কারা সেই রহস্যজনক দুই খুনি

কারা সেই রহস্যজনক দুই খুনি
MostPlay

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকান্ডের তদন্তে উঠে আসা সেই দুই ব্যক্তি কারা? আট বছর পেরিয়ে গেলেও সেই দুই ব্যক্তির (পুরুষ) পরিচয় খুঁজে না পাওয়ায় এখনো নানা প্রশ্ন নিহতদের স্বজনদের মধ্যে। চাঞ্চল্যকর এ হত্যার রহস্য উন্মোচনে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বেঁধে দেওয়া ৪৮ ঘণ্টা আদৌ শেষ হবে কি না, এমন ভাবনা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি ল্যাবে পাঠানো বিভিন্ন আলামতের মধ্যে মেহেরুন রুনির ওড়নায় দুটি পুরুষ ডিএনএর অস্তিত্ব ধরা পড়ে বলে জানিয়েছে তদন্ত সংস্থা র্যাব। ওই ওড়না দিয়েই সাগর সরোয়ারের হাত বাঁধা ছিল। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়াবাড়িতে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায়। সাগর তখন মাছরাঙা টিভিতে আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন। হত্যার সময় বাসায় ছিল তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরোয়ার মেঘ। এ হত্যাকান্ডে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

ওই সময় ঘটনাস্থলে এসে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যার রহস্য উদঘাটন করা হবে। সেই ৪৮ ঘণ্টা এখন আট বছরে গিয়ে ঠেকেছে। ৭১ দফা পেছানোর পর ৭২তম তারিখে মামলার তদন্ত সংস্থা র্যাবের পক্ষ থেকে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চে একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।

তবে এ হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। ডিএনএ নমুনার মাধ্যমে তদন্ত যেভাবে এগিয়ে চলেছে, গতকালের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদনে র্যাব তা তুলে ধরেছে। আদালতের নির্দেশে ২০১২ সালের ২৬ এপ্রিল হত্যার ৭৫ দিন পর কবর থেকে লাশ তুলে ভিসেরা পরীক্ষা করা হয়। ভিসেরা রিপোর্টের মাধ্যমে র্যাব শনাক্ত করতে চেয়েছিল, সাগর-রুনিকে হত্যার আগে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল কি না। তবে লাশ পচন ধরায় সে প্রতিবেদনে এমন আলামত পাওয়া যায়নি।

থানা পুলিশ ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা সংস্থার (ডিবি) তদন্তের ব্যর্থতার পর আদালতের নির্দেশে ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্ত করছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। সাগর সরোয়ারের মা সালেহা মনির আবারও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার জীবদ্দশায় কি খুনিকে দেখে যেতে পারব? তাহলে কিছুটা হলেও শান্তি পেতাম।

খুনি পরিচিত কেউ, তা তো অনেক দিন ধরেই শুনছি। তবে কে সে? আগে থেকেই তো পত্রিকায় দেখছি খুনি দুজন পুরুষ। তবে তাদের বের করতে আর কত অপেক্ষা করতে হবে? বলা হয়েছিল, সগিরা মোর্শেদকে ছিনতাইকারীরা খুন করেছে। ৩০ বছর পর অন্য কাহিনি বের হলো। তদন্তকারীরা চাইলে নিশ্চয়ই সবকিছু বের করে আনতে পারেন।’ ২০১৫ সালের জুনে আদালতে দেওয়া অগ্রগতি প্রতিবেদনে র্যাব জানিয়েছিল, ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা আলামত যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাবে পাঠিয়ে ফরেনসিক ও রাসায়নিক পরীক্ষায় দুজন অজ্ঞাত পুরুষের পূর্ণাঙ্গ ডিএনএ বৃত্তান্ত পাওয়া গেছে।

তবে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রায় পাঁচ বছর আগে যে অজ্ঞাত দুজনের ডিএনএ শনাক্ত হয়েছিল, বর্তমানে তাদের চেহারাও শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট ল্যাবের কাছে র্যাবের পক্ষ থেকে ডিএনএ প্রোফাইলের সূত্র ধরে তাদের চেহারা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সাগর-রুনির ঘটনায় অজ্ঞাত দুজনের ডিএনএ আলামত অনেক আগেই মিলেছিল। আগে মৌখিকভাবে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে আদালতকে জানানো হয়েছিল।

