মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কয়েকটি প্রকল্পের কাজ পাঁচ বছর আগে শেষ হয়েছে। সেসব প্রকল্পে ব্যবহার করা ২৬২টি গাড়ির কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। নিয়ম অনুযায়ী, এগুলো পরিবহন পুলে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও এ বিষয়ে কোনো তথ্য না পাওয়ায় হিসাব মহানিয়ন্ত্রক (সিএজি) কার্যালয় অডিট আপত্তি দিয়েছে। এসংক্রান্ত অনিয়ম তদন্তে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পরিবহন পুল ও অডিট অফিসের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। তদন্ত কমিটিকে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এসংক্রান্ত অনিয়ম ত’দন্তে মৎস্য ও প্রা’ণিসম্পদ ম’ন্ত্রণালয়, পরিবহন পুল ও অডিট অফিসের সমন্বয়ে একটি ত’দন্ত কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছে স’রকারি হিসাব সম্পর্কিত সং’সদীয় কমিটি। ত’দন্ত কমিটিকে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রা’ণিসম্পদ অধিদপ্তরের চলমান প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন কাজের ধীরগতি ও অনিয়মের বি’ষয়ে ক্ষো’ভ প্রকাশ করেছে একাধিক সং’সদীয় কমিটি।
প্রকল্পগুলো যথাসময়ে শেষ করার তাগিদ দেওয়ার পাশাপাশি প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম ও দু’র্নীতির ঘটনা ত’দন্ত করে প্রতিবেদন কমিটিতে জমা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মৎস্য ও প্রা’ণিসম্পদ ম’ন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সং’সদীয় স্থায়ী কমিটি, স’রকারি হিসাব সম্পর্কিত সং’সদীয় স্থায়ী কমিটি ও অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সং’সদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রা’ণিসম্পদ অধিদপ্তরের বাস্তবায়িত ও বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনা হয়।
সম্প্রতি জাতীয় সং’সদ ভবনে অনুষ্ঠিত ওই সব কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা যায়, প্রা’ণিসম্পদ অধিদপ্তরের ৩৮টি প্রকল্পের মধ্যে ১৩টি প্রকল্পের বাস্তবায়নকাজের অগ্রগতি ২৫ শতাংশের নিচে। আটটি প্রকল্পের বাস্তবায়নকাজ ৫০ শতাংশের নিচে। ৫১ শতাংশের ও’পরে ১৬টি প্রকল্পের বাস্তবায়নকাজ। মাত্র একটি প্রকল্পের শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নকাজের এই ‘শম্বুক গতিতে’ অসন্তোষ প্রকাশ করেন কমিটির সদস্যরা।
স’রকারি হিসাব সম্পর্কিত সং’সদীয় কমিটির বৈঠকে উত্থাপিত কার্যপত্রে বলা হয়েছে, প্রা’ণিসম্পদ অধিদপ্তরের একাধিক প্রকল্পের কাজ পাঁচ বছর আগে শেষ হলেও প্রকল্পের ২৬২টি গাড়ির হদিস নেই। নিয়মানুযায়ী গাড়িগুলো পরিবহন পুলে জমা হওয়ার কথা থাকলেও সে বি’ষয়ে কোনো তথ্য না পাওয়ায় অডিট আপত্তি দিয়েছে সিএজি কার্যালয়। অডিট আপত্তিতে বলা হয়েছে, প্রা’ণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব নিরীক্ষাকালে গাড়ির ফাইলপত্র পর্যালোচনায় একাধিক প্রকল্পে ২৬৭টি গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছিল বলে জানা গেছে।
কিন্তু প্রকল্প সমাপ্তের পর মাত্র পাঁচটি গাড়ি কেন্দ্রীয় পরিবহন পুলে জমা হয়েছে। বাকি ২৬২টি গাড়ি কোথায় কার মাধ্যমে ব্যবহার হচ্ছে, কে ব্যবহার করছে, তার কোনো হদিস নেই। গাড়ি প্রাপ্তি স্বীকার সংক্রান্ত কোনো চিঠি পাওয়া যায়নি। গাড়িগুলোর প্রসঙ্গে প্রা’ণিসম্পদ অধিদপ্তর জবাবে সিএজি কার্যালয়কে জানিয়েছে, প্রকল্পের সম্প্রসারণকাজে বিভিন্ন জে’লায় গাড়িগুলো নিয়োজিত আছে। গাড়িগুলোকে পরিবহন পুলের তালিকাভুক্ত করতে ম’ন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই জবাব যথাযথ নয় বলে জানিয়েছে সিএজি কার্যালয়।
এ বি’ষয়ে সং’সদীয় কমিটির সভাপতি মো. রুস্তম আলী ফরাজী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সমাপ্ত প্রকল্পের ২৬২টি গাড়ি কেন্দ্রীয় পরিবহন পুলে জমা না হওয়ায় স’রকারের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষ’তি হয়েছে।’ এ বি’ষয়ে ত’দন্তের জন্য কমিটি গঠনের সুপারিশ করার বি’ষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি। অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সং’সদীয় কমিটির বৈঠকে উত্থাপিত কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, ছাগল ও ভেড়ার ভাই’রাসজনিত সংক্রামক রো’গ পেস্ট ডেস পেটিটস রুমিন্যান্টস (পিপিআর) রো’গ নির্মূল ও ক্ষুরারো’গ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি শুরু হয়। ২০২২ সালে এই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা।
এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ২ শতাংশ। ৩৪৫ কোটি দুই লাখ ৯৯ টাকার মধ্যে খরচ হয়েছে ছয় কোটি ৬১ লাখ ৪৭ হাজার। আর সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের জুন মাসে। ২০২৩ সালের জুনে এই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ। এক হাজার ৮৬৮ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ টাকার মধ্যে খরচ হয়েছে ৩৮ কোটি ৬৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি ৪২৮ কোটি ৩৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রা’ণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি) শুরু হয়। এই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর।
কিন্তু গত নভেম্বর পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৬ শতাংশ। আর ব্যয় হয়েছে ১৯৩ কোটি ৭৩ লাখ ৮৩ হাজার টাকা, যা মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের সাড়ে ৪ শতাংশ। প্রকল্পের জন্য একটি ফোর হুইলার, পাঁচটি ডাবল কেবিন পিক-আপ, একটি মাইক্রোবাস ও ৪১৮টি মোটরসাইকেল কেনা হয়েছে। এ বি’ষয়ে অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সং’সদীয় কমিটির সভাপতি আব্দুস শহীদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ম’ন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পের জন্য মোটরসাইকেল কেনার কথা জানানো হয়েছে।
অথচ আমার উপজে’লায় আমি এই প্রকল্পের কোনো মোটরসাইকেল দেখিনি। এগুলো কোথায় তাহলে? প্রকল্প পরিচালক যুগ্ম স’চিব, তিনি স’রকারি গাড়ি পান। তাহলে আবার প্রকল্পের গাড়ি কেন?’ আব্দুস শহীদ আরো বলেন, এলডিডিপি প্রকল্পের আওতায় ক’রোনাভা’ইরাস ম’হামা’রিতে ক্ষ’তিগ্রস্ত খামারিদের প্রণোদনা দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। কমিটির পক্ষ থেকে এসব বি’ষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। জানা গেছে, অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সং’সদীয় কমিটি আগামী এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে।
মৎস্য ও প্রা’ণিসম্পদ ম’ন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সং’সদীয় কমিটি সূত্র জানায়, গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ প্রা’ণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) মহাপরিচালকের বি’রুদ্ধে অনিয়ম ও দু’র্নীতির অ’ভিযোগ করেন কমিটির সদস্যরা। তাঁরা প্রতিষ্ঠানটির গবেষণার অর্থ লোপাট ও এখতিয়ারের বাইরে একাধিক স’রকারি গাড়ি ব্যবহারেরও অ’ভিযোগ সম্পর্কে জানতে চান।
কিন্তু কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ম’ন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা সে বি’ষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে ওই সব অ’ভিযোগগুলো ত’দন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে মৎস্য ও প্রা’ণিসম্পদ ম’ন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সং’সদীয় কমিটির সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু কালের কণ্ঠকে বলেছেন, ‘প্রা’ণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণার অর্থ নয়ছয় ও মহাপরিচালকের বি’রুদ্ধে আনীত অনিয়মের অ’ভিযোগ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। অ’ভিযোগগুলো ত’দন্তসাপেক্ষে আগামী বৈঠকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।’
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন