রোনার প্রকোপে যখন গোটা বিশ্ব তটস্থ, তখনও নানা জল্পনা উত্তর কোরিয়ার (North Korea) দাপুটে শাসক কিম জং উন -কে নিয়ে। প্রায় দু'মাস অজ্ঞাতবাসে কাটানোর পর গত ১ মে জনসমক্ষে আসেন কোরিয়ার কিম। তারপর থেকেই কখনও স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত তো কখনও দোর্দণ্ডপ্রতাপ শাসকের ব্যক্তিগত তথ্য- নেটপাড়ায় দাপট দেখিয়েছেন কিম জং উন (Kim Jong Un)। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রনেতার খাবারের পছন্দ থেকে বাসকেটবল-প্রেম, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই দেখা যাচ্ছে কোরিয়ার কিমের বিবিধ খবর। এমন সময়ই জানা গেছে, কিম জং উনের সিনেমা-প্রেম। বিশেষত, জেমস বন্ড (James Bond)-এর ভক্ত ৩৬ বছরের কিম। যা তিনি বাবা কিম জং ইল এর থেকেই পেয়েছিলেন বলে মত পররাষ্ট্র বিজ্ঞানীদের।
ব্রিটেনের এক্সপ্রেস ম্যাগাজিনে এই নিয়ে একটি প্রতিবেদন লিখেছিলেন সাংবাদিক হোসে সন্ডার্স। প্রতিবেদনে তিনি জানিয়েছেন, জেমস বন্ড-প্রীতি ছিল কিম জং উনের বাবা কিম জং ইল-এর। তবে শুধু প্রেম নয়, বন্ড-এর ছবিকে হাতিয়ার করে দেশে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন কিম জং-ইল।
১৯৪৮ সালে উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কিম জং উনের ঠাকুরদা কিম ইল-সাং (Kim II-Sung)। তাঁর পর দেশের শাসনভার গ্রহণ করেন ছেলে কিম জং-ইল। সিনেমার প্রতি যার ভালোবাসা কোরিয়ার উপদ্বীপে অজানা ছিল না। হলিউডের সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশে প্রভাব বিস্তারে জাতীয়তাবাদী চলচ্চিত্র নির্মাণে জোর দিয়েছিলেন তিনি।
হলিউডের সিনেমার আদলেই 'সি অফ ব্লাড' বা 'দ্য ফ্লাওয়ার গার্ল' এর মতো সিনেমা বানিয়েছিল কিম জং-ইল-এর প্রশাসন। এমনকী তাঁর সিনেমায় বিশ্বের নজর কাড়তে দক্ষিণ কোরিয়ার সেরা পরিচালক শিন সং ওক এবং তাঁর স্ত্রী তথা অভিনেত্রী চই ইউন-হি'কে অপহরণও করেছিলেন কিম জং-ইল। শোনা যায়, বন্দুক ঠেকিয়ে শিন সং ওক’কে দিয়ে একের পর এক ছবি পরিচালনা করিয়েছিলেন তিনি। তাঁর সময় থেকেই উত্তর কোরিয়ায় রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হয়। যা আজও তৈরি করেন কিম জং উন (Kim Jong Un)।
২০১৯ সালে ক্রিস মাইকুলের বই 'মাই ফেভারিট ডিক্টেটর (My Favourite Dictators)'-এ কোরিয়ার কিমদের সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, 'ছেলের নির্মীত সিনেমাগুলি খুবই পছন্দ করেছিলেন কিম ইল-সাং। প্রত্যেক সিনেমাতেই তাঁকে নায়ক হিসেবে দেখিয়েছিলেন কিম জং-ইল।' এভাবেই ভাইদের হারিয়ে নিজের আধিপত্য ধরে রেখেছিলেন তিনি। উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে দক্ষিণে আশ্রয় নেওয়া অনেকেই সাক্ষাৎকারে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলিকে জানিয়েছে, কিম জং উনও একই রাস্তাতেই হেঁটেছেন। জাতীয়তাবাদী সিনেমার মাধ্যমে প্রভাব ও প্রচারে জোর দেন তিনি। প্রতি সিনেমাতেই 'দেশের কঠিন সময়ে নিজেকে নায়ক হিসেবে' তুলে ধরেন কোরিয়ার কিম।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন