিয়ে স্কুলকক্ষে কাটছে অতুল হাউইয়ের জীবন
MostPlay

জীবন যতই কষ্টের হোক তা সয়ে নিতে হয়। জীবনের শেষ বেলায় অন্যের সাহায্যের অপেক্ষায় প্রহর গুনতে হচ্ছে অতুল হাউইকে (৬২)। হালুয়াঘাটের সংড়া গ্রামের গারো সম্প্রদায়ের ব্যক্তি অতুল হাউই জীবনের প্রয়োজনে সকল নিষ্ঠুরতাকে মেনে নিয়েছেন। কষ্ট আর অসহায়ত্বকে বেছে নিয়ে জীবন-যাপন করছেন তিনি।

অতুল হাউইকে দেখার মতো নেই কোন আত্মীয়-স্বজন। দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে কিংবা অর্ধাহারে। জীবনের পড়ন্ত বেলায় কোন হিসেবই যেন মেলাতে পারছেন না তিনি। আগের মত আর শক্তি সাহস নেই। শরীরে ভাজ পড়েছে। ঢিলেঢালা চামড়াগুলো নুইয়ে পরেছে। জীর্ণশীর্ণ হয়েছে শরীর। 

অতুল হাউই একজন চিরকুমার। ছোট থেকেই সাদাসিধে এবং সরল প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। উপজেলার হালুয়াঘাটের জুগলী ইউনিয়নের সংড়া গ্রামে তার জন্ম। পিতার ভুবন চাম্বুগং, মায়ের নাম খুবুল হাউই আর ৩ ভাই ১ বোন নিয়ে ছিল তাদের সংসার। অতুল হাউই ছাড়া বাকি ভাইবোন ভারতে চলে যায়। এরপর তাদের কোন আর হদিস মেলেনি। 

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, পাশ্ববর্তী ধোবাউড়া উপজেলার চন্দ্রকোণা গ্রামের বিন্দুনাথ হাউই ছিলেন তার মামা। অতুল হাউই এর দাদা ছিলেন রবি মোড়ল। পাকিস্তান আমলে তিনি গারো সমাজের একজন নেতা এবং বিত্তশালী ব্যক্তি ছিলেন। বছরখানেক আগে তার মামা বিন্দুনাথ হাউই মারা যাওয়ার পর থেকেই অতুল হাউই এর মানবেতর জীবন শুরু হয়। একজন মোড়লের বংশধর হওয়ার পরও অতুল হাউইকে দেখার মতো এখন আর কেউ নেই। তিনি যেন একজন 'পরিত্যক্ত' মানুষ। 

দীর্ঘ ৪ মাস পূর্বে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে প্রতিবেশী লেনুস বেলা জানান, অতুল হাউই ক্ষুধার্ত হয়ে রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখে তাকে পশ্চিম সংড়া জিবিসি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি রুমে থাকতে দেন। লেনুস বেলার স্ত্রী রিতা নাওয়া তার বাড়ি থেকে প্রতিদিন খাবারের ব্যবস্থা করছেন।  

বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে শিক্ষার্থীদের বসার ব্রেঞ্চে থাকেন তিনি। নিন্দ্রা যাপনে নেই কোনো বিছানা নেই বালিশ। অন্ধকার ভর করেই রাত্রিযাপন। ক্রমাগত অসুস্থতা দানা বাঁধছে। কদিন আগে বেঞ্চ থেকে পড়ে গিয়ে হাতের ব্যাথায় কাতরাচ্ছেন। ক্ষতস্থানে দেখা দিচ্ছে দগদগে ঘা।

তার অসহায়ত্বের কথা শুনে দেখতে আসেন মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও হালুয়াঘাট দর্পণের প্রতিষ্ঠাতা মাহমুদ আব্দুল্লাহ। এক প্রতিক্রিয়া তিনি বলেন, আমাদের সমাজ ও সামাজিকতার কাছে অতুল হাউই খুব কি অসহায়? অতুল হাউই এর জন্য আমাদের সমাজ একটু সু-দৃষ্টি দেয়া দরকার। অপরদিকে স্থানীয় ইউপি সদস্য সায়েদুল ইসলাম ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কম্বল ও দেখভাল বিষয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।  

বিষয়টি অবগত হয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম  বলেন, প্রাথমিকভাবে তার সুস্থতার জন্য রোগী কল্যাণ তহবিল থেকে সহযোগিতা করা যাবে। এককালীন আর্থিক সহযোগিতার বিষয়ে উপজেলার নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত আবেদন করব। 

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password