এবার তা হলফনামা আকারে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এর বাইরে কিছু নয়। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ এমপি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কোনো অপরাধের তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হলে ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়ার বিধান রয়েছে। আর ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়ার পর কখনো যদি তদন্তে রহস্যের জট খুলে যায়, সেখানে পুনরায় চার্জশিট দেওয়ার বিধান আছে। এ রকম বহু উদাহরণ আমাদের দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই আছে। সাগর-রুনির মামলার ক্ষেত্রেও তা-ই করা উচিত ছিল।’ অনেকটা একই মন্তব্য করেন পুলিশের আরেক সাবেক মহাপরিদর্শক নূরুল হুদা।

তিনি বলেন, এ মামলার তদন্ত নিয়ে আসলে এত দিন লাগার কথা ছিল না। দেশে কি বড় বড় ঘটনার রহস্য উদঘাটন হয়নি? তদন্তকারী কর্মকর্তা এর কোনো কূলকিনারা করতে না পারলে ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে দিক। ফাইনাল রিপোর্ট দিলে যে পরবর্তী সময়ে আর চার্জশিট দেওয়া যাবে না তা কিন্তু নয়। আবার চার্জশিট দেওয়ার পরও চার্জশিট দেওয়া যায়।


যেসব আলামত যুক্তরাষ্ট্রে : আলোচিত এ হত্যারহস্য উদঘাটনের জন্য র্যাব ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া বিভিন্ন ধরনের আলামতের ডিএনএ পরীক্ষা করতে যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাবে পাঠায়। আলামত হিসেবে সাগর-রুনির পরনের কাপড়, সাগরের হাত-পা বাঁধার দুটি ওড়না (লাল ও টিয়া রঙের), গ্রিলের অংশবিশেষ, ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া চুল, গ্রিলের পাশে পাওয়া মোজা, দরজার লক, দরজার চেইন ও ছিটকানি পাঠানো হয়।

টিয়া রঙের ওড়না ও টিশার্টে পাওয়া গেছে দুই পুরুষের ডিএনএ। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, নতুন একটি প্রযুক্তি দিয়ে ডিএনএ নমুনার সূত্র ধরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির চেহারা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। সাগর-রুনির ডিএনএ আলামত যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাবে রয়েছে। তাদের তাই বলা হয়েছে ওই নমুনার সূত্র ধরে জড়িতদের চেহারা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় কি না তা জানাতে। তবে এখনো এ ব্যাপারে ল্যাব কর্তৃপক্ষের উত্তর মেলেনি।

খুনি নিহত দম্পতির পূর্বপরিচিত দাবি করে সূত্র আরও বলছে, ঘরের মধ্যে যে বা যারা ছিল তারাই সাগরকে মেরেছে। হত্যাকান্ডে ব্যবহার করা হয়েছে ওই ঘরেরই রান্নার কাজে ব্যবহৃত ছুরি, বঁটি। সাগরকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করা হয়। এটি কোনো পেশাদার খুনির কান্ড নয় তা স্পষ্ট। তবে এ ব্যাপারে অনেকটা নিশ্চিত যে সাগরের ওপর খুনির পূর্ব আক্রোশ ছিল। অন্যদিকে রুনির পেটের ডান পাশে একটিমাত্র স্টেপ ছিল। রুনির পরনে টিশার্ট থাকলেও টিশার্টে কোনো ছিদ্র না থাকায় বড় রহস্যের জন্ম দিয়েছে।

বিডিটাইপ সংবাদের লেখক হতে পারেন আপনিও। আপনার আশপাশে ঘটে যাওয়া যেকোনো ঘটনা, ভ্রমণ অভিজ্ঞতা, ক্যাম্পাসের খবর, তথ্যপ্রযুক্তি, বিনোদন, শিল্প-সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয়ে লেখা পাঠান: [email protected] ই-মেইলে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password