তিন মাসে প্রেম, সুদ ও কলহের বলি ১০৮ জন

তিন মাসে প্রেম, সুদ ও কলহের বলি ১০৮ জন
MostPlay

করোনাকালে বগুড়ায় গত তিন মাসে ১০৮ জনের অপমৃত্যু হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে পারিবারিক কলহ, সুদ ব্যবসায়ির ফাঁদে পড়ে সর্বশান্ত হওয়া, ঋণ ও আর্থিক অস্বচ্ছলতা, প্রেম ঘটিত দুর্ঘটনায় অপমৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে। আত্মহনকারীরা মানসিক অবস্বাদের কারণে ওড়না বা গলায় রশি দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে, বিষপান, বিষাক্ত গ্যাস ট্যাবলেট সেবন করছে। এক পরিসংখ্যানে বগুড়া জেলার মধ্যে সদর উপজেলা ও আদমদিঘি উপজেলায় বেশি সংখ্যক ঘটনা ঘটেছে।

জানা যায়, পারিবারিক কলহ থেকে নানা ঘটনায় জেলায় আতহত্যার প্রবনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত তিন মাসে জেলায় ১০৮টি আত্মহত্যার ঘটনায় দেখা গেছে, পারিবারিক কলহ, সুদ ব্যবসায়ীর ফাঁদে পড়ে সর্বশান্ত হওয়া, ঋণ ও আর্থিক অস্বচ্ছলতা, প্রেম ঘটিত ঘটনাগুলো প্রকাশ পেয়েছে। আত্মহত্যার ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে পারিবারিক কলহ ও দাদন ব্যবসায়ী বা সুদের কারবারিদের ফাঁদে পড়ে সর্বশান্ত হয়ে। করোনাভাইরাসের মধ্যে আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।

জেলা পুলিশের এক হিসেব বলছে, বগুড়ার আদমদীঘিতে করোনাকালে গত ৩ মাসে ২০ জনের অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে উপজেলার জিনইর গ্রামের এক টিউবওয়েল মিস্ত্রি বিষাক্ত গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করেন। 

করোনাকালে আত্মহত্যা বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে সান্তাহারের অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ একাকী হয়ে পড়েছে। বিশেষত টিনএজের শিক্ষার্থী ও যুবকরা তাদের নিয়মিত জীবন ব্যাবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। মনের ভাব বন্ধু বা কাছের মানুষের সাথে প্রকাশ করতে না পারায় ভেতরের আবেগ তাদের তাড়া করছে। এর পাশাপাশি করোনাকালে অর্থনৈতিক অভাব মনসিকতার উপর প্রভাব রেখেছে বলে তিনি মনে করেন। 

আদমদীঘি থানার ওসি জালাল উদ্দীন বলেন, করোনাকালে পারিবারিক কলহ, নিরক্ষরতা, ঋণ ও আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে এসব আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে তদন্তে দেখা গেছে। তারপরও এসব আত্মহত্যার পিছনে আর কি কি ঘটনা রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। 

আদমদিঘি উপজেলায় পলিথিন, মাছ ও পশুপাখির খাদ্যের দোকানে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে বিষাক্ত গ্যাস ট্যাবলেট বিক্রি না করতে সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় ও অবৈধভাবে মজুদ রেখে বিক্রির দায়ে বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রায় অর্ধলক্ষ টাকা জরিমানাও করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবুও কমছেনা আত্মহত্যা প্রবণতা।

এদিকে বগুড়া জেলা পুলিশের দেওয়া তথ্য মতে, আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে বগুড়ার ১২ টি উপজেলায় মোট ১০৮ জনের অপমৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৩ জনের অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে সদর উপজেলায়। অন্যান্য উপজেলার মধ্যে আদমদীঘীতে ২০, শিবগঞ্জে ১৩, ধুনটে ১০, গাবতলীতে ৯, শাহাজাহানপুরে ৭, সোনাতলায় ৬, কাহালুতে ৬, নন্দীগ্রামে ৫, শেরপুরে ৪, দুপচাঁচিয়াতে ৩ ও সারিয়াকান্দি উপজেলায় ২ (সর্বনিম্ন) জনের অপমৃত্যু ঘটে। পারিবারিক কলহ, প্রেম ঘটিত ছাড়াও সড়ক দুর্ঘটনাকে অপমৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে পুলিশ। 

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্ত্তী জানান, জেলায় যে’কটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে এর মধ্যে পারিবারিক কলহ, সুদের টাকা ও প্রেমজনিত ঘটনা বেশি। সামাজিকভাবে সচেতনতা বাড়াতে হবে। সচেতনতা বাড়ালে এই আত্মহনন প্রবনতা কমে যাবে। 

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